সরকারি ঘরের আশায় দিনাজপুরের হিলির রেল লাইনের বস্তিতে প্রায় ২৫ টি পরিবার পথ চেয়ে আছে। চেয়ারম্যান, মেম্বার সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও কোন ঘর পাইনি পরিবারগুলো। এছাড়াও সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে, বলে অভিযোগ বস্তিবাসীর। হিলির স্টেশন ডাঙ্গাপাড়ার রেল লাইনের দুই পাশের বস্তি ঘুরে দেখা যায়, টিন আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ঘেরা ছোট ছোট ঘর। প্রায় ২০ থেকে ৩০ বছর যাবৎ এই ভুমিহীন পরিবারগুলো বসবাস করে আসছে। এদের মধ্যে প্রায় নারীরা বিধবা এবং স্বামী পরিত্যক্তা। আবার অনেকে নিজেস্ব ঘর-বাড়ি না থাকায় এই স্থানে মাথা গোজার ঠাঁই হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বস্তিবাসীর নারীরা চেনাচুর ও বিড়ি কারখানায় কাজ করে ছেলে-মেয়েদের লিখাপড়া করাচ্ছেন। আবার দিনমজুরি কাজ করে সংসার চলায় অনেকেই। রেল লাইনের পাশে বসবাস করছে হরিজন গোষ্ঠীর ৮টি পরিবার। দেখা যায় জীবিকার তাগিদে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নারীরা চেনাচুর কারখানায় কাজ করে। কেউ আবার বস্তিঘরে বসে বিড়ি তৈরি করার কাজও করছেন। বস্তিতে বসবাসকারী ছাত্র-ছাত্রীরা ট্রেনের শব্দে অনেক কষ্টে লিখাপড়া করে। আবার ঝড়-বৃষ্টি, তীব্র শীত আর গরমে বসবাস করছেন তারা। বাপ-দাদা কিংবা স্বামীর ভিটেবাড়ি থাকতো তাহলে তারা ঐস্থানেই বসবাস করতো না। স্থানীয় ভাবে ভোটার হওয়ার পরও তারা পায় না সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা। ৪০ বছর বয়সী ফজিলা বেগম বলেন, আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। স্বামী মারা গেছে ৬ বছর আগে। অনেক কষ্টে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি, এক ছেলে ছোট লিখাপড়া করে, আর এক ছেলে বোবা প্রতিবন্ধী। তার প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডও হয়নি। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে বিড়ি তৈরি করে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোন মতে চলছি। বিধবা ভাতার কার্ডও পাইনি, সরকার যদি আমাকে একটা ঘর দিতো তাহলে সন্তানদের নিয়ে নিরাপদে থাকতে পারতাম। মেনেকা বেগম বলেন, স্বামী মারা গেছে অনেক আগে, তিন মেয়ে এক ছেলে। অনেক কষ্ট করে বাচ্চাদের বড় করছি। স্বামীর ভিটেবাড়ি নেই, তাই নিরুপায় হয়ে রেলের জায়গায় বসবাস করছি। এখানে ট্রেনের শব্দে আর শীত, ঝড় বৃষ্টি গরমে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হয়। সরকারি ঘর পেলে অনেক উপকৃত হতাম। ৬৫ বছর বয়সী কালাম মিয়া বলেন, প্রায় ৩২ বছর ধরে এই রেল লাইনের ধারে ছেলে-বৌ, নাতি আর স্ত্রীকে নিয়ে আছি। সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি, যদি ঘর পাই তাহলে শেষ বয়সে ভালই থাকতে পারবো। বস্তিবাসী আরজু, শিল্পী, অঞ্জলি, মমেনা ও হরিজন গোষ্ঠীরা বলেন, বিপদে পড়ে এখানে বসবাস করছি। আমরা রেল লাইনে আছি বলে কেউ আমাদের খোঁজ-খবর রাখে না। সরকার যদি আমাদের জন্য একটা গুচ্ছগ্রাম তৈরি করে দিতো, তাহলে ছেলে-মেয়ে ও পরিজনদের নিয়ে ভাল থাকতে পারতাম। হাকিমপুর উপজেলার ১নং খট্রা-মাধবপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, রেল লাইন বস্তিবাসীদের বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের জন্য কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভাতা ভোগীরা সুবিধা পাবেন। আর এসব রেল বস্তিবাসীর জন্য ইউনিয়নে সরকারি জমি দেখা হচ্ছে, পেলে সেখানে তাদের জন্য একটি গুচ্ছগ্রাম তৈরি করে দেওয়া হবে। হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর-এ আলম বলেন, হিলির ডাঙ্গাপাড়া রেলস্টেশনে দীর্ঘদিন যাবৎ কিছু পরিবার বসবাস করছে। উপজেলায় ‘ক’ তালিকায় ২৫৬ টি সরকারি ঘর তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকায় যদি তাদের নাম থাকে তাহলে তাদের ঘর দেওয়া হবে। আর যদি না থাকে তাহলে আগামীতে তাদের জন্য ঘর বরাদ্দর ব্যবস্থা করা হবে।
এবিষয়ে হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া রেলস্টেশনের পাশের রেলবস্তি আমরা দেখেছি অনেক গুলো ভুমিহীন অসহায় পরিবারগুলো বসবাস করে আসছে। ইতিমধ্যে তাদের নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা সেখানে গিয়ে বিষয়টি দেখবো এবং তাদের জন্য সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করবো। দেশের সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কেউ গৃহহীন থাকবপ না, সব ভুমিহীনদের ঘর দেওয়া হবে। সেই আলোকে ঐরেল বস্তিবাসীদের জন্য সরকারি ঘর দেওয়া হবে।