শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বিজয় ছিনিয়ে নিতে ষড়যন্ত্র চলছে: নজরুল ইসলাম খান পতিত আ’লীগ সরকারের কবল থেকে ভিক্ষুকরাও রেহাই পায় নাই : ডা. শফিকুর রহমান জাতির মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই : তারেক রহমান ব্যবসায়ী ওয়াদুদ হত্যা: সাবেক ডিসি মশিউর সাত দিনের রিমান্ডে ভারতে ‘অবৈধ’ শেখ হাসিনা, এখন কী পদক্ষেপ নেবে ভারত দেশবাসী তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে ফোন নম্বর মুখস্থ থাকাই কাল হলো তোফাজ্জলের? আরও কিছু সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে : নাহিদ মুসল্লিদের প্রতিরোধের মুখে স্বৈরাচারী হাসিনার নিযুক্ত খতিব রুহুল আমিনের পলায়ন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া দেশের জন্য অশনিসংকেত: অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

তৈরি পোশাক শিল্প: বাংলাদেশ হাঁটছে উল্টো পথে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

পোশাক উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশ চীন। এর পরের অবস্থানটি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে রয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। তবে প্রযুক্তির কিছু ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে রয়েছে ভিয়েতনাম। যেমন দেশটির অনেক কারখানায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) প্রযুক্তি স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এর মাধ্যমে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড রালফ লরেনের পণ্য উৎপাদনের অংশীদার কারখানা দু হায় গার্মেন্ট জেএসসির কাপড়ের কাটিং ওয়েস্ট বা অপচয় ২ শতাংশ কমিয়ে আনা গেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে এ খাতে অপচয়ের হার এখনো ২৭ শতাংশ। এটি বাড়িয়ে ২৯ শতাংশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, গোটা বিশ্বেই উৎপাদন ব্যবস্থার দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টিতে জোর দেয়া হচ্ছে, যা বাস্তবায়নে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হচ্ছে। পোশাক উৎপাদনের পালেও লেগেছে প্রযুক্তির হাওয়া। চীনে উন্নত প্রযুক্তির উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে। ভিয়েতনামও চীনের পথেই হাঁটছে। এ খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে যে দেশগুলোর প্রতিযোগিতা, তারাও এখন প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটিয়ে উৎপাদন উৎকর্ষ বৃদ্ধির দিকে মনোযোগী। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলাদেশকেও অবধারিতভাবে সে পথে হাঁটতে হবে। কিন্তু এমন সময়েই বাংলাদেশ হাঁটছে উল্টো পথে। উৎপাদনে অপচয় হার না কমিয়ে বরং বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমানে পোশাকপণ্যে অনেক বৈচিত্র্য এসেছে, ফলে অপচয়ের হারেও পরিবর্তন এসেছে। তবে এ ধারাবাহিকতায় প্রযুক্তিগত দিকসহ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নয়ন হয়নি সেটা কোনোভাবেই বলা যাবে না। আর প্রযুক্তি বা দক্ষতার উন্নয়ন যত হয় শিল্পের অপচয় ততই কমে আসবে এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে পণ্য বৈচিত্র্যের প্রেক্ষাপটে অপচয় হার যদি কমে নাও আসে, বাড়ছে এটাও যুক্তিসংগত নয়। আমাদের শিল্পে উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন, প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে সত্য, তবে এর সঙ্গে অপচয় হারের যে সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকার কথা, তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে হয়তো এমনটা হচ্ছে। যদিও অন্য কোনো উদ্দেশ্যের কথা অস্বীকার করেছেন পোশাক শিল্প মালিকরা। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কেবল কাজের সুবিধার জন্যই অপচয়ের হার বাড়িয়ে ধরার কথা বলা হচ্ছে। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। বর্তমান প্রযুক্তির উন্নয়ন উদ্ভাবনের মাধ্যমে কীভাবে বিষয়গুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায় তাও ভাবা হচ্ছে। সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা স্থাপন হলে লোকবল কম প্রয়োজন হবে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সেটিও এক ধরনের চাপ। ফলে সেটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। এসব দিক চিন্তা করেই পোশাক শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে।
সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশেও প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়েছে, যার মাধ্যমে কাঁচামাল ব্যবহার কমেছে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বিষয়েও উন্নয়ন ঘটেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কাঁচামাল ব্যবহার কমানোর দিকে কারখানাগুলো মনোযোগী হয়েছে। কিন্তু নীতিগত দিকনির্দেশনা তৈরির ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোকে যেভাবে ব্যবহার করার কথা তা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা সে প্রশ্নও উঠেছে।
চলতি বছরই দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমঘন শিল্প পোশাক খাতের রফতানি ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে প্রক্ষেপণ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিল্পের ভবিষ্যেক আরো সুসংহত ও টেকসই করতে সার্বিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রয়োজনও মনে করছেন তারা।
শিল্প মালিকরা বলছেন, অপচয়ের হার কমিয়ে আনাসহ শিল্পের সার্বিক দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের যাত্রা অব্যাহত আছে। এর সঙ্গে অপচয়ের সর্বোচ্চ হার নির্ধারণে দিকনির্দেশনার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ অপচয়ের সবোর্চ্চ হার নির্ধারণের বিষয়টি পণ্যের নকশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য। বর্তমান পোশাকপণ্যের বৈচিত্র্যময় নকশার ক্ষেত্রে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও যুক্তিসংগত।
অপচয়ের হার বাড়িয়ে রাখার কারণ সম্পর্কে শিল্প মালিক প্রতিনিধিরা বলছেন, ইয়ার্ন ডাইড, বার্ন আউট গার্মেন্টের মতো অনেক পোশাকপণ্য আছে, যেগুলোয় অপচয়ের হার অনেক সময়ই নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে যায়। ১০০ কেজি কাপড় থাকলে ক্রেতার মান রক্ষায় বার্ন আউট করতে হয় ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ ওই কাপড়ের ৫০ শতাংশ ওজন কমে যাচ্ছে। এমন ক্ষেত্রে শুল্ক জটিলতা কমানোর জন্য সর্বোচ্চ সীমা বাড়িয়ে রাখার নীতিসহায়তা আদায় করে রাখা হচ্ছে। এর মানে এই নয় যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শিল্প অপচয়ের ক্ষেত্রটি প্রসারিত করা হচ্ছে।
পোশাকপণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এখন অনেক ধরনের উন্নত নকশার বিলাসবহুল পণ্যের ক্রয়াদেশ নিচ্ছে কারখানাগুলো। এসব ক্ষেত্রে যখন সফটওয়্যারভিত্তিক মাধ্যম (সিএডি ও সিএএম) ব্যবহারে নকশা অনুযায়ী কাপড় কাটা সম্ভব হয় না, তখন অনেক ক্ষেত্রেই কাপড়ের ব্যবহার বেড়ে যায়। সার্বিক প্রেক্ষাপটেই অপচয়ের হার বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো কাঁচামাল যা আমদানি করা হয়েছে তা ব্যবহার করে বেশি রফতানি হলেও শুল্ক কর্তৃপক্ষ চুরির অভিযোগ দেয়। যে কাপড় আমদানি করা হয়েছে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ক্রেতাকে মানহীন কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করে তা রফতানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ দেয়া হয়। এখন প্রশ্ন হলো, ক্রেতা কেনো মানহীন কাপড় থেকে তৈরি পোশাক নেবে? এটা কর্তৃপক্ষকে বোঝানো যায় না। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান আরো বলেন, শিল্পের সার্বিক দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে মালিকরা সবাই কাজ করছেন। সংগঠনও এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। খুব দ্রুতই ইনোভেশন সেন্টার চালু হবে। শিল্পের কাঁচামাল ব্যবহারে অপচয়ের হারও কমেছে। আরো কত কমানো যায় সে বিষয়েও কাজ চলছে।
নিট শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নেতারাও একই ধরনের মত পোষণ করছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে এখন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলেও এআই প্রযুক্তির দিকে শিল্প মালিকদের ঝোঁক প্রায় শূন্য। তারা এটাও স্বীকার করে নিচ্ছেন যে সার্বিক দক্ষতা উন্নয়নে উন্নত প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মালিকদের অগ্রসর হওয়ার গতি প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় খুবই কম। প্রকৃত অর্থে এআই প্রযুক্তির বাস্তবায়ন ঘটাতে পারলে উৎপাদনক্ষমতা ১৫-২০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব। অপচয়ের হার কমানো সম্ভব ৫-৭ শতাংশ। পণ্যের গুণগত মানও এতে আরো উন্নত হবে। টেকসই ভবিষ্যতের জন্য এসব বাস্তবে রূপান্তরও খুব জরুরি।
বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, আমরা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সক্ষমতার উন্নয়নসহ সার্বিক দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছি। তবে এআই প্রযুক্তি থেকে আমাদের শিল্প এখনো অনেক দূরে আছে অন্যান্য দেশের তুলনায়। বিশেষ করে চীন, ভিয়েতনাম ও তুরস্ক থেকে। এ দেশগুলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক এগিয়ে গেছে। এদিকে আমরা চিন্তাও করছি না। এরও যৌক্তিকতা আছে। এসব ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব সম্পদের ঘাটতি আছে। এআইয়ের মতো প্রযুক্তি স্থাপনে বাংলাদেশের নিজস্ব বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন থাকলেও তা নেই। বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এনে এআইয়ের মতো উন্নত প্রযুক্তি স্থাপনের বিষয়টি খুবই জটিল। এক্ষেত্রে ভিয়েতনাম ও তুরস্কের নিজস্ব কারিগরি দক্ষতা অনেক বেশি। যা কম বলে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এখনো পিছিয়ে রয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com