বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২৮ অপরাহ্ন

হালাল ও হারাম নির্ধারণের অধিকার

ডা: মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২১

হালাল ও হারাম ইসলামী শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি পরিভাষা। হালাল শব্দের আভিধানিক অর্থ সিদ্ধ। আর শরিয়তের ভাষায় যা করার অনুমতি দিয়েছে বা করতে নিষেধ করেনি এমন বস্তু বা কাজকে হালাল বলে। হারাম শব্দের আভিধানিক অর্থ নিষিদ্ধ। আর শরিয়তের ভাষায় যা স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন, যা করার পরিণামে পরকালে শাস্তি অনিবার্য এরূপ বস্তু ও কাজকে হারাম রূপে আখ্যায়িত করা হয়। আর ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে সব বৈধ বিষয়কে হালাল ও সব অবৈধ বিষয়কে হারাম বলা হয়। হালাল ও হারাম আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। তাই প্রত্যেক মুমিন নিঃসঙ্কোচে তার অনুসরণ করে। কেননা সে বিশ্বাস করে, ‘তিনি তাদের জন্য পবিত্র (ও উত্তম) বস্তু হালাল করেছেন এবং অপবিত্র (ও অনুত্তম) বস্তু হারাম করেছেন। ’ (সূরা আরাফ, আয়াত-১৫৭)
আল্লাহর নির্ধারিত সীমা : মুমিনের জন্য হালাল ও হারাম আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কুরআনে আল্লাহ এই সীমারেখা অতিক্রম করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। সুতরাং তোমরা তা লঙ্ঘন করো না। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে তারাই অবিচারী।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২২৯)
নির্ধারণের অধিকার শুধু আল্লাহর : হালাল ও হারাম নির্ধারণের অধিকার শুধু আল্লাহর। আল্লাহ এই অধিকার আর কাউকে দেননি। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ আল্লাহ তোমাদের যে জীবিকা দিয়েছেন তোমরা যে তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ? বলুন, আল্লাহ কি তোমাদের এর অনুমতি দিয়েছেন নাকি তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করছ?’ (সূরা ইউনুস, আয়াত-৫৯) হালাল ও হারাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে মানবম-লী! তোমরা হালাল ও পবিত্র বস্তুর মধ্য থেকে ভক্ষণ করো! আর তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা বাকারা-১৬৮) ‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যেসব পবিত্র বস্তু জীবিকারূপে দান করেছি, তা হতে ভক্ষণ করো এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা একান্তভাবে তাঁরই ইবাদত করো।’ (সূরা বাকারা-১৭২) ‘এখন তোমরা যদি আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি ঈমানদার হয়ে থাকো তাহলে যেসব জন্তুর ওপর (জবাই করার সময়) আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে সেসবের গোশত খাও।’ (সূরা আনআম-১১৮) ‘আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে যে জিনিসের ওপর তা তোমরা খাবে না তার কী কারণ থাকতে পারে? অথচ নিতান্ত ঠেকার সময় ছাড়া সর্বাবস্থায় সেসব জিনিসের ব্যবহার আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন, তা তিনি তোমাদের বিস্তারিতভাবে বলে দিয়েছেন।’ (সূরা আনআম-১১৯)
‘তিনি তো তোমাদের ওপর মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো নামে জবাইকৃত প্রাণী হারাম করেছেন। অবশ্য যে ব্যক্তি অনন্যোপায় হয়েছে সে সীমালঙ্ঘনকারী বা অভ্যস্ত নয়, তবে তার জন্য তা ভক্ষণে গুণাহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াবান।’ (সূরা বাকারা-১৭৩)
‘হে নবী! তুমি কেন সেই জিনিস হারাম করো যা আল্লাহ তোমার জন্য হালাল করেছেন? (তা কি এই জন্য যে) তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তোষ পেতে চাও? আল্লাহ ক্ষমাকারী, অনুগ্রহকারী।’ (সূরা তাহরিম-১)
‘হে নবী! তাদের বলো, আমার আল্লাহ যেসব জিনিস হারাম করেছেন তা তো এই নির্লজ্জতার কাজ প্রকাশ্য বা গোপনীয় এবং গুণাহের কাজ ও সত্যের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি।’ (সূরা আরাফ-৩৩)
হালাল ও হারাম সম্পর্কে হাদিস : হজরত মিকদাম ইবনে মায়াদি কারাব রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, মানুষের খাদ্যের মধ্যে সেই খাদ্যই সবচেয়ে উত্তম, যে খাদ্যের ব্যবস্থা সে নিজ হস্ত উপার্জিত সম্পদ দ্বারা করে। আর আল্লাহর প্রিয় নবী হজরত দাউদ আ: আপন হাতের কামাই থেকে খাদ্য গ্রহণ করতেন। (বুখারি) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘হারাম পথে সম্পদ উপার্জন করে বান্দা যদি তা দান করে দেয় আল্লাহ সে দান গ্রহণ করেন না। প্রয়োজন পূরণের জন্যে সে সম্পদ ব্যয় করলেও তাতে কোনো বরকত হয় না। সে ব্যক্তি যদি সে সম্পদ রেখে ইন্তেকাল করে তা জাহান্নামের সফরে তার পাথেয় হবে। আল্লাহ অন্যায় দিয়ে অন্যায়কে মিটান না। বরং তিনি নেক কাজ দিয়ে অন্যায়কে মিটিয়ে থাকেন। নিশ্চয়ই মন্দ মন্দকে দূর করতে পারে না।’ (মিশকাত)
উমার ইবনে আউফ মুযানি নবী করিম সা: থেকে শুনে বর্ণনা করেন, ‘মুসলমানরা পরস্পরের মধ্যে চুক্তি ও অঙ্গীকার করতে পারে। তবে এমন চুক্তি ও অঙ্গীকার জায়েজ নেই যা হালালকে হারাম করে দেয় এবং হারামকে করে দেয় হালাল। মুসলমানরা তাদের শর্তাবলি পালন করবে। তবে এমন কোনো শর্ত মানা যাবে না যা হারামকে হালাল করে দেয় আর হালালকে করে দেয় হারাম।’ (তিরমিজি) পরিশেষে আল্লাহ তায়ালাকে বিশ্বাস ও ভয় করে ইসলামের হারাম কাজগুলো ছেড়ে জীবন-যাপন করার মধ্যেই নির্ভর করে দুনিয়ার সুখ, শান্তি ও উন্নতি। আল্লাহ বলেন, ‘এলাকার লোকেরা যদি আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং ভয় করে চলে, আমি তাদের জন্য আসমান জমিনের বরকতের সব দরজা খুলে দেবো।’ আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে হারাম কাজ তথা কুরআন সুন্নাহর নিষিদ্ধ কাজসমূহ ছেড়ে দেয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ ও রাসূলের ভালোবাসা লাভে কুরআন সুন্নাহর যথাযথ অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন। লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য, প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ রোগী কল্যাণ সোসাইটি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com