তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার খবরে তার নির্বাচনী এলাকা জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আনন্দ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
গত সোমবার রাতেই তারাকান্দি শহীদ মিনার চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা আনন্দ মিছিল বের করেন। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে স্বাগত ও কৃতজ্ঞতা জানান। তবে ঘোষণা এলাকায় প্রচারের পর প্রতিমন্ত্রীর কর্মী-সমর্থকদের এলাকায় দেখা যায়নি। উপজেলার কয়েকটি স্থানে অজ্ঞাত লোকজন পটকা ফুটিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একে অন্যকে মিষ্টি খাইয়ে দিতেও দেখা গেছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মোড়ে মোড়ে দোকানপাটে লোকজন ভিড় করছে টিভির সংবাদ দেখতে। বিএনপির নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীমের বাড়িতে ভিড় জমান। এ খবরের প্রতিক্রিয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মুঠোফোনে জানান, প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আগামীকাল আমরা একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করেছি।
ফেসবুক প্রতিক্রিয়ায় পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বিদ্যুৎ লিখেন, ‘অবশেষে উইকেট পরে গেল।’ এ বিষয়ে উপজেলা আ’লীগ সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা বলেন, এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে একজন তথ্য প্রতিমন্ত্রী যেভাবে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেছেন, তা সত্যিই লজ্জাজনক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে আমরা উপজেলা আ’লীগ স্বাগত জানাই। আনন্দ মিছিলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, মানুষের দীর্ঘদিনের এটি একটি অভিব্যক্তি।
ঢাবিতে মুরাদের কুশপুত্তলিকা দাহ: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের মেয়েদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা মিরর(bangla mirror) এর ফেসবুক পেজে একটি ভিডিওতে তাকে এ বক্তব্য দিতে দেখা যায়। সাক্ষাৎকারে মুরাদ হাসান বলেন, ঢাবির রোকেয়া হল, শামসুন নাহার হলের মেয়েরা রাতে নিজেদের রুমে থাকতেন না, ঘুমাতেন হোটেলে হোটেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের আমি বলতাম, তোদের ওইখানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে) প্রসাব করার টাইমও আমার নাই।
এ বক্তব্যের জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ডা. মুরাদ হাসানের কুশপুত্তলিকায় জুতার মালা পরিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। ওই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কানেতা ইয়া লাম লাম নামে এক ছাত্রী বলেন, সম্প্রতি তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে ‘অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করেন ডা. মুরাদ হাসান। এরপর গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়েও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ ছাত্রী হিসেবে এই প্রতিবাদ জানিয়েছি। এদিকে এ ব্যক্তব্যের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে রাত ৯ টায় জুতা মিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ করে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতারা।
ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের আবেগের জায়গা। মুরাদ ঢাবি ছাত্রীদের নিয়ে মন্তব্য করে সারা দেশের নারী সমাজকে অপমান করেছে। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রিয়াজ উদ্দীন মুন্না তার ফেসবুকে লিখেন, বুঝলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকের প্রস্রাব করার সময় নাই। এখানকার ছাত্রীদের নিয়ে এমন কথা বলার সাহস পায় কোথা থেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোকেয়া হলের একজন নেত্রী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী জয়নাল আবেদিন লিখেন, পৃথিবীর বুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যে বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানকার ছাত্ররা মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের জন্য জীবন দিয়েছে। মিষ্টার প্রতিমন্ত্রী, আপনি হয়তো জানেন না, যার ছত্রচ্ছায়ায় আপনি রাজনীতি করেন, যাকে আপনি কখনও “আপা”, কখনোবা “মা” বলে মূখে ফ্যানা তুলে ফেলেন সেই নেত্রীও আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক শিক্ষার্থী। তামান্না জাহান লিখেছেন, এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় কোনো নেতা- নেত্রীদের মুরাদের বিরুদ্ধে স্টেটমেন্ট দিতে দেখলাম না। তারা কি মুরাদের কুরুচিপূর্ণ কথা মেনে নিলো?
উল্লেখ্য, বিতর্কিত মন্তব্য এবং অডিও ফাঁস হয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে থাকা তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে মঙ্গলবারের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রাত ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্ত তাকে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর থেকেই মুরাদ ‘দেশের টক অব দ্য টাউন’ পরিনত হয়েছে।