দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ। একদিকে করোনা ভাইরাস অন্য দিকে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া সকালে মানুষের দেখা পাওয়া দায়। বরিশালে যেমন কুয়াশা তেমন হাড় কাঁপানো শীত। এমন শীতে চাহিদা কমছে কৃষি শ্রমিকের। বাজারদরও মন্দা। একদিন কাজ পেলে তিন দিন দেখা নেই কাজের। ফলে কুয়াশা আর শীতে মন্দা যাচ্ছে শ্রমিক বেচা-কেনার হাটে। রবিবার ভোর থেকে সাড়ে সকাল ৮টা পর্যন্ত এমন অভিমত ব্যক্ত করেন বরিশাল নগরীর সাগরদী ও নতুন বাজার শ্মশান পোলের নিচে বসে শ্রম কেনাবেচার হাট। ‘তীব্র শীত’ সূর্যের দেখা না পেলেও শীতে কাঁপতে কাঁপতে আয়ের সন্ধ্যানে রাস্তারর পাশে একদল মানুষের হাকডাক চলছে। শুধু সাগরদী নয়। নগরের রুপাতলী সড়ক ,মরগখোলার পুল, চকের পোল, কাশিপুর বাজার, কালিজিরা বাজারসহ নগরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায় একদল মানুষ গুলোর কারও হাতে কাস্তে-কোদাল, ভেলচা, কারও হাতে বাঁশের ঝুঁড়ি, কারও হাতে দড়ি, পানি রাখার ড্রাম, কারও হাতে হাতুরী, চিরা শ্যাপল, আর কাঠ দিয়ে বানানো ভারি জিনিস টানার বাহন ও গুলো তাদের সরঞ্জাম। তবে মূল যা নিয়ে তারা এখানে বসেছেন তা তাদের শরীর। কেউ লম্বা, কেউ বেটে। কেউ সুস্থ্য-সবল, কেউ রোগা-পাতলা। ওটাই মূলত বিক্রি হয়। বরিশাল নগরের পলাশপুর এলাকার দিন খেটে খাওয়া শাহিন বলেন, ১৫ বছর ধরে নিয়মিতভাবে চকের পোল ও এলাকায় শ্রমিকের হাটে আসি মুই। যখন যে কাম পাই সেটাই করি। যেমন ইট টানি, বাড়ি ঘর পরিস্কার করি, নতুন বাড়ি করে যারা তাদের সাথে লেবারি কাজ করি, ধানের সৃজন আসলে দূরে ঘিরে কৃষকের কাজও করে থাকি পলাশপুর ধান গবেষনার মধ্যে। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে আরো বলেন, স্যার একদিন কাম না করলে ছেলে-মেয়েরা না খেয়ে থাকে। বড় মেয়ে আলেকান্দা কলেজে পড়ে। আর ছোট মেয়ে এলাকার সকারী একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে পড়ে। দুই মেয়ের পড়াশুনার জন্য প্রতিমাসে তাদের পিছনে প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। গায়ে জ¦র তার পরও আজ কাজের সন্ধ্যানে আসলাম। কাজ করে বাসায় চাল নিমু তার পরে রান্না করবে। অন্যদিকে ছোট মেয়েকে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি করা লাগবে। তাই কি আর করবো। কাজের সন্ধানে প্রতিদিনের মত আজও আসলাম। এদিকে কালিজিরা ব্রীজের নিচে বাজারে আসা বয়স্ক আলী বলেন, সংসারে আমার এক মেয়ে আর স্ত্রী ছাড়া কেউ নাই। তাই ব্যুরো বয়সেও খেটে খেতে হচ্ছে। একদিন কাজ না হলে বাড়ির সবাই না খেয়ে থাকে। শীতের সময় কৃষি জমিসহ অন্যান্য জমিতে কাজের জন্য বেশ চাহিদা থাকে আমাদের গ্রামে। কি আর করবো ঠান্ডার মধ্যেও কাপতে কাপতে ধান ধাওয়ার সহ কৃষি কাজ করতে হয় মোর। তবে বরিশাল নগরে গত সপ্তাহ থেকে শ্রমিকের চাহিদা একেবারে নেই বললেই চলে। একদিন কাজ পেলে তিন দিন অলস সময় পার করতে হচ্ছে শ্রমিকদের। হাড় কাপানো শীতের কারণে শ্রমিকের বাজার মন্দা যাচ্ছে বলে জানান বেশ কিছু শ্রমিকরা। এছাড়াও লক্ষ্য করা গেছে, হাড় কাঁপানো শীতের কারণে শ্রমিক বেচা-কেনার হাটে শ্রমিকের চাহিদা কম। তার মধ্যে এক সপ্তাহ ধরে খুব ঠান্ডা পড়ছে। এক কথায় বলা যাচ্ছে বরিশালে হাড়-কাপানো শীত এসেছে। শ্রমিকের দৈনিক পারিশ্রমিক ৬০০ টাকা থেকে এখন ৪০০ টাকায় চলছে। তবুও কাজ পাচ্ছেন না অধিকাংশ শ্রমিকরা। কাজ না পেলে অনাহারে অর্ধাহারে সময় কাটাতে হয় তাদের। তাই বাধ্য হয়েই কম টাকাতেও কাজে যাচ্ছেন অনেকে শ্রমিক। নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে কাজের সন্ধানে প্রতিদিন আসে শতাধিকেরও চেয়ে বেশি পুরুষ-মহিলা শ্রমিক। অনেকেরই রয়েছে আশা, ব্রাক, গ্রামীন শক্তি, পল্লী, ব্যুরো বাংলাদেশসহ একাধীক মাল্টিপারপাসে কাছ নেওয়া লোন। কাজ হোক আর নাই হোক সপ্তাহিক কিস্তিতে নেই কোন মাপ। কিস্তি না দিতে পারলে শুনতে খারাপ কথা। এবং অনেক বাড়ি ঘরে থাক মালামাল বিক্রি করেও দিতে হচ্ছে কিস্তির টাকা। এযেন দেখার কেউই নেই। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত নগরে ওই পয়েন্ট গুলোতে জমজমাট থাকে শ্রমিকের বেচাকেনা। প্রয়োজন অনুযায়ী চলমান বাজারদরে এসব এলাকা থেকে সহজেই দৈনিক মজুরিতে নগরের বিভিন্ন জায়গায় কাজে যান তারা। এ এক নিত্যদিনের চিত্র। বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে বরিশালে প্রচুর ঠান্ডা পড়ছে। তার মধ্যেও দিন খেটে খাওয়া মানুষ গুলো আয়ের উদ্দ্যেসে কুয়াশার মধ্যে কাজের খোঁজে বের হচ্ছে। কারন তারা কাজ না করলে না খেয়ে থাকবে তার পরিবারের সদস্যরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দিন খেটে খাওয়া এই মানুষ গুলোর দিকে নজর নেওয়া খুবই প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।