মানুষকে খুশি করা কঠিন। আর ধারাবাহিকভাবে খুশি রাখা আরো কঠিন। আমরা কত কষ্ট করি মানুষকে খুশি করার জন্য। অনেকে বউকে খুশি করার জন্য পরিবার ছাড়ে। কিন্তু দেখা যায় ১০-১৫ বছর সংসার করার পর সেই বউও চলে গেছে। এরকম ঘটনা আমাদের চার পাশে অহরহ ঘটছে নিয়মিত। পুরুষও অনেক সময় মেয়েদের প্রতি অবিচার করে বসে। একজন মেয়ে স্ত্রী হয়ে নিজের বাবা-মা, চেনা পরিবার-পরিবেশ ছেড়ে স্বামীর ঘরে আসে। ১০-১৫ বছর সংসারকে তিলে তিলে গড়ে তোলে। সংসারের কষ্টের দিনগুলো ভাগাভাগি করে। কিন্তু এর পরেও দেখা যায় ১০-১৫ বছর সংসার করার পর স্বামী আরো একটা বিয়ে করে এনেছে। এরকম ঘটনা ঘটে না আমাদের সমাজে? অবশ্যই ঘটে।
সুতরাং আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারে বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, নেতা-নেত্রীদের খুশি করা অনেক কঠিন। আর খুশি রাখা তো আরো কঠিন। কিন্তু আল্লাহকে খুশি করা যেমন সহজ খুশি রাখাও তেমন সহজ। সেটা কিভাবে?
খুব ভালো করে বুঝুন। আপনার বসকে খুশি রেখেছেন, বন্ধু-বান্ধবী, প্রতিবেশী, কলিগ, আত্মীয়কে খুশি রেখে চলছেন। কিন্তু একটু অন্যায় হলেই তারা রেগে যাচ্ছে। এমনকি বাবা-মাকে খুশি রেখেই চলছেন তার পরও অন্যায় হলে মা-বাবাও রেগে যাচ্ছে। তাই না? এরকমই ঘটছে প্রতিনিয়ত আমাদের চার পাশে। এত আদরের স্বামী; কিন্তু ভাত-তরকারি রান্না একদিন খারাপ হয়েছে বলে গালাগাল করছে। এত আদরের বউ কিন্তু একদিন একটা অন্যায় কথা বলে ফেলেছে বা কোনো বিষয়টিতে একটু দ্বিমত হয়েছে; রাগারাগির শেষ নেই। এরকম হয় না কি হয় না? অবশ্যই হয়। সবার জীবনেই এরকম হয়।
পক্ষান্তরে আল্লাহতায়ালা বান্দাকে কত ভালোবাসেন। রাসূল সা: বলেন, ‘বান্দা যখন গোনাহ করে; আল্লাহ ফেরেশতাদের শিখিয়ে দেন; তোমরা গুনাহটা সাথে সাথে লিখ না। সারা দিন অপেক্ষা করো; দিনের মধ্যে যদি তওবা করে তাহলে আর গোনাহ লিখো না। আল্লাহ রাতে বেলায় বান্দাকে আহ্বান করে বলে, হে আমার বান্দা, তুমি গোনাহ করেছ; এখন গভীর রাত কোনো মাধ্যম দরকার নেই তুমি শুধু আমার কাছে তওবা করো আমি তোমার গোনাহ ক্ষমা করে দেবো। আল্লাহ দিনের বেলায় বান্দাকে আহ্বান করেন, বান্দা তুমি রাতে গুনাহ করেছ কেউ দেখেনি আমি দেখেছি। দিনে তুমি ক্ষমা চাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো।’
তওবা মানে কি? তওবা মানে পীর সাহেব বা কোনো হুজুরের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। তওবা মানে কোনো বিশেষ বাক্যও না। তওবা মানে মনের ভেতর গভীর অনুতাপ; আল্লাহ আমি তো অন্যায় করেছি; আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর কখনো গুনাহ করব না এই সিদ্ধান্ত নিলাম। এটাই তওবা।
এবার বলুন তো আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করা কঠিন না-কি সহজ? অবশ্যই আল্লাহকে খুশি করা সহজ। তাই আসুন আমরা পৃথিবীর কারো খুশি দেখার আগে আমার আল্লাহর খুশির বিষয়কে সামনে রাখি। যে কাজে আল্লাহ খুশি হন না তা আমরা অন্যা কারো খুশির জন্য করব না। আমার নেতা যে কাজে খুশি হয় তা যদি আল্লাহ ও রাসূলের পন্থার বিরুদ্ধে যায় তাহলে সেই কাজ আমরা করব না। নিয়মিত আমরা আল্লাহকেই খুশি করব। কারণ আমার জীবন আমার জীবিকা সবই আমার রবের হাতে। একমাত্র তিনিই আমাকে সুখে রাখতে পারেন। আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।
(মরহুম অধ্যাপক খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহি:’র আলোচনা থেকে অনুলিখন সাইফুল্লাহ হিমেল)