দীর্ঘ ১০ মাস ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে মারা গেলেন জামালপুর জেলার বিশিষ্ট সাংবাদিক দুলাল হোসাইন। মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সাংবাদিক দুলাল হোসাইনের বড় ছেলে সাংবাদিক সাইমুম সাব্বির শোভন। তিনি বলেন- ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে আব্বার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এছাড়া আব্বা কিডনী জটিলতাসহ ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছিলেন। দীর্ঘদিন সাভারের এনাম মেডিকেলে ভারতীয় চিকিৎসক ডাঃ শ্রাবন কুমার চিন্নিকাটির তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য আব্বাকে ভারত নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মুম্বাইয়ের সুসরাত হাসপাতালের ডাঃ সুরেশ আদভানীর আওতায়ল চিকিৎসা গ্রহনের পর দেশে এসে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কেমোথেরাপী গ্রহন করে আব্বা। এরপর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। রবিবার রাতে শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হলে তাকে প্রথমে জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল এবং পরে সোমবার ভোরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে আনা হয়। সাংবাদিক শোভন আরো বলেন- এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আনার কিছুক্ষনের মধ্যেই কর্মরত চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোর্টে প্রেরন করেন। লাইফ সাপোর্টে থাকার পর সকাল ৯.৩০ মিনিট মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন আমার বাবা। ১৯৬৫ সালের ১০ ডিসেম্বর জামালপুর পৌর এলাকার হাটচন্দ্রা গ্রামে পিতা ইদ্রিস আলী এবং মাতা আনোয়ারা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন দুলাল হোসাইন। ৫ ভাই বোনের মধ্যে ৩য় সন্তান ছিলেন দুলাল হোসাইন। দুলাল হোসাইন ছোট বেলা ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। আর্থিক অভাবের কারনে লেখাপড়া ছেড়ে খুব কম বয়সে সংসারের হাল ধরেন দুলাল হোসাইন। তবে সম্মান ও সফলতার উচ্চ শিহরে পৌছানোর আশায় হাজারো অভাবের পরেও ১৯৮২ সালে সাংবাদিকতা পেশায় যোগদান করেন দুলাল হোসাইন। ১৯৮২ সালে পাক্ষিক জামালপুর প্রবাহ। এরপর ১৯৮৬ সালে ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক আজকের স্মৃতি। জেলা প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় পত্রিকা দৈনিক ভোরের ডাকে কাজ শুরু করেন ১৯৮৮ সালে। এরপর ১৯৯১ সালে দৈনিক সকালের খবর, ১৯৯৭ সালে দৈনিক সংবাদ এবং সর্বশেষ ২০০০ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জাতীয় দৈনিক ভোরের কাগজে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও ২০০৬ সালের ১লা ডিসেম্বর বেসরকারি টিভি বৈশাখী টেলিভিশনে জামালপুর প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করে ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াতে তার কাজ শুরু হয়। এরপর ২০০৯ সালের ১লা অক্টোবর থেকে কাজ করেন দেশ টিভিতে এবং সর্বশেষ ২০১১ সালের ১৮ই মে থেকে মৃত্যূর আগ পর্যন্ত কাজ করেছেন ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে। তার লেখনী, নির্ভীক ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার মাধ্যমে মন কেড়েছেন লাখো জামালপুরবাসীর। শুধু সাংবাদিকতায় নয়, সাংবাদিক নেতা হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন গুনী এই সাংবাদিক। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলনে সর্বদা সোচ্চার ও কঠোর ছিলেন সাংবাদিক দুলাল হোসাইন। ১৯৯১ সালে জামালপুর প্রেসক্লাবের ক্রীড়া ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন সাংবাদিক দুলাল হোসাইন। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন সময় জামালপুর প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদে জায়গা করে নিয়েছিলেন সাংবাদিক দুলাল হোসাইন। এরপর ২০০২সালে সর্বপ্রথম জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন তিনি। এরপর জামালপুর জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন দুলাল হোসাইন। এরপর ২০১৮ সালে আবারো জামালপুর প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জামালপুর প্রেসক্লাবের সহ- সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সাংবাদিক দুলাল হোসাইন বাবা, স্ত্রী, দুই মেয়ে, দুই ছেলেসহ আত্মীয় স্বজন ও অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৭ বছর।