কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার ১ হাজার ১০০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রোববার বিকেলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। এর আগে গত সোমবার বিকেলে একই আদালত দুইজনের মৃত্যুদ-, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কক্সবাজার দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আদালতের সাত কর্ম দিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রায় লাল কাপড়ে মুড়িয়ে হাইকোর্টে পাঠানো হবে।
ওসি প্রদীপের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহিউদ্দীন খান বলেন, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার ১১’শ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আর পুরো রায়টি লেখা হয়েছে বাংলায়। বোরবার সন্ধ্যায় আদালত থেকে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি থেকে মামলার-সার্টিফাইড-কপি সংগ্রহ করা হয়েছে। ওসি প্রদীপের আইনজীবীদের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সমীর দাশগুপ্ত বলেন, কোনোভাবেই রাষ্ট্রপক্ষ আমার (ওসি প্রদীপ) বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি। এরপরেও যেহেতু আদালত রায় দিয়েছেন, ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছিলাম, সেটা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে ন্যায়বিচার জন্য আপিল করা হবে।
প্রধান দুই আসামির মৃত্যুদ- হওয়ায় প্রত্যাশাপূরণ হয়েছে উল্লেখ করে সিনহার বোন ও মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, সাতজনকে একেবারে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। সেখানে আমার কাছে মনে হয়েছে, সেটা তো সম্ভব না। দায়বদ্ধতা তো কেউ এড়াতে পারে না, সে ক্ষেত্রে হয়তো তাদের কিছু সাজা হলেও হতে পারতো। তখন প্রত্যাশাটা আরেকটু বেশি পূরণ হয়েছে বলা যেত। আর সন্তুষ্টির কথা যদি বলেন, সন্তুষ্ট সেদিনই হবো যেদিন এটা কার্যকর হবে। আদালত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে রায় দিয়েছেন। আমাদের প্রত্যাশা অনেকখানি পূরণ হয়েছে, সন্তুষ্টির জায়গাটা সেদিন বলব যেদিন এটা কার্যকর হবে। এইদিকে, মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। গত শনিবার দুপুরে কক্সবাজার কারাগার থেকে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত প্রদীপ কুমার দাশ ও মো. লিয়াকত আলীকে বিশেষ ব্যবস্থায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছিল। বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেমড সেলে রাখা হয়েছে। তারা কয়েদির পোশাকে থাকবেন সারাক্ষণ।
মৃত্যুদ-প্রাপ্ত লিয়াকত আলীর বাড়ি পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হুলাইন গ্রামে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। ওই গ্রামের মৃত মো. সাহাব মিয়ার ছেলে লিয়াকত ২০১০ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে ডিবি, পরে সোয়াত ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটে কাজ করেন তিনি। তিন বছর আগে পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান এবং টেকনাফ থানায় যোগদান করেন। লিয়াকত চন্দনাইশ উপজেলায় বিয়ে করেন। ওই স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর বোয়ালখালীতে আরেকটি বিয়ে করেন। ওই ঘরে তার এক ছেলে রয়েছে। ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন প্রদীপ। ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পান। বাড়ি বোয়ালখালীর সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর কঞ্জুরী গ্রামে। বাবা হরেন্দ্র লাল দাশ ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) নিরাপত্তা প্রহরী।