সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা.মুরাদ হাসান এখন দেশজুড়ে তুমুল বিতর্কিত একটি নাম। একের পর এক তার বিকৃত অশালীন বক্তব্য, প্রতিহিংসামূলক আক্রমনাত্মক অঙ্গভঙ্গি সব মিলিয়ে ভাইরাল হয়ে আসছেন তিনি। সর্বশেষ ঐতিহ্যবাহী একটি সামাজিক ক্লাবে ঘটিয়েছেন অশোভন কা-। ক্লাব কর্তারা সদস্যদের তুমুল আপত্তির মুখে তাকে বের করে দেন। এখন তার দুটি টেলিফোন অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়ে ভাইরাল যেখানে কান রাখা যায় না। এমন অশালীন কথাবার্তা ও আচরণের পরেও তিনি কীভাবে মন্ত্রীসভায় আছেন এটাই পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন? বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া ও জাইমা রহমানকে নিয়ে নোংরা বক্তব্যের জন্য তাকে জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে বলেছেন। তবে জানা যায় সরকার দলের নেতারাও ডা.মুরাদ হাসানের কা-কীর্তি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।
মুরাদকে বহিষ্কারের দাবি জানালেন ডা. জাফরুল্লাহ: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের সাম্প্রতিক আলোচিত বক্তব্যকে কুরুচিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গতকাল সোমবার (৬ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের কাউন্সিল উপলক্ষে জাতি গঠনে যুব সমাজের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, একজন মন্ত্রীর এতটা নোংরা ভাষায় কথা বলা সামগ্রিক রাজনীতির জন্য লজ্জাজনক। কেউ যদি তাঁর স্ত্রী, বোন বা সন্তানকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেন তাহলে তাঁর কেমন লাগবে। তিনি বলেন, ডা. মুরাদের মাথায় ক্যানসার ঢুকে পড়েছে। তার জায়গা হওয়া উচিত পাবনার পাগলা গারদে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অবিলম্বে যদি ডা. মুরাদকে বরখাস্ত করা না হয় তাহলে সবাই বুঝবে আওয়ামী লীগ এই সব নোংরা মানসিকতার লোকদেরকেই মন্ত্রী বানায়।
যুব অধিকার পরিষদের নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়ক মুহাম্মদ আতাউল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান ও ফারুক হাসান, প্রবাসী অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার পোদ্দার, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা প্রমুখ।
মুরাদের ফোনালাপে অশ্লীলতা থাকলে ব্যবস্থা নিবে বিটিআরসি: চলচ্চিত্রের এক নায়িকার সঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের ফোনালাপে অশ্লীল কিছু থাকলে তা সরানোর ব্যবস্থা নিবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। গতকাল সোমবার (৬ ডিসেম্বর) বিটিআরসির আইনজীবী রেজা ই রাকিব গণমাধ্যমকে এ কথা জানান। এদিকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ তুলে তাকে অভিসংশন করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। মুরাদ হাসানের ফাঁস হওয়া দুটি টেলিফোন অডিও রেকর্ডে অশালীন কথাবার্তা ও আচরণ নিয়ে তুমুল সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। প্রশ্ন ওঠেছে, আপত্তিকর ও অসংলগ্ন বক্তব্যের পরও তিনি কি করে মন্ত্রিসভায় আছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়া ও জাইমা রহমানকে নিয়ে নোংরা বক্তব্যের জন্য তাকে জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়ে তার পদত্যাগেরও দাবি ওঠেছে। সরকারী দলের নেতারাও ডা.মুরাদ হাসানের কা-কীর্তি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গতকাল সোমবার মহানগর আওয়ামী লীগ এবং ঢাকার দুই মেয়র ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর কর্মকা-ে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে ব্যক্তিগত উল্লেখ করে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলেন মির্জা ফখরুল: জিয়ার পরিবার নিয়ে দেওয়া তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে তার পদত্যাগের দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার (৬ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সরকারের তথ্য-প্রতিমন্ত্রীর একটি বিকৃত এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত নারী ও বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। অবিলম্বে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহনকারী একজন ব্যক্তির এ ধরনের ঘৃণ্য ও কুরুচিপূর্ণ আচরণের প্রতিকার দাবি করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ব্যক্তি হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী যে দুর্বলতার মানুষই হোক না কেন একজন জাতীয় পতাকাধারী ব্যক্তির এ ধরনের মনোবৈকল্য উৎসারিত বিকৃতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত করেছে। দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের শিকার হয়ে এই মুহূর্ত পর্যন্ত বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ না পেয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন। ঠিক তখনই তার পরিবারের একজন নারী সদস্য তথা পরিবারের বিভিন্ন জন সম্পর্কে এমন অশ্লীল ঘৃণ্য অপপ্রচার ইতিমধ্যেই নারী নেতৃত্বসহ দেশের সচেতন সব মহলের ঘৃণা কুড়িয়েছে। অবিলম্বে তথ্য-প্রতিমন্ত্রীকে হীন রাজনৈতিক দূরভিসন্ধিমূলক এই নারী ও বর্ণবিদ্বেষী বিকৃত মন্তব্য প্রত্যাহার করে জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। অন্যথায় ভবিষ্যতে যথাসময়ে এর দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি মহাসচিব। ডা. মুরাদের অপসারণ চায় সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম: নারী বিদ্বেষী, বর্ণবাদী, বিকৃত ও যৌন হয়রানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম। গতকাল সোমবার (৬ ডিসম্বের) গণমাধ্যমে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি জানান সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রওশন আরা রুশা ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু। বিবৃতিতে বলা হয়, তথ্য প্রতমিন্ত্রী ডা. মুরাদ অনলাইন আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালদো জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান ও তার নাতনি জায়মা রহমান সম্পর্কে অত্যন্ত অশালীন অশ্রাব্য ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন যা নারী বিদ্বেষী, বর্ণবাদী, বিকৃতরুচি সম্পন্ন ও যৌন হয়রানিমূলক। এসব মন্তব্য থেকে বোঝা যায় ভীষণ বিকৃত মানসিকতার অধিকারী এই সংসদ সদস্য। নেতৃদ্বয় বলেন, নারী বিদ্বেষী বক্তব্যের জন্য ইতোপূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে জেলে যেতে হলেও ডা. মুরাদকে এখনো কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না? এতে করে জনমনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, তাহলে কী ডাক্তার মুরাদ রাষ্ট্র ও সরকারের প্রশ্রয়েই এ ধরনের মন্তব্য, বক্তব্য, বিবৃতি দিয়ে চলেছেন? জনগণের এসব প্রশ্ন নিরসনে তারা অবলিম্বে ডা. মুরাদের মন্ত্রীত্ব ও সংসদ সদস্য পদসহ সব ধরনের সাংবিধানিক পদ থেকে অপসারণ দাবি করেন। এমন একটি দায়িত্বশীল পদে অবস্থান করে নারী বিদ্বেষী মন্তব্য করার জন্য শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একজন নেতার কন্যাকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করাসহ সাম্প্রতিক নানা সমালোচিত মন্তব্যের কারণে বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোঃ মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেবার দাবি জানিয়েছেন নারী অধিকারকর্মীরা।
প্রতিমন্ত্রী মুরাদের তীব্র সমালোচনায় মুখর ফারকী: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের আপত্তিকর নানা বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা চলছে বহুদিন ধরেই। সম্প্রতি নারীর প্রতি ‘অবমাননাকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠার মুরাদ হাসানের একটি অশ্লীল ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে।এতে নতুন করে তোপের মুখে পড়েছেন তিনি। সচেতন আরও অনেকের মতো তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের সমালোচনা মুখর হয়েছেন জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্টে সোমবার বিকেলে পোস্ট করা এক স্ট্যাটাসে প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার মন্ত্রিত্ব থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রাঙ্গনেও সুপরিচিত এই নির্মাতা।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো- ‘আগের দিন দেখলাম প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাতনীকে নিয়ে অশ্লীলতম ভাষায় প্রজাতন্ত্রের একজন চাকর কথা বললেন। তার পরদিন সেই একই লোক এক অনুষ্ঠানে গিয়ে পুলিশ ভাইদের নসিহত করলেন যাতে তারা কারো সাথে ব্যবহার খারাপ না করেন। তার পরদিন শুনলাম উনি রেপ করার থ্রেট দিচ্ছেন কাউকে। এখন আপনারাই বলেন, এমন দেশটি কোথায় খুঁজে পাবেন? এইসব দেখিয়া শুনিয়া একজন নাগরিক হিসাবে আমি যার পর নাই ক্ষুব্ধ। আমি বিশ্বাস করতে চাই মন্ত্রীসভার অন্য সদস্যরাও এই লোকের সাথে এক টেবিলে বসতে লজ্জাই বোধ করবেন। এই ছোট্ট জীবনে আমার সুযোগ হইছে দুয়েকজন মন্ত্রী দেখার। তাদের কারো কারো প্রশংসা করে আমি লিখছিলামও। আমি বিশ্বাস করি তারা কেউই চাইবেন না এই লোক তাদের বিজ্ঞাপন হয়ে উঠুক।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান নারী বিদ্বেষমূলক যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার ‘ব্যক্তিগত’ বলে মত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরশনের মেয়র এবং দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী ‘নারী বিদ্বেষমূলক’ যে বক্তব্য দিয়েছে এতে দল বা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা তার ব্যক্তিগত মন্তব্য হতে পারে। আমাদের দল বা সরকারের কোনো বক্তব্য বা মন্তব্য না। এ ধরনের বক্তব্য কেন সে দিল, অবশ্যই আমি বিষয়টা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রী ক্ষমা না চাইলে আইনগত ব্যবস্থা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের ‘অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার (৬ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির বিএনপি সমর্থিত নেতারা এ দাবি জানিয়েছেন। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সম্পাদক ব্যরিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দৌহিত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান যে অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ ও নারী বিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন তার প্রতি আমাদের দৃষ্টি গোচর হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, একটি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হলেও ব্যারিস্টার জাইমা রহমান নিজে কোনও রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তিনি দেশের একজন অত্যন্ত মেধাবী তরুণী। ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার হিসেবে স্বীকৃতি তার মেধার পরিচয় বহন করে। তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে আইন পেশায় কর্মরত রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি দেশেও আইন পেশায় নিয়োজিত হবেন। সেই হিসেবে তিনি আমাদের আইনজীবী পরিবারের একজন সদস্য। আমাদের এই মহান পেশার অন্যতম বৈশিষ্ট্য, অগ্রজরা সবসময় অনুজদের জন্য অনুকরণীয়। আমাদের দায়িত্ব অনুজদের জন্য নিরাপদ পেশা পরিচালনার পরিবেশ সৃষ্টি করা। কিন্তু সরকারের একজন ‘কথিত দায়িত্বশীল’ প্রতিমন্ত্রী আমাদের এই তরুণ ব্যারিস্টার সম্পর্কে যে লাগামহীন মন্তব্য করেছেন তা শুধুমাত্র নিন্দনীয়ই নয়, পরিত্যাজ্য। তার এই মন্তব্য দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য, বিশেষ করে নারীর প্রতি বিদ্বেষক ও চরম অবমাননাকর।’ ব্যারিস্টার কাজল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, ডা. মুরাদ হাসান বিভিন্ন ব্যক্তি, বিশেষ করে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সম্পর্কে লাগামহীনভাবে অশ্লীল ও কুরুচীপূর্ণ মন্তব্য করেই চলেছেন। এমনকি তিনি দাবি করেন যে, তিনি যা বলেন তা তিনি সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েই করেন।’
‘আমাদের সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদ মোতাবেক তৃতীয় তফসিলে বর্ণিত ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করবো’ মর্মে মন্ত্রী হিসেবে তিনি যে সাংবিধানিক শপথ গ্রহণ করেছেন তিনি ক্রমাগতভাবে তার নানাবিধ মন্তব্য/কর্মকা-ের মাধ্যমে তা ভঙ্গ করে চলেছেন। জাতি হিসেবে এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। প্রতিমন্ত্রীর মতো একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে তার এসব অযাচিত মন্তব্য জাতি হিসেবে আমাদেরকে কলঙ্কিত করছে’, বলেন সমিতির সম্পাদক। ‘আমরা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান যে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে জাতির সামনে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায়, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। সমিতির সিনিয়র সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান, সদস্য ব্যারিস্টার এসএম ইফতেখার উদ্দীন মাহমুদ, পারভীন কাওসার মুন্নি এবং ব্যারিস্টার রেদওয়ান আহমেদ রাজীব এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিবিসিকে মুরাদ হাসান যা বলেছেন: এর আগেও নানা রকম বক্তব্যের জন্য আলোচনা উঠে এসেছেন জামালপুর-৪ আসনের এমপি মি. হাসান। বিবিসিকে তিনি বলেন, তিনি বক্তব্য দেয়ার আগে তাকে ‘নোংরা ভাষায়’ আক্রমণ করে কথা বলেছেন শীর্ষস্থানীয় ওই বিএনপি নেতার কন্যা। আমার মেয়ের বয়সের চেয়ে সে এক বছরের বড়। আমার কন্যার মতো বয়সী হয়ে যে নোংরা ভাষায় আমাকে নিয়ে ট্রল করেছে, সেটা তো কুচিন্তনীয়। এটা আমার কাছে খুব দুঃখজনক মনে হয়েছে। তার সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যমের অনেক ছবি আমার কাছে চলে এসেছে। আর টকশোতে হাজির হয়ে বিএনপি নেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে আক্রমণ করে মন্তব্য করা প্রসঙ্গে মি. হাসান বলেন, ‘আপনি যদি ওই টকশোটা দেখেন, তাহলেই বুঝতে পারবেন আমি কেন বলেছি। আমি একজন চিকিৎসক। সেই হিসাবে তার সম্পর্কে আমার যে অবজারভেশন, সেটা আমি বলেছি। সেটা ভুল হলে আমি দুঃখিত। তবে সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার বক্তব্য, মুরাদ হাসান যদি সত্যিকার অর্থে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হতেন, তাহলে তিনি দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এ ধরনের মন্তব্য তিনি করতে পারতেন না। পেশায় চিকিৎসক মুরাদ হাসান আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে প্রথমে মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য থেকে তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। যেসব বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, সেগুলোকে ভুল বলে স্বীকার করেন কি না কিংবা প্রত্যাহার করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। মি. হাসান বিবিসিকে আরো বলেন, তার বক্তব্য নিয়ে নানারকম সমালোচনা হলেও তার ওপর দল বা সরকারের তরফ থেকে বক্তব্য প্রত্যাহারের কোন চাপ নেই।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা: বেসরকারি সংগঠন নারীপক্ষ এবং ৪০ নারী অধিকার কর্মী আলাদা বিবৃতিতে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে। নারীপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান সরকার দাবি করেন যে তারা নারীবান্ধব। নারীর প্রতি ন্যূনতম সম্মান রেখে কথা বলতে পারেন না সেই ব্যক্তি তারপরও কি করে পদে বহাল থাকেন? এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নারীপক্ষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি সমাবেশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এর আগে এরকম একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে একজন আলোচককে উদ্দেশ্য করে কটু মন্তব্য করে কারাগারে যেতে হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে। তবে প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হোসেনের এসব বক্তব্যের বিষয়ে দল বা সরকারি তরফ থেকে প্রকাশ্যে এখনো কোন প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়নি।
‘জনগোষ্ঠীর কাছে তাদের দায়বদ্ধতা না থাকাই প্রধান কারণ: বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরোধী দল বা নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে কটু মন্তব্য নতুন বা অভিনব কিছু নয়। বিশেষ করে প্রধান দলগুলোর নেতাকর্মীদের একে অপরকে উদ্দেশ্য করে কাঁদা ছোড়াছুড়ি অনেকটাই নিয়মিত ব্যাপার। কিন্তু সাংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ পদধারী ব্যক্তিদের এরকম বিষয়ে জড়িয়ে পড়াটা রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য কতটা ভালো?
জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘বাংলাদেশের সমাজটাই আসলে নারীবিদ্বেষী এবং বর্ণবাদী। আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতারা এর ঊর্ধ্বে নন। সে কারণে তাদের মধ্যে প্রায়ই আমরা কট্টর নারীবিদ্বেষী মন্তব্য শুনি। আমাদের অনেকের মধ্যে বর্ণবাদী মনোভাবও রয়েছে। কিন্তু এখানে সরকারের একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী, যিনি সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করছেন, যিনি সংবিধান মেনে শপথ নিয়েছে, সেখানে এই ধরনের কথা বলা সংবিধানের বরখেলাপ। এই ধরনের কথা বলার সাহস তখনি তারা পান, যখন এসব কথা বলার জন্য তারা তিরস্কৃত হন না, বরং পুরস্কৃত হন।’ মি. আহমেদ বলছেন।