বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন

এখনো পিছিয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাত

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

কয়েক বছর ধরে দেশে জ্বালানি খাতের প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে, যার ফলাফল হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানিকেন্দ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। তবে এখনো পিছিয়ে রয়েছে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাত। ফলে চলতি বছর মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। আর তাই এটি এখন বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অন্যতম আগ্রহের খাতে পরিণত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী কমছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এ খাতে চীন, ভারত ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশ বিনিয়োগ করায় এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিনিয়োগকারীরা।
দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট। এর মাত্র ৩ শতাংশ বা ৭৬৬ মেগাওয়াট আসছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। আবার এ নবায়নযোগ্য জ্বালানির বেশির ভাগই আসে সৌরবিদ্যুৎ থেকে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ মুহূর্তে ১২টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলমান। যেগুলোর সক্ষমতা অন্তত ৭০০ মেগাওয়াট। এছাড়া আরো অন্তত ৫০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে ১০টি দেশের। যে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে সেগুলোতে দেশী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি যৌথভাবে বিনিয়োগ করেছে বিভিন্ন বিদেশী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে যে সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে, তার মধ্যে অন্তত ২৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগ রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ সোলার পার্ক নির্মিত হচ্ছে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। তিস্তা সোলার লিমিটেড নামে ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ প্রকল্পে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের পাশাপাশি বিনিয়োগ করেছে চীনা প্রতিষ্ঠান টিবিইএ জিনজিয়াং সান ওয়েসিস কোম্পানি লিমিটেড।
জাপানি প্রতিষ্ঠান ইকিসোজি কোম্পানি লিমিটেডের উদ্যোগে সিলেটে নির্মিত হচ্ছে পাঁচ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। এছাড়া বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বড় দুর্গাপুরে নির্মাণাধীন ১০০ মেগাওয়াট সোলার পার্কে বিনিয়োগ করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানি এনারগন টেকনোলজিস এফজেডই ও চীনের কোম্পানি চায়না সিনার্জি কোম্পানি লিমিটেড। ৩২ মেগাওয়াট সক্ষমতার সোলার পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায়। এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে হাওর বাংলা-কোরিয়া গ্রিন এনার্জি লিমিটেড। নির্মাণাধীন সৌরবিদ্যুতের এসব প্রকল্পের বাইরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নবায়নযোগ্য খাতে বিনিয়োগ করতে চায় আরো অন্তত ডজনখানেক কোম্পানি। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান এইট মিনিট এনার্জি সিঙ্গাপুর হোল্ডিংস-২ প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড। পাবনায় ১০০ মেগাওয়াট সোলার পার্কে ভারতীয় কোম্পানি শাপুর্জি পল্লনজি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ক্যাপিটাল কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড, নীলফামারীর ডিমলায় ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগে আগ্রহী নরওয়ের কোম্পানি স্ক্যাটেক সোলার এএসএ। চাঁদপুরে সাত মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে কনসোর্টিয়াম করে যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে বাংলাদেশী কোম্পানি অ্যাপোলো ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম ও সিঙ্গাপুরের কোম্পানি এসএমই ইলেকট্রিক্যাল প্রাইভেট লিমিটেড।
সৌরবিদ্যুতের পাশাপাশি দেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুবিদ্যুতেও সম্ভাবনা দেখছে বিভিন্ন দেশ। যে কারণে বায়ু শক্তিতেও বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। ফেনীর সোনাগাজীতে ৩০ মেগাওয়াট বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে রিজেন পাওয়ারটেক ও সিদ্ধান্ত উইন্ড এনার্জি লিমিটেড নামে ভারতের দুটি কোম্পানি বিনিয়োগ করছে। এছাড়া বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদেশী বেশ কয়েকটি কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না মেশিনারিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন চুক্তি সই করেছে। ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে চীনা প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে বাংলাদেশ নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে। ফলে সবাই এখন এ দেশে বিনিয়োগ করতে চাইছে। বিশেষত চীন, রাশিয়া, ভারতের মতো দেশ এখানে বিনিয়োগ করায় অনেকে আস্থা পাচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায় পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতেও বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে অনেক দেশ।
এ বিষয়ে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর এনার্জি রিসার্চের পরিচালক মো. শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে এখনো নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ফলে সরকারও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এ খাতে আকৃষ্ট করতে চায়। আর সে সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাইছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেশি, ফলে দামও বেশি হবে। সেক্ষেত্রে বাড়বে মুনাফার পরিমাণ। সেটিও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অন্যতম আগ্রহের জায়গা।
এনার্জি খাতের তথ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এনার্জি ট্র্যাকার এশিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে কেবল সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল মাত্র ২ কোটি ডলার। এরপর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে এ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ১০ কোটি ডলার। বিশ্বের সাতটি দেশের বিভিন্ন সংস্থা এ অর্থ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বর্তমানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। ২০২০ সালে চীনা কোম্পানি চায়না মেশিনারিজ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট করপোরেশন বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ খাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এ অর্থ ৪৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ ও ৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করা হবে। বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠান নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশের (এনডব্লিউপিজিসিএল) সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সরে আসছে। এর জায়গা দখল করছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। আমাদের দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আমরা বিভিন্ন দেশকে অনুপ্রাণিত করছি। অনেকেই সম্ভাব্য এলাকাগুলোর অবস্থান দেখে বিনিয়োগ করছেন। আবার অনেকে পরিপূর্ণ তথ্য চাচ্ছেন। তবে যারা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন তারা মূলত আমাদের দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ খাতের সামগ্রিক অবস্থা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com