সমাধান দিতে পারে জিঙ্কসমৃদ্ধ চাল
পুষ্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান জিঙ্ক। কিন্তু দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ জিঙ্কস্বল্পতায় ভুগছে। খাবার বিশেষ করে চালের মাধ্যমে জিঙ্কের এ স্বল্পতা পূরণ করা সম্ভব। পলিশিং ও কাটিং করে মিলগুলো চালকে চিকন করছে। এতে চালের অনেক পুষ্টিগুণ কমে যাচ্ছে। চাল ছাঁটাইপূর্বক আকর্ষণীয় করে মিল মালিকরা প্রতারণা করছে। এটি বন্ধে এখনই আইনি কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন।
গত শনিবার গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) বাংলাদেশ, হারভেস্ট প্লাস, বিজনেস ইন্টেলিজেন্স ও বণিক বার্তার যৌথ উদ্যোগে ‘বায়োফর্টিফায়েড জিঙ্কসমৃদ্ধ ব্রি ধানের বাজার সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক কৃষি সচিব ও কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামান। গেইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকারের সভাপতিত্বে ও বণিক বার্তা সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন গেইন বাংলাদেশের পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, চাল ছাঁটাই ও পলিশিংপূর্বক আকর্ষণীয় করে মিল মালিকরা প্রতারণা করছে। চাল কাটিং করে মিলগুলো চালকে চিকন করছে। এতে চাল থেকে অনেক পুষ্টিগুণ চলে যায়। একটি অগ্রসরমাণ অর্থনীতিতে এমন প্রতারণা মানা যায় না। এটা আইন করে বন্ধ করা উচিত। কোন জাতের চাল এ বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে মিলগুলো নিজেদের মতো ব্র্যান্ড দাঁড় করিয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল বলে চালু হওয়া চালের কোনো জাত না থাকলেও কোম্পানিগুলো বাড়তি লাভের আশায় এ প্রতারণা করছে। আইন করে যেমন লবণে আয়োডিন এবং তেলে ভিটামিন-এ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তেমনি চালের ক্ষেত্রেও আইন করা দরকার।
শুধু চালের মাধ্যমে জিঙ্ক সরবরাহ করা যাবে এমন নয়। তবে যেহেতু দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চাল, সেহেতু চালের মাধ্যমেই জিঙ্ক সরবরাহ করা সহজ। বায়োফর্টিফায়েড জিঙ্কসমৃদ্ধ ব্রি ধানের বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাজারে এমন ধান ও চালের চাহিদা রয়েছে। তাই এটি উৎপাদনে বীজ সরবরাহ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। এমন হলে কৃষকরা এগিয়ে আসবে। মানুষকে জিঙ্কসমৃদ্ধ চালের বিষয় সচেতন করতে হবে। মিডিয়ার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম জিঙ্কসমৃদ্ধ চালের প্রচারের জন্য জোর ভূমিকা রাখতে পারে।
দেশের শিশুদের মধ্যে ৪৫ শতাংশের জিঙ্কস্বল্পতা রয়েছে। ছয় থেকে চৌদ্দ বছর বয়সীদের মধ্যে ৪০ শতাংশের জিঙ্কের স্বল্পতা রয়েছে। আর গর্ভবতী নন ও দুগ্ধদান করেন না এমন (এনপিএনএল) নারীদের মধ্যে জিঙ্কের স্বল্পতা ৫৭ শতাংশ। জিঙ্কস্বল্পতার কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। এমন সব বিষয় উল্লেখ করে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজনেস ইন্টেলিজেন্সের প্রধান নির্বাহী শাকিব কোরেশী। তিনি বলেন, এটির অভাবে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি হয় না। দেশে মানুষের খর্বতার অন্যতম কারণ জিঙ্কস্বল্পতা। জিঙ্কের ঘাটতির কারণে দেশের মানুষের দৈহিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
সাবেক কৃষি সচিব ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, যে অঞ্চলে যে ধরনের চালের প্রচলন রয়েছে, সে অঞ্চলের জন্য সে ধরনের চাল উৎপাদন করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে ভুটানসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ জিঙ্কসমৃদ্ধ চাল নিতে চায়। কিন্তু আমরা সেটি দিতে পারছি না। ধানের নাম সংখ্যাগতভাবে না দিয়ে অন্য কোনোভাবে দিয়ে জনপ্রিয় করা যায় কিনা সেটি ভাবতে হবে। কোনো কৃষক যদি পুষ্টিসমৃদ্ধ ধানের আবাদ করতে চান, তাহলে বিনা জামানতে কৃষক কৃষিঋণ পাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত এ ঋণ কৃষকরা পাবেন।
চাল ও বীজের প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করা এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, হাইব্রিড দিয়ে আমরা প্রথমে অনেক চ্যালেঞ্জ পার করেছি। মানুষের মধ্যে প্রথমে বিশ্বস্ততা অর্জন করাতে হবে। এটা ভালো কি ভালো না এ নিয়ে অনেক আলোচনা এবং সন্দেহ থাকবে। তাদের বোঝাতে হবে জিঙ্কের উপকারিতা। সরকারি প্রকিউরমেন্ট নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে। অর্থাৎ যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চাল কেনে, তাদের মধ্যে জিঙ্ক চালের চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে।
জিঙ্ক শিশুদের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি পরিমাণে কম লাগে, তবে গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন। তিনি বলেন, তবে জিঙ্কসমৃদ্ধ চালের ক্ষেত্রে আমাদের ভাবতে হবে, চালকলে প্রক্রিয়াকরণ এবং রান্নার কারণে জিঙ্ক কতটুকু অবশিষ্ট থাকছে। একই সঙ্গে আমরা যদি প্রয়োজনীয় পরিমাণে সরবরাহ করতে না পারি, তাহলে চাহিদা তৈরি করে লাভ নেই বলে মন্তব্য করেন এ পুষ্টিবিশেষজ্ঞ।
দেশে এখন পর্যন্ত শতাধিক ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়া সাতটি হাইব্রিড ধানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। ব্রি উদ্ভাবিত প্রায় সব ধানের জাতেই কম বেশি জিঙ্ক রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ব্রি ছয়টি উচ্চমাত্রার জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করেছে বলে জানান বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। তিনি বলেন, এসব পুষ্টি ধানের বীজ উৎপন্ন করেছি। জিঙ্কসমৃদ্ধ ব্রি ৭৪-এর উৎপাদনের হার বরিশালে খুবই বেশি। তবে বাজারমূল্যটাও আমাদের পর্যালোচনা করতে হবে।
একটা জাত উদ্ভাবন থেকে বাজারে জনপ্রিয় করতে প্রায় ১৫-১৬ বছর সময় প্রয়োজন হয়। এটির বিকল্প মডেল তৈরি করা প্রয়োজন বলে জানান হারভেস্ট প্লাসের কান্ট্রি ম্যানেজার ড. খায়রুল বাশার। তিনি বলেন, নতুন ধরনের চালের জন্য ব্র্যান্ডিং করতে হবে। প্যাকেজিংও সঠিকভাবে করতে হবে। আমরা হারভেস্ট প্লাস একটি মডেল তৈরি করেছিলাম। যেখানে সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করেছি। এতে সময় কম প্রয়োজন হয়েছে। এখানে গবেষণা থেকে উৎপাদন ও ভোক্তাদের জন্য প্রস্তুত করবে এমন মিলে সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা। বিপণন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ ও প্রচার জরুরি। সভাপতির বক্তব্যে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার বলেন, জিঙ্কসমৃদ্ধ বায়োফর্টিফায়েড ধানের ব্র্যান্ডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান যারা চাল ও ধান কেনে তাদের প্রকিউরমেন্টে বিষয়টি থাকা প্রয়োজন। সবাই মিলে আমরা একটা বাণিজ্যবান্ধব পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারব। যেখানে সবার মধ্যে দায়িত্ববোধ থাকবে।
আমরা খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হলো পুষ্টি নিশ্চিত করা। সাড়ে ছয় কোটি মানুষ জিঙ্কস্বল্পতায় ভুগছে। মোট জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশের মধ্যে জিঙ্কের অভাব রয়েছে। আমরা গড়ে দৈনিক প্রায় ৪০০ গ্রাম চাল খাই। চালের মাধ্যমেই জিঙ্ক সরবরাহের উত্তম উপায় বলে জানান গেইন বাংলাদেশের পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, অপুষ্টি দূর করার জন্য খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় কিছু উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। ধান উৎপাদন করা হয়েছে এবং তা মাঠ পর্যায়েও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বীজ উৎপাদন ও সরবরাহের আগে একটা চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ বলেন, ভোলায় এ ধান বেশি উৎপাদন হয়। নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে যদি ভোলা থেকে সরকারি প্রকিউরমেন্টের মাধ্যমে এ ধানা আনা যায়। এবং শিশুদের ও নারীসহ যারা ঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের চাহিদা মেটানো যায়, তাহলে জিঙ্কস্বল্পতার ঘাটতি কিছুটা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে এবং এর দাম কৃষকের জন্য নিশ্চিত থাকবে। যে জেলায় জিঙ্কসমৃদ্ধ ধান বেশি হয়, সেখান থেকে অন্যান্য জেলায় বিতরণ বা সরবরাহ করতে হবে। এতে বেসরকারি উৎপাদকরা উৎপাদনে আসবে। এতে বীজ উৎপাদনও বাড়বে। চাহিদাও বাড়বে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, ধানের বাজার আর চালের বাজার এক নয়। দুটি ভিন্ন প্রকৃতির। ধানের ক্রেতা বা ভোক্তা চালকল মালিকরা আর চালের ভোক্তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ ভোক্তা। আমরা জানি জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের চাষ বহু জায়গায় অল্প অল্প করে হচ্ছে। বিষয়টি মার্কেটিংয়ের সমস্যা। কোনো কাজ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সঠিকভাবে হলেও প্রায়োগিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তেমন বাস্তবায়ন হয় না।
পুষ্টি চালের জনপ্রিয়করণের বিষয়ে একটি কার্যকর ও সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, পাবলিক প্রকিউরমেন্টের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে চাল উৎপাদন ও সরবরাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে চাহিদা ঠিক করলে উৎপাদন নির্ধারণ করতে পারা যাবে। তবে ধান ও চালের দাম ঠিক রাখতে হবে।
দেশের ৬৪ জেলায় আমাদের কাঠামো রয়েছে। আমাদের কিছুটা দায়িত্ব দিলে আমরা সারা দেশে এর প্রসারে কাজ করতে পারব বলে জানান সেনাকল্যাণ সংস্থার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেয্ওয়ান, এনডিসি, পিএসসি। তিনি বলেন, খাদ্য বিভাগ থেকে আমরা যে চাল পেয়ে থাকি সেখানে এ চাল পৌঁছায় না। আমাদের সৈনিকদের মাধ্যমে তৃণমূলে এ চাল পৌঁছানো সম্ভব।
বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, যে পরিমাণে চাল আমরা দৈনিক খাই, সেখানে জিঙ্কসমৃদ্ধ চাল জনপ্রিয় করতে হবে। তবে প্রয়োজনীয় পরিমাণে জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের প্রচার পিছিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) সাবেক মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ বলেন, আমরা ২০টি প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি করেছি। এতে জিঙ্কসমৃদ্ধের বিষয়টিও রয়েছে। এটা একটা ভালো উদ্যোগ হতে পারে। আমাদের ভাবতে হবে যা জনপ্রিয় হয়নি তা জনপ্রিয় করব নাকি যা জনপ্রিয় রয়েছে তা ধরে রাখব। জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের বিষয়ে আমাদের বিশদ জরিপ ও গবেষণা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) পরিচালক ড. মো. তাহেরুল ইসলাম খান বলেন, জিঙ্কসমৃদ্ধ চাল বাজারজাত এবং জনপ্রিয়করণ কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের কাজ নয়। সবাই মিলে এ কাজ করলে তবেই জিঙ্কসমৃদ্ধ চালের বিষয়ে জনপ্রিয়করণ করা যাবে।
জাতীয় পুষ্টি সেবার (এনএনএস) লাইন ডিরেক্টর ডা. এসএম মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, ক্ষুধামান্দ্য দূর করা, শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং খর্বতা দূর করার ক্ষেত্রে জিঙ্কের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পরিপূর্ণ পুষ্টি নিশ্চয়তা আমরা জিঙ্কসমৃদ্ধ চালের মাধ্যমে আনতে পারি।
নাবিল গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা অনুপ কুমার সাহা বলেন, আমরা এ চাল বা ধান সরবরাহের দিক থেকে দেখছি। কিন্তু চাহিদার দিক দেখাতে হবে। জিঙ্কসমৃদ্ধ চাল ভোক্তা কেন নেবে তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। কোনো কোনো মানুষের আয়ের ৬০ শতাংশই চাল কেনার জন্য ব্যয় হয়। তারা কেন এ চাল কিনবে বিষয়টি আমাদের ভাবতে হবে।
বঙ্গ মিলার লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক নাসের আহমেদ বলেন, কোনো নতুন বিষয়কে নতুন করে পরিচিত করতে চাইলে একটু বেগ পেতে হবে। এজন্য কৃষককে প্রশিক্ষিত করতে হবে, কন্ট্রাক ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে ভালো বীজ দিতে হবে। বিক্রয় করা কঠিন নয়। তবে উৎপাদন করা একটু কঠিন। কারণ মানুষকে বিষয়টিতে আগ্রহী করে তুলতে হবে।
প্রাণ এগ্রিবিজনেস লিমিটেডের প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন বলেন, অনেকে হতাশার কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা বিশ্বের ১৫০ দেশে পণ্য রফতানি করেছি। আমরা সব পণ্যের ক্ষেত্রেই সফল হয়েছি। জিঙ্কসমৃদ্ধ চাল বিপণন এবং রফতানি করলে আমরাও সফল হব। আমরা কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে থাকি। বীজ সরবরাহ করি এবং আর্থিক সহায়তাও দিয়ে থাকি।
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের উপপরিচালক ডা. এবিএম মসিউল আলম বলেন, ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইন বানানোর যে প্রক্রিয়া স্লোগানে রূপান্তরিত করা হয়েছে তেমনি জিঙ্কসমৃদ্ধ চালের বিষয়টিও করতে হবে। বিশেষ করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। একই সঙ্গে স্থানীয় বাজারে এর বিস্তারে ভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে।
চালের বস্তায় ধানের জাত লেখা থাকে না। থাকে কোম্পানির ব্র্যান্ড নেম। এখানে ধানের জাত উল্লেখ করার বিষয়ে নজর দিতে হবে বলে জানান কৃষি তথ্য সার্ভিসের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ড. সুরজিত সাহা রায়। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. কবিরুল হাসান বলেন, আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ধানের প্রয়োজনীয় পরিমাণে উৎপাদন ও সরবরাহ। গবেষণার মাধ্যমে যে বীজ পাওয়া যায়, তা আমাদের নিজেদের জমিতে চাষ করে পরবর্তী সময়ে ডিলারের মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়।
গত শনিবার অনুষ্ঠানে আলোচনায় আরো অংশ নেন, খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং কৃষি ও খাদ্য সংস্থার জাতীয় টিম লিডার একেএম নুরুল আফসার, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড (বিইওএল) সিনিয়র ম্যানেজার (বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) সামিত কুমার সরকার, ভোলা অটো রাইস মিলস লিমিটেডের (চরফ্যাশন) স্বত্বাধিকারী নিয়াজ আহমেদ, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (মার্কেটিং) এমএ মাহমুদ, হারভেস্ট প্লাসের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সৈয়দ মো. আবু হানিফা, গেইন বাংলাদেশের সিনিয়র পলিসি অ্যাসোসিয়েট মন্দিরা নিয়োগী।