তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদী বেষ্টিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ চর। সময়ের সঙ্গে নদীর ভাঙা-গড়ার খেলায় কখনো চর জাগে আবার বিলীন হয়। একসময় এসব চরে গম, ভুট্টা, খেসারি কলাই, মুগকলাই, কাউন, মরিচ, পেয়াজসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হত। এখনও এসব ফসল চাষ করা হয় তবে কম। জলবায়ু পরিবর্তন আর সময়ের সঙ্গে জমিতে বদলেছে ফসলের চাষাবাদ। গম ও কাউনের ফলন কমে গেছে। এখন তাই চরাঞ্চলের কৃষকেরা ঝুঁকেছেন ভুট্টা চাষে। চাহিদার আধিক্য, স্বল্প ব্যয়ে বেশি ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন তাঁরা। চরের ফসলের তালিকায় ভুট্টা যেন ‘সোনা’ হিসাবে পরিচিত। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা যায়, কৃষির সাথে যুক্ত এসব মানুষকে প্রতিবছরই বন্যার সঙ্গে লড়তে হয়। তখন বসতভিটা ছেড়ে অনেককেই চলে যেতে হয় অন্য জায়গায়। পানি নেমে যাওয়ার পর শুরু হয় ধীরে ধীরে আবাদ। বন্যার কারণে সাধারণত বছরে দুই ফসলের বেশি আবাদের সুযোগ পায় না এসব চরাঞ্চলের মানুষ। চরের জমিতে নানা ফসলের আবাদ করে থাকেন তারা। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি চাষ হয় ভূট্টার। চরাঞ্চলের চাষিরা এখন ভুট্টা চাষে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্নের এই ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন তারা। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন এ চরাঞ্চলের চাষিরা। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর আবহাওয়া ভাল ও রোগবালাই কম থাকায় ফলনও ভাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার উপজেলায় ৪ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৪৬৮ হেক্টর। নদ-নদীবিধৌত এ উপজেলার চরাঞ্চলের মাটি ভুট্টাচাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম হয়েছে। উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের তালুক বেলকা গ্রামের চাষি মো. আবুল কালাম মন্ডল বলেন, ‘অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম হওয়ায় জমিতে ভুট্টা চাষ করি। এতে বেশি লাভবান হওয়া যায়। আমি পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা হয় ৩০ থেকে ৩৫ মণ। ভুট্টা চাষে সেচ কম লাগে, সারের ব্যবহারও কম। আবহাওয়া ভালো থাকলে গত বছরের মতো এবারও ভুট্টার বেশি ফলন হবে।’ বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আয়নাল মিয়া বলেন, ‘বালি মাটিতে ভুট্টার ফলন বেশ ভালো হয়। একসময় জমিতে আমার দাদা ফলাতেন কাউন। বাবা গম আর এখন আমি ভুট্টার চাষাবাদ করছি। ভুট্টা চাষের ফলে আমরা গত পাঁচ বছরে অনেক লাভবান হয়েছি। পাইকাররা বাড়িতে আসে ভুট্টা কিনতে। বিক্রি করতেও কোনো সমস্যা হয় না।’ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জামিউল ইসলাম সরকার বলেন, ‘ভুট্টা চাষ বাড়াতে কৃষকদের সরকারি খরচে প্রদর্শনী দিয়ে আসছে। এছাড়াও সরকারি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। কৃষকদের ক্ষেত পরিদর্শন ও উদ্বুদ্ধকরণসহ সব ধরনের সহযোগিতায় আমরা মাঠে নিরলসভাবে কাজ করছি।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাশিদুল কবির বলেন, ‘কৃষি ফসল হিসাবে ভুট্টা খুবই লাভজনক। চরাঞ্চলে এই ফসলের চাষ দিন দিন বাড়ছে। এই চাষে সরকারিভাবে কৃষকদের প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছেন।’