ঢাকার ধামরাইয়ে ধলেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে প্রায় ৫০ বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দুটি ইউনিয়নের প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষ।একটি সেতু পেতে আকুতির শেষ নেই ঔই ইউনিয়নের জনগণের।তাই আজও কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে তাদের। এমন দৃশ্য চোখে পড়ে উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের চর সুঙ্গর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে। সরেজমিনে দেখা যায়, ধামরাই উপজেলার রোয়াইল ও পার্শবর্তী মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার ধল্লাসহ কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের ভরসা এখনও বাঁশের সাকো ও খেয়া নৌকা। সারা বছরই ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাকো ও বর্ষায় খেয়া নৌকায় পার হয়ে সাভার ও সিংগাইর উপজেলা সদরসহ ঢাকায় পারি জমাচ্ছে । ধলেশ্বরী নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে দাবি জানিয়ে এলেও তা এখনো পর্যন্ত কার্যকর হয় নি । ফলে অবহেলিত ধামরাই ও সিংগাইর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষকে প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুধু কি তাই পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষি পণ্য সাভারসহ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে নিয়ে কেনাবেচা করতে পারছে না। কৃষক পাচ্ছে না তাদের ফসলের সঠিক মূল্য। গাড়ি দিয়ে মালামাল বহনের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সবজি ও ফসল নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া কম দামে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা। অপরদিকে, বিভিন্ন সময় নির্বাচন এলে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও কেউ বাস্তবায়ন করেননি। ভোগান্তি লাঘবে দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।দেশ যত দ্রুত এগিয়ে চলছে তেমনি ধলেশ্বরী নদীর উপর একটি সেতুর কারণে রোয়াইল ও পাশ্ববর্তী এলাকার মানুষ পিছিয়ে পড়ছে। চর সুঙ্গর এলাকার সাইদুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন, মিনাসহ একাধিক ব্যক্তি জানান , ধামরাই উপজেলার দক্ষিণনাঞ্চল কুল্লা ও রোয়াইল ইউনিয়ন দুটি সাভার ও সিংগাইর সীমান্ত ঘেঁষা।
একমাত্র ধলেশ্বরী নদী দ্বারা বিভক্ত। এ নদীর ওপর স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও কোন সেতু গড়ে ওঠেনি।জনপ্রতিনিধিরা হাজারো আশ্বাস দিলেও নির্বাচনের পর আর কথা রাখেন নি। দুটি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের চর সুঙ্গর, সুঙ্গর, মল্লিকপাড়া, দক্ষিণ খরারচর, বহুতকুল,খরারচর, মীরের চর এলাকাসহ পাশ্ববর্তী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষকে চরম কষ্টের মধ্য দিয়ে নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে ও বর্ষা মৌসুমে খেয়া নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। তারা উপজেলা সদর, সাভার ও ঢাকায় যাতায়াতের জন্য প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে যেতে হয়। ওইসব এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য স্থানীয় বাজারে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু ধলেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতুর কারণে। তবে আর কতদিন তাদের এ দুর্ভোগের শেষ হবে। তবে সেতু না থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্কুল, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।কেউই সঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না।বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে। খেয়া নৌকা দিয়ে পাড়াপাড়ের কারণে সময় নষ্ট হয় বেশি। তাই অনেক আগেই বাড়ি থেকে বের হতে হয়।তাছাড়া ক্লাস মিছ করতে হয়। তবে ছোট বাচ্চা ও বৃদ্ধদের কষ্ট আরো চরমে। না তারা বাঁশের সাকো না খেয়া নৌকায় ভালো করে নদী পারাপার হতে পারে। সব সময় আতঙ্কে থাকতে হয় পরিবারের লোকজনকে। কখন কোন দূর্ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম বিশ্বাস বলেন, চর সুঙ্গর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে একটি সেতু নির্মিত হলে কয়েকটি ইউনিয়নের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কৃষকসহ লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টু বলেন, চরসুঙ্গর ধলেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় এমপি ও উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রায়ই তাগাদা দিয়ে আসছি। সেতু নির্মাণের জন্য আমাকে আশ্বাসও দিয়েছে। এখন শুধুই অপেক্ষার পালা। ধামরাই উপজেলা প্রকৌশলী মো. আজিজুল হক বলেন, ধামরাই উপজেলার মধ্যে আগামীতে যতগুলো সেতু নির্মাণের জন্য তালিকা করে প্রস্তাব করা হয়েছে, তার মধ্যে চর সুঙ্গর ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতুর তালিকায়ও রয়েছে। আশা খুব তাড়াতাড়ি ওই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হবে।