ফলন বাড়াতে সিরাজগঞ্জে সরিষার খেতে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন কৃষকরা। অসচেতনভাবে ওষুধ প্রয়োগের কারণে লাখ লাখ মৌমাছি মরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ মৌ খামারিদের। মৌ খামারিরা বলছেন, এরই মধ্যে তাদের অন্তত পাঁচ কোটি মৌমাছি মরে গেছে। ফলে এ বছর জেলায় মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। উপরন্তু খামারিদের লোকসান গুনতে হবে। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, মধু উৎপাদন লক্ষ্য পূরণে কোনো সমস্যা হবে না। সিরাজগঞ্জ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ৫৪ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এবার ২১০ টন মধু সংগ্রহের জন্য ১৬৯ জন খামারি ৩১ হাজার ৮৬টি বাক্স স্থাপন করেছেন। এরই মধ্যে ১২৬ টন মধু সংগ্রহ হয়ে গেছে। মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। চলবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত।
জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার আলী গ্রামের মৌ খামারি আব্দুর রশিদ অভিযোগ করেন, মধু সংগ্রহের জন্য তিনি ৩৫০টি মৌ বাক্স ফেলেছেন। ফলন বাড়াতে কৃষকরা সরিষার জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন। এতে সরিষার ফুলে মধু সংগ্রহ করতে বসা লাখ লাখ মৌমাছি মারা যাচ্ছে।
উল্লাপাড়ার কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন ও শামসুল হক জানান, জমিতে ফলন বেশি হওয়ার জন্য তারা ভিটামিনজাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন। ফলে অসংখ্য মৌমাছি মারা গেছে। কিন্তু কীটনাশক প্রয়োগের কারণে মৌমাছির মৃত্যুর বিষয়টি তাদের জানা ছিল না।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আজমল হক জানান, তার উপজেলায় বিপুল পরিমাণ মৌমাছি মারা গেছে। মৌমাছির মৃত্যুর খবর পেয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ তারা এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট ফসলের মাঠগুলো পরিদর্শন করেছেন। আসলে মৌমাছি সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। দিনের বেলায় ওষুধ ছিটানোর কারণে মৌমাছি মারা গেছে। বিকালে মৌমাছি তাদের বাক্সে ফিরে যায়। কৃষকরা এ সময়ের পরে মাঠে কীটনাশক ছিটালে মৌমাছির কোনো ক্ষতি হতো না। কৃষকদের অসচেতনতার কারণে এমনটা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। জেলা মৌ খামারি সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, কৃষকরা সরিষার জমিতে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে খামারিদের অন্তত পাঁচ কোটি মৌমাছি মরে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। মৌমাছি মৃত্যুর কারণে এ বছর জেলায় তাদের মধু আহরণের লক্ষ্য পূরণ হবে না। এতে খামারিদের লোকসান গুনতে হবে। সরকারি হিসাব যা-ই হোক, জেলায় ২৫০ জন খামারি প্রায় ৫০ হাজার বাক্স বসিয়েছেন, যার মাধমে প্রায় ৪০০ টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। মৌমাছি মৃত্যুর কারণে এরই মধ্যে অনেক খামারি চলেও গেছেন। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হানিফ বলেন, ব্যাপক হারে মৌমাছি মৃত্যুর খবর আমাদের কাছে নেই। এতে মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে না।