আল্লাহ তায়ালা মানব সমাজকে সৃষ্টি করে তাদেরকে বিভিন্ন বন্ধনে বেঁধে দিয়েছেন। তন্মধ্যে অন্যতম হলো আত্মীয়তার বন্ধন। আত্মীয়তার বন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্ধন। আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখলে যেভাবে নেকি রয়েছে, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর জন্যও রয়েছে ভয়াবহ জাহান্নামের শাস্তি।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, ‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহ তায়ালা এদেরকেই করেন অভিশপ্ত, বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন।’ (সূরা মুহাম্মাদ : ২২-২৩)
তেমনিভাবে আল্লাহ তায়ালা কুরআনের অন্য আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘যারা আল্লাহ তায়ালাকে দেয়া দৃঢ় অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণœ রাখতে আল্লাহ তায়ালা আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের জন্য রয়েছে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্যই রয়েছে মন্দ বাসস্থান।’ (সূরা রা’দ-২৫)
আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার জন্য রাসূলুল্লাহ সা: আমাদেরকে উৎসাহিত করেছেন এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীদের জন্য ভয়াবহতার কথা বর্ণনা করেছেন।
হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহুল বুখারি, হাদিস নং-৫৯৮৪) অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে (আল্লাহ তায়ালার কাছে) উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন বিচ্ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস-১০২৭৭)
অন্যান্য অপরাধের শাস্তি মহান আল্লাহ শুধু আখিরাতে দিলেও, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর শাস্তি দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জায়গায় দিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘দুটো গোনাহ ছাড়া এমন কোনো গোনাহ নেই যে গোনাহের শাস্তি আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেই দেবেন এবং তা দেয়াই উচিত; উপরন্তু তার জন্য আখিরাতের শাস্তি তো আছেই। গোনাহ দুটো হচ্ছে- অত্যাচার ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী।’ (জামেউত তিরমিজি, হাদিস-২৫১১) তা ছাড়া কেউ আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলে আল্লাহ তায়ালা ও তার সাথে নিজ সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিকুল সৃজন শেষে আত্মীয়তার বন্ধন (দাঁড়িয়ে) বলল, এটিই হচ্ছে সম্পর্ক বিচ্ছিন্নতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। আল্লাহ তায়ালা বললেন, হ্যাঁ, ঠিকই। তুমি কি এ কথায় সন্তুষ্ট নও যে, আমি ওর সাথেই সম্পর্ক স্থাপন করব যে তোমার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবে এবং আমি ওর সাথেই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করব যে তোমার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে। তখন সে বলল, আমি এ কথায় অবশ্যই রাজি আছি হে আমার রব! তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, তা হলে তোমার জন্য তাই হোক।’ (সহিহুল বুখারি, হাদিস-৪৮৩০)
আমাদের সমাজের অবস্থা এমন হয়েছে যে, আমাদের ধনী আত্মীয়দেরকে আমরা দাওয়াত করি এবং তাদের সাথে যোগাযোগ রাখি। কিন্তু আত্মীয় গরিব হলে আমরা তাদের কোনো খোঁজখবর নেই না। এমনকি গরিব আত্মীয়ের দাওয়াত গ্রহণে আমাদের মন সায় দেয় না। নিঃসন্দেহে এটি মারাত্মক গোনাহের কাজ। অথচ গরিবদের জন্য রাসূলুল্লাহ সা: সহজে জান্নাতে প্রবেশের সুসংবাদ দিয়েছেন। গরিব ধনীদের ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দান করুন।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফাতওয়া ও ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ, মারকাযুল বুহুস আল ইসলামিয়া আফতাবনগর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২