শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২২

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান -১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনা তদন্তের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে লঞ্চের ইঞ্জিন ত্রুটিপূর্ণ হওয়াকেই আগুনের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মর্মান্তিক এ দূর্ঘটনার জন্য প্রতিবেদনে লঞ্চটির চার মালিক, মাস্টার ও ইঞ্জিন চালককে দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে সদরঘাটে কর্মরত নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা ছিল বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
কমিটির আহ্বায়ক ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. তোফায়েল ইসলাম সোমবার রাতে মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর কাছে প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম । গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বরগুনায় যাওয়ার পথে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ভয়াবহ অগ্নিদূর্ঘটনায় পড়ে অভিযান-১০। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন অন্তত আরো ৮০ জন।
ওই ঘটনার পরদিন ২৪ ডিসেম্বর যুগ্মসচিব তোফায়েল ইসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পুড়ে যাওয়া লঞ্চ ঘুরে দেখেন এবং প্রত্যক্ষদর্শী এবং বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করেন বলে কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই লঞ্চটি যখন চাঁদপুর ঘাট অতিক্রম করছিল তখনই এর ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে লঞ্চটিতে গন্তব্যে দিকে না নিয়ে নিরাপদ কোনো ঘাটে ভেড়ানো উচিত ছিল। লঞ্চের যাত্রীরাও নিরাপদ স্থানে লঞ্চটি ভেড়ানোর অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু মাস্টার ও ইঞ্জিনচালক যাত্রীদের কথা না শুনে ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন নিয়েই যাত্রা অব্যহত রাখেন। এতে মাস্টার ও চালকের অদক্ষতা ও গোয়ার্তুমি ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লঞ্চে আগুন লাগার পর সেটি নেভানোর চেষ্টা করা হয়নি। আগুন লাগার পর লঞ্চটি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ থাকার ১৫ মিনিট পর ঝালকাঠির ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চর বাটারাকান্দা গ্রামে নদীর পাড়ে ভেড়ে অভিযান -১০। যাত্রীদের ছুটাছুটির মধ্যেই লঞ্চের প্রথম শ্রেণির ইঞ্জিনচালক মাসুম বিল্লাহ, দ্বিতীয় শ্রেণির ইঞ্জিন ড্রাইভার আবুল কালাম ও কর্মরত গ্রিজাররা (ইঞ্জিনকক্ষের সহকারী) পালিয়ে যান। নোঙর করা বা লঞ্চটি বাঁধার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া পরও তারা চেষ্টা করেনি।
এতে বলা হয়, লঞ্চটি প্রথম যেখানে ভিড়েছিল, সেখানে নোঙর না করায় বা বেঁধে না রাখায় জোয়ারের কারণে সেটি আবার মাঝনদীতে চলে যায়। লঞ্চটি পুড়তে পুড়তে প্রায় ৪০ মিনিট পর নদীর অপর পাড়ের দিয়াকুল গ্রামে ভেড়ে। এই সময়ে অনেক যাত্রী অগ্নিদগ্ধ হন। অনেকে নদীতে লাফ দেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হলে, লঞ্চটি চর বাটারাকান্দায় ভেড়ানোর স্থানে বাঁধলে বা নোঙর করলে হয়তো আগুনের তীব্রতা এত বৃদ্ধি পেত না। এত যাত্রীর প্রাণহানি ঘটত না।
এতে উল্লেখ করা হয়, আগুনের সূত্রপাত লঞ্চের ইঞ্জিন থেকেই হয়েছে। আর এর জন্য লঞ্চ মালিকরা দায়ী। কারণ নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী লঞ্চটির দুটি ইঞ্জিনের মোট ক্ষমতা ছিল ১ হাজার ১০০ অশ্বক্ষমতার (বিএইচপি)। কিন্তু মালিকেরা নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে সনদের শর্ত ভেঙে অন্য জাহাজের পুরোনো ৩ হাজার ৩৬ বিএইচপির ইঞ্জিন সংযোজন করেন। নতুন ইঞ্জিন লঞ্চটির জন্য উপযুক্ত কি না, তা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো হয়নি। এদিকে অভ্যন্তরীণ জাহাজ বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো নৌযানে ১ হাজার ২০ কিলোওয়াট বা ১ হাজার ৫০১ দশমিক ৯২ বিএইচপির চেয়ে বেশি ক্ষমতার ইঞ্জিন সংযোজন করলে লঞ্চে ইনল্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ার (আইএমই) নিযুক্ত করতে হয়। অভিযান-১০ লঞ্চটিতে এ পদের কেউ ছিলেন না। আবার নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ডকইয়ার্ডে লঞ্চটিতে পুরোনো ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছ। এর জন্যও ডকইয়ার্ডের মালিকরও দায় রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম লঞ্চ চালিয়ে বেশি মুনাফা অর্জনের ‘রোটেশন’ প্রথা বন্ধের সুপারিশ করেছে কমিটি। মালিকদের এ কৌশলের কারণে প্রয়োজনের তুলনায় কম লঞ্চ থাকে। এ সুযোগে লঞ্চে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হয়। এতে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়। লঞ্চে যাত্রী তোলার আগে টিকেট কাটার বিষয়টি নিশ্চিত করা, লঞ্চ রুট মালিকদের একক আধিপত্যের রাস্তা বন্ধ করার সুপারিশ করেছে কমিটি।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অবহেলা রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় তিন মাস বসে থাকার পর লঞ্চটি আবার চালু হয়। এ সময় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের জাহাজ জরিপকারক ও পরিদর্শক এবং বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শকরা কেউ ভালোভাবে লঞ্চটি পরীক্ষা করেননি। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মো. মাহবুবুর রশিদ লঞ্চটির ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়ে খোঁজ রাখেননি। তিনি লঞ্চটি পরিদর্শন করে চলাচলের জন্য অনুমতি দিতে সুপারিশ করেছিলেন। কাজেই এটা স্পষ্ট জাহাজ জরিপকারক দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। জানা গেছে, লঞ্চটি প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর ঢাকা-বরগুনা রুটে ১৯ ডিসেম্বর প্রথম যাত্রা করে। ২৩ ডিসেম্বর করে দ্বিতীয় যাত্রা। সদরঘাটে নিয়োজিত নৌপরিবহন অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ১৯ ও ২৩ ডিসেম্বর লঞ্চটি পরিদর্শন করেননি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। লঞ্চটির যান্ত্রিক ত্রুটি সারানোর পর পুনরায় সার্ভিসে আসার বিষয়টি অবগত হওয়া সত্ত্বেও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের জাহাজ জরিপকারককে বিষয়টি না জানিয়ে যথাযথ ভূমিকা পালন করেননি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com