জুমার দিন সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। মুমিন মুসলমানের ঈদের দিন। হাদিস শরিফে জুমার দিনকে সাইয়িদুল আইয়াম তথা দিনসমূহের সর্দার বলা হয়েছে। জুমার দিন আল্লাহ তায়ালার কাছে অন্য দিনসমূহের তুলনায় বড়। ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর থেকেও জুমার দিন আল্লাহ তায়ালার কাছে বড়।
জুমার দিন বিশেষ মর্যাদাবান ও তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো- এ দিনে বিশেষ একটি বরকতময় সময় এমন আছে, বান্দা তখন কল্যাণের যা-ই দোয়া করে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন।
রাসূল সা: প্রশ্ন করলেন, এতে জুমার দিনে আমাদের জন্য কী আছে? হজরত জিবরাইল আমিন বলেন, এতে এমন এক সময় রয়েছে, সে সময় কেউ নিজের কোনো নেক মাকসুদ পূরণের জন্য দোয়া করলে তা নিঃসন্দেহে কবুল হয়। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, চতুর্থ খ-, ১৫৫-নং পৃষ্ঠা)
হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেন, ‘অবশ্য জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে তখন কোনো মুসলিম বান্দা আল্লাহর কাছে কল্যাণকর কিছু কামনা করলে অবশ্যই তাকে তা দেয়া হয়’ (বুখারি, মুসলিম)।
জুমার নামাজ আদায়ের ব্যাপারে গুরুত্ববান হলেও জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সেই বিশেষ সময়টি সম্পর্কে আমরা যারপরনাই উদাসীন ও গাফেল। অথচ দোয়া কবুল হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের সর্ব সময়ের বাসনা থাকে। প্রতিটি মুমিন মুসলমান চায় মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে তার সব চাওয়া-পাওয়া পূরণ হোক।
জুমার দিনে দোয়া কবুলের বিশেষ সময় কোনটি- তা নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। দোয়া কবুল হওয়ার সেই বিশেষ সময়টি কোনটি তা নিয়ে একাধিক উক্তি রয়েছে। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হজরত আবু মূসা আশয়ারি রা: থেকে বর্ণিত- ইমাম যখন খুতবার জন্য মিম্বরে আসেন তখন থেকে শুরু করে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বান্দা আল্লাহর কাছে কল্যাণকর যা কিছু কামনা করে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা দান করেন।
হজরত আবু হুরায়রা রা: সূত্রে বর্ণিত- মুয়াত্তার এক রেওয়ায়েতে আছে, জুমার দিন আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা তা অবশ্যই কবুল করেন। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যাতে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায় আল্লাহ তাই দেন। অতএব তোমরা আসরের শেষ সময়ে তা তালাশ করো’ (সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ি)
আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা: বর্ণনা করেন, শুক্রবারে আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়। সিরাতগ্রন্থ যাদুল মাআদে বর্ণিত- জুমার দিন আসরের নামাজ আদায়ের পর দোয়া কবুল হয়। (যাদুল মাআদ-২/৩৯৪) সূর্য ডোবার আগ মুহূর্তে। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘জুমার দিনের ১২ ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এ মুহূর্তটি তোমরা আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো’ (সুনানে আবু দাউদ )।
হজরত আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, নবী সা: বলেন, জুমার দিন একটি সময় আছে; যখন কোনো মুসলিম বান্দা আল্লাহর কাছে কোনো কল্যাণ চাইলে, তিনি তাকে তা অবশ্যই দেবেন। আর সেটি হলো আসরের পর’ (বুখারি, মুসনাদে আহমাদ)।
সুতরাং আমাদের উচিত, জুমার দিন আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টিকে খুব গুরুত্ব দেয়া। বেশি বেশি দোয়া-দরূদ পড়া। যদি আমার সব চাওয়া-পাওয়া দোয়া কবুল হওয়ার ওই মুহূর্তের মধ্যে পড়ে যায় তাহলে এর চেয়ে সৌভাগ্যের আর কি-ই বা থাকতে পারে! আল্লাহ তায়ালা আমাদের কবুল করুন। আমীন। লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ, হাটহাজারী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।