বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, বুদ্ধিজীবীগণ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। জাতির এসব সাহসী সন্তানদের মেধা, মনন ও মনীষা জাতিকে দিকনির্দেশনা দেয়। কিন্তু মহান বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে বুদ্ধিজীবীদের নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যার ঘটনা রীতিমত রহস্যজনক। আর স্বাধীনতার ৫ দশক পরও তা এখনো রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আ.রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি জনাব লস্কর মোঃ তাসলিম, ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল হাফেজ রাশেদুল ইসলাম প্রমূখ।
সেলিম উদ্দিন বলেন, জাতি হিসেবে যারা আমাদেরকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে চায়নি, তারাই এই নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের নেপথ্যের শক্তি। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, বিজয়ের প্রায় ৫দশক অতিক্রান্ত হলেও এই হত্যাকান্ডের কুশিলবরা আজও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের ভাই জহির রায়হানের অন্তর্ধান এখনও রহস্যাবৃত। জহির রায়হান অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বলেই রহস্য প্রকাশ হওয়ার আগেই তাকে অপহরণ ও হত্যা করা হয়েছে। তার কাছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ, ডকুমেন্টারি-প্রামাণ্যচিত্র সংরক্ষিত থাকার কারণেই তাকে এই নির্মম পরিণতি বরণ করতে হয়েছিল। এসব তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ পেলে যাদের ‘থলের বিড়াল’ বেরিয়ে আসার আশঙ্কা ছিল, তারাই এসব হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল।
তিনি বলেন, যে মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীগণ আতœত্যাগ করেছিলেন সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সকল প্রকার হানাহানি ও বিভেদ ভুলে গিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে জাতীয় স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশকে সমৃদ্ধ ও কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মত ও পথের লোকদেরকে যার যার অবস্থান থেকে এক যুগে গঠনমূলক তৎপরতা চালাতে হবে। তাহলেই শহীদদের আতœা শান্তি পাবে দেশ ও জাতি কাক্সিক্ষত মুক্তির পথে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দলীয় আদর্শের লোকদের দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে সাজানো হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে। নির্বাচনে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারি দলের প্রার্থীর বিপরীতে কোন প্রার্থী প্রার্থীতা দাখিল করতে পারেনি বা করলেও প্রার্থীতা প্রত্যহার করতে বাধ্য হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সরকার সমর্থিত প্রার্থীরা। এমতাবস্থায় দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হলে নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতির কোন বিকল্প নেই। তিনি নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষ সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।