মিরসরাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অনবদ্য নাম। চট্টগ্রামের প্রতিটি অঞ্চল যখন মুক্তির স্বাদ পেতে উদগ্রীব, সেই সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মিরসরাইয়ের মুক্তিলাভ চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুক্তিকে আরও তরান্বিত করে। ৮ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় সবচেয়ে বেশি মুক্তিযোদ্ধানমৃদ্ধ এই অঞ্চল। মিরসরাই মুক্ত হওয়ার কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। মুহ?ূর্তেই জয় বাংলা স্লোগান মুখরিত মিছিল মিছিলে হাজারো জনতার ঢল নামে মিরসরাই হাই স্কুল মাঠে। সেসময় স্থানীয় মৌলভী শেখ আহম্মদ কবির কোরআন তেলাওয়াত করেন। পরে জাতীয় সংগীতের সুরে সুরে মুক্তিযোদ্ধা জাফর উদ্দিন আহাম্মদ চৌধুরীসহ অন্যান্যরা মিরসরাইয়ের আকাশে উড়িয়ে দেন একসাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সবুজের বুকে লাল রঙের জাতীয় পতাকা। প্রতি বৎসর দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, স্থানীয় প্রকাশনা ‘মাসিক মিরসরাই’ উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ, র্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। স্মৃতিবহ এই দিনটির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তৎকালীন মিরসরাই বিএলএফের ডেপুটি কমান্ডার চেয়ারম্যান প্রয়াত জাফর উদ্দিন আহাম্মদ চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, ৮ ডিসেম্বর সকালে সুফিয়া রোড়ে এসে দেখতে পান যে ওয়্যার্লেস স্টেশন থেকে পাকবাহিনীর একটি জিপ তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্রচন্ড শব্দে ওয়্যার্লেস স্টেশনটি ধ্বংস হয়ে যায়। শত্রুর অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে সব মুক্তিযোদ্ধার কাছে খবর পাঠানো হয়, সবাই যেন মিরসরাই থানা সদরের দিকে অগ্রসর হন। সকাল ১০টা নাগাদ মুক্তিযোদ্ধা জাফর উদ্দিন আহম্মদের বিএলএফ গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারাসহ প্রায় দুই মুক্তিযোদ্ধা মিরসরাই সদরের পূর্ব দিক ছাড়া বাকি তিন দিক ঘিরে ফেলেন। বেলা ১১টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে সংগঠিত হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে একযোগে আক্রমণ শুরু করেন। শুরু হয় হানাদার বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে গোলাগুলি। তখন পাক সেনাদের অবস্থান ছিল মিরসরাই হাই স্কুল, মিরসরাই থানা, মিরসরাই সি.ও. অফিস ভবনে। সম্মুখ যুদ্ধের একপর্যায়ে পাকসেনাদের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ আসা স্তিমিত হতে থাকে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা সতর্কভাবে শত্রুর অবস্থানের কাছাকাছি গিয়ে দেখেন তারা পালিয়ে গেছে। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা থানায় ঢুকে হানাদার বাহিনীর আটটি রাইফেল উদ্ধার করেন। পরে জানা যায় তারা চট্টগ্রামের দিকে পালিয়ে গিয়েছিল। প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সব উপজেলার মধ্যে একমাত্র মিরসরাই উপজেলা থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।