মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক নিয়ম পড়ানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২২

দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না দেখাতে এবং আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে ট্রাফিক নিয়ম সম্পর্কে প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। গাড়ির ফিটনেস নিয়মিত চেক করার পাশাপাশি চালকরা যেন হেল্পারকে গাড়ি চালাতে দিতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতেও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন প্রান্ত থেকে গতকাল বুধবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ঢাকা এয়ারপোর্ট মহাসড়কে শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাসের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। অ্যাক্সিডেন্ট অ্যাক্সিডেন্টই। দোষ কার সেটা পরে দেখা যাবে।ৃঅনেক অ্যাক্সিডেন্ট এভাবে হয়, ধাক্কা লাগল পড়ে গেল। ড্রাইভারের মনে একটা ভয় থাকে। যদি আমি গাড়ি থামাই আমাকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলবে। ‘সেই ভয়ে সে গাড়ি চালিয়ে যায়। আর যে পড়ে যায়, সে হয়তো বেঁচে যেত। কিন্তু ভীত হয়ে যখন গাড়ি চালিয়ে যায়, চাকার তলে সে সম্পূর্ণ পিষ্ট হয়ে যায়। একটা মানুষের জীবন চলে যায়।’
দোষ কার সেটা খতিয়ে দেখা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু হলে যারা ড্রাইভারকে ধরে পেটাবেন, গাড়িতে আগুন দেবেন, গাড়ি পোড়াবেন- এটা কিন্তু ঠিক না। আইন কেউ হাতে তুলে নেবেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, সেটা তারাই দেখবে, আইনগত কী ব্যবস্থা নেয়া যায়।’

পথচারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা প্রবণতা আছে। কোনো একটা অ্যাক্সিডেন্ট হলেই সবার আগে গাড়ির ড্রাইভারকে ধরে পেটানো হয়। এমনকি অনেক সময় গণপিটুনি দিয়ে তাকেই মেরেই ফেলা হয়। হত্যা করা হয়। যখন একটা দুর্ঘটনা ঘটে, আমার এটা অনুরোধ থাকবে সবার কাছে যে সেই দুর্ঘটনা কেন ঘটল, কী কারণে ঘটল, কার দোষে ঘটল সেটা বিবেচ্য বিষয়। সেটা খুঁজে দেখা দরকার।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে সবার জ্ঞান থাকা দরকার। সেটা মেনে চলা দরকার। ট্রাফিক রুল সবাই মেনে চলবেন, মোবাইল ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে বলতে ওই সড়ক দিয়ে চলা বা রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটা বা রেল লাইন পার হওয়া বা সড়ক পার হওয়া- এটা কখনও কেউ করবেন না। এটা বন্ধ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে অবশ্যই দেখবে দোষটা কার। প্রায় ছাত্ররা মারা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় কানে মোবাইল ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে বলতে চলছে, অথবা রাস্তা ছেড়ে দিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটা শুরু করেছে। যখন একটা যানবাহন চলাচল করে, সেই যানবাহনটার পক্ষে সঙ্গে সঙ্গে ব্রেক কষা সম্ভব হয় না। এটা যান্ত্রিক বিষয়, এটা মাথায় রাখা দরকার।’
এ সময় গাড়ির চালক ও হেল্পারদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি যে চালকরা দীর্ঘসময় গাড়ি চালালে অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে, অনেক সময় ঝিমিয়ে পড়ে, সেটা হয়। সেজন্য আমরা এখন থেকে হাইওয়েগুলোতে চালকদের জন্য বা যারা যাত্রী তাদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ সুনির্দিষ্ট দূরত্বের মাঝে একটি করে বিশ্রামাগার বা সার্ভিস স্টেশন থাকবে এবং চালকদের প্রশিক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘ড্রাইভাররা যদি ক্লান্ত হয় সেটা তারা বলতে পারেন বা কিছুক্ষণ গাড়ি থামাতে পারেন।
‘কিন্তু ড্রাইভার পাশে বসে বা রেস্ট নিতে গিয়ে হেল্পারকে দিয়ে গাড়ি চালানো, যার কোনো ভারী যান চালানোর মতো দক্ষতা নেই, তাকে দিয়ে চালানোটা ঠিক না। এটা খুব অন্যায় কাজ। এ বিষগুলোর দিকে সবাই দৃষ্টি দিলে, বিশেষ করে যারা পথচারী তারা যদি সতর্ক থাকে তাহলে কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট অনেক কম হবে।’ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় চলাচলের সময় অবশ্যই ট্রাফিক রুল মানতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে আমি বলব, প্র্রতিটি স্কুল কলেজে ট্রাফিক রুল সম্পর্কে একেবারে ছোট্ট বেলা থেকে শিক্ষা দেয়া উচিত। প্রত্যেক স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে এই ব্যবস্থা নিতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত আমাদের শিক্ষামন্ত্রণালয়কে বলব, আপনারা এ বিষয়ে উদ্যোগ নেন। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই নির্দেশটা দেবেন। তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কমবে। তা ছাড়া আমাদের যানবাহনগুলো, ভারী যানবাহনগুলো বাস ট্রাক সেগুলোতে যান্ত্রিক ত্রুটি আছে কিনা সবসময় পরীক্ষা করতে হবে। এ বিষয়টি সবাই নজরে রাখবেন।’
করোনা নিয়ে সতর্কতা: করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ বা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করব, সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। মাস্ক পরে থাকবেন। দ্রুত যেন এটা ছড়াতে না পারে কিছু নির্দেশনা ইতোমধ্যে আমরা দিয়েছি, সেগুলো মেনে চলবেন। সেটাই আমরা চাই।’

আর তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন: এ সময় সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ মহাসড়ক, কক্সবাজারের বালুখালী থেকে বান্দরবানের ঘুনধুম সীমান্ত সংযোগসড়ক এবং রাঙামাটির নানিয়ারচরে চেংগী নদীর ওপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতুরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সড়কের মাধ্যমে অর্থাৎ যোগাযোগের ব্যবস্থা নিচ্ছি। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গেও আমরা বাংলাদেশকে সংযুক্ত করতে চাচ্ছি।’ তারই অংশ হিসেবে কক্সবাজারের বালুখালী হতে বান্দরবানের ঘুনধুম সীমান্ত সংযোগসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এই সড়কটি এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত বিধায়, আন্তর্জাতিক এই সড়কটি অন্যান্য সড়ক-মহাসড়ক থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পরবর্তী সময়ে আপনারা জানেন যে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটে। সেই সময় এর কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়।’ তারপরও নির্ধারিত সময়ে সফলভাবে কাজটি সমাপ্ত হয়েছে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপন করবে সড়কটি। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে। ফলে স্থানীয় জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। কর্মসংস্থান হবে। আয় বৃদ্ধিতে সড়কটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।’ ‘সড়কটি সীমান্ত সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে’ বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
পুরো সীমান্ত অঞ্চলে সড়ক নির্মাণের প্রকল্প চলমান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশটাকে নিরাপদ রাখতে চাই। আগে এখানে বিওপি খুব বেশি ছিল না। আমরা এখানে নতুনভাবে বিওপি স্থাপন করেছি। সীমান্ত সড়ক হয়ে গেলে সীমান্ত রক্ষা আরও সহজ হবে।’ রাঙামাটির নানিয়ারচরে চেংগী নদীর ওপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে পার্বত্য এলাকার যোগাযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণের নতুন দিক উন্মোচিত হলো বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের পথও আমরা আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com