নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামীকাল রোববার। সাধারণ ভোটাররা ভোটরে আমেজেই রয়েছেন। তবে আতঙ্কে রয়েছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের নির্বাচনী এজেন্টরা। তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থককেও নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তৈমূর আলম খন্দকার অভিযোগ করেছেন, পুলিশ আমার নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে। আমাদের জেলা তাঁতী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শিমুল জানিয়েছে তার বাড়িতে পুলিশ গিয়েছে। মৎস্যজীবী দলের সভাপতি আনোয়ার প্রধানকে আটক করা হয়েছে। এমন অনেক নেতাকর্মী অভিযোগ করছেন। এমনকি সরকারি দলের যারা নৌকার পক্ষে নামেননি তাদেরও হয়রানি করা হচ্ছে। তৈমূরের কর্মীদের ধরপাকড়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, ‘কোথায় বা কাদের আটক করা হচ্ছে সে তালিকা দিতে বলুন। তালিকা দিতে পারলে যাচাই করে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। অপর দিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, আমি জানি না কাকে কোথায় ধরা হচ্ছে। আমি শুধু শুনেছি, বিএনপির এক নেতাকে ধরা হয়েছে তার নামে হেফাজতের ঘটনার মামলা ছিল। আর কাকে ধরা হয়েছে এটা আমি জানি না, জানার বিষয়ও না। এটা প্রশাসন দেখবে।
সিংহভাগ প্রার্থীই স্কুলের গ-ি পেরোননি: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে সিংহভাগই স্কুলের গ-ি পেরোতে পারেননি। ১৮৬ জন প্রার্থীর মধ্যে সিংহভাগের শিক্ষাগত যোগ্যতাই (১২০ জন বা ৬৪.৫২%) এসএসসি বা তার নিচে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই হার ছিল ৭১.৬৪%। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি। সুজন কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদের সভাপতিত্বে এবং সমপাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। সুজন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুজন সহ-সভাপতি হামিদা হোসেন, সহ-সমপাদক জাকির হোসেন, সুজন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক সিকান্দার খান, প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম, ফারুক মাহমুদ চৌধুরী ও ড. শাহনাজ হুদা। এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সুজনের সমপাদক ধীমান সাহা এবং ময়মনসিংহ সুজনের সহ-সমপাদক এডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন উপস্থিত ছিলেন।
দিলীপ কুমার সরকার প্রার্থীদের তথ্য তুলে ধরে বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে দেখা যায় ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনের (৪২.৮৬%) শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ও ৩ জনের (৪২.৮৬%) স্নাতক। বাকি ৩ জনের মধ্যে ১ জন (১৪.২৯%) এসএসসি সমমান। ১৪৬ জন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে ৭৪ জনের (৫০.৬৮%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি’র নিচে। ১৮ জনের (১২.৩৩%) শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি এবং ১৮ (১২.৩৩%) জনের এইচএসসি। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ২৫ (১৭.১২%) ও ৩ জন (২.০৫%)। কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে এসএসসি’র গ-ি অতিক্রম না করা প্রার্থীর সংখ্যা ২০ জন (৬০.৬১%)। ৭ (২১.২১%) জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি এবং ৩ (৯.০৯%) জনের এইচএসসি। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ২ (৬.০৬%) ও ১ জন (৩.০৩%)। বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, সর্বমোট ১৮৬ জন প্রার্থীর মধ্যে সিংহভাগের শিক্ষাগত যোগ্যতাই (১২০ জন বা ৬৪.৫২%) এসএসসি বা তার নিচে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই হার ছিল ৭১.৬৪%। পক্ষান্তরে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ৩৭ (১৯.৮৯%) জন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই হার ছিল ১৪.৯২%। পেশার বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সর্বমোট ১৮৬ জন প্রার্থীর মধ্যে শতকরা ৭৫.৮১% ভাগই (১৪১ জন) ব্যবসায়ী। ৩ জন মেয়র প্রার্থীকে ব্যবসায়ী হিসেবে ধরলে এই হার দাঁড়ায় ৭৬.৩৪% (১৪২ জন)। মামলার ক্ষেত্রে দেখা যায়, তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সর্বমোট ১৮৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪৬ জনের (২৪.৭৩%) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৩৬ জনের (১৯.৩৫%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ২০ জনের (১০.৭৫%) বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা আছে বা ছিল। ৩০২ ধারায় ৯ জনের (৪.৮৪%) বিরুদ্ধে বর্তমানে এবং ৮ জনের বিরুদ্ধে (৪.৩০%) অতীতে এবং ১ জনের (০.৫৪%) বিরুদ্ধে উভয় সময়ে মামলা আছে বা ছিল। বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১৮৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৯৯ জনের (৫৩%) বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকার কম এবং ৫৭ জনের (৩১%) ৫ লাখ টাকার অধিক। ৫০ লাখ টাকার অধিক আয় করেন ৩ জন (২.%)। উল্লেখ্য, মোট ২২ জন (১২%) প্রার্থীর আয়ের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সমপদের ক্ষেত্রে ১৮৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫৮ জন (৩১.১৮%) ৫ লাখ টাকার কম সমপদের মালিক। কোটিপতি রয়েছেন মোট ১৪ জন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রার্থী প্রদত্ত হলফনামার ছকে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, অনেক প্রার্থী তাও সমপূর্ণভাবে পূরণ করেন না। কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে হলফনামা যাচাই-বাছাই করা; কোনো তথ্য অসমপূর্ণ বা মিথ্যা প্রমাণিত হলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলও করতে পারে কমিশন। কমিশনকে তার এ দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় না। তিনি আরও বলেন, তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের কোনো সহযোগিতাও আমরা পাই না। আগে প্রার্থীদের আয়কর সংক্রান্ত তথ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে পাওয়া যেত, কিন্তু গত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে আয়করের কোনো তথ্য কমিশন ওয়েসাইটে দিচ্ছে না। এ আচরণের মাধ্যমে কমিশন কার স্বার্থে কাজ করছে? -প্রশ্ন রাখেন তিনি।