দীর্ঘ দিন ধরে সীতাকু-ের বাড়বকু- ইউনিয়নের এসকেএম এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই পরিবেশ দূষণ করে যানবাহনের পুরোনো টায়ার পুড়িয়ে ফার্নেস অয়েল উৎপাদন করছিল এস এস ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি টায়ার পোড়া কারখানা। এতে ওই এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে। ঝুঁকিতে পড়ে জনস্বাস্থ্যও। টায়ার পোড়ার কালো ধোঁয়া ও কালো পাউডার আশেপাশের এলাকার পাহাড়, ঘরবাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। দূষণে কবলিত হয় কৃষি জমি ও পাহাড়ি ঝিরি। সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কারখনাটিতে অভিযান পরিচালনা করে বন্ধের নির্দেশ দিলেও কোন ভ্রুক্ষেপ না করে কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখে এস এস ইন্ডাস্ট্রিজ। অপরদিকে সীতাকু-ের সোনাইছড়িস্থ লালবাগ শীপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের পাশ্বে ভারতের বিখ্যাত লুব্রিকেন্ট ব্রান্ড স্টার লুব অয়েলকে নকল করে জাহাজের পরিত্যক্ত পোড়া মোবিল সংগ্রহ করে বাজারজাত করে আসছিল স্টার লুব অয়েল নামে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান। এ কারখানাটিরও দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করে ভয়াবহ জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করে। দূর্গন্ধে-দূষণে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসী পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযোগসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়ে বাঁচতে চাই আমরা শিরোনামে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারিং করে। অবশেষে ১৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটা থেকে দুপুর পর্যন্ত দুটি পৃথক অভিযান পরিচালনা করে কারখানা দুটি সিলগালা করে দেয় উপজেলা প্রশাসন। অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগের ফিল্ড অফিসার ইকবাল আহমেদ ও ইন্সপেক্টর মোঃ মুকুল। অভিযানে এস এস ইন্ডাস্ট্রিজ টায়ার পোড়া ও স্টার লুব অয়েলের কারখানাটি সিলগালা করে ফটকে তালা লাগিয়ে দেয় প্রশাসন। এসময় এস এস ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানার জায়গার মালিক খায়রুল বশর চৌধুরীকে অবৈধ কারখানা ভাড়া দেয়ার অপরাধ ও অবৈধ নিন্মমানের বিটুমিন উৎপাদনের সহায়তার দায়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় খায়রুল বশর চৌধুরীসহ কারখানাটির ৫ জন শ্রমিককে আটক করা হয় এবং দ্রুত মালিক রাজু চৌধুরীকে উপজেলা পরিষদে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। তবে স্টার লুব অয়েল কারখানায় অভিযানের শুরুতেই মালিকপক্ষের লোকজন প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। পরে কারখানাটি সিলগালা করে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এ বিষয়ে সীতাকু- উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়ে এস এস ইন্ডাস্ট্রিজ নামে টায়ার পোড়া কারখানা ও স্টার লুব অয়েল নামে লুব্রিকেন্ট কারখানা দুটিতে পৃথক অভিযান পরিচালনা করি। এসময় টায়ার পোড়া কারখানাটির জায়গার মালিক খায়রুল বশর চৌধুরীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অপরদিকে দুটি কারখানাই সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। তাদের পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিএসটিআই কোন অধিদপ্তর থেকেই ছাড়পত্র নেই। বৈধ কোন কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেননি। এখন থেকে কারখানাগুলো বন্ধ থাকবে। একই দিনে সীতাকু-ের বার আওলিয়া পেট্রোল পাম্পে অভিযান পরিচালনা করে পরিমাপ সঠিক কিনা তা যাচাই করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহাদাত হোসেন। এদিকে জনদূর্ভোগ তৈরি করা অবৈধ কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সীতাকু-ের আলী চৌধুরী পাড়া ও সোনাইছড়ির লালবাগ এলাকাবাসী। তারা একুশে পত্রিকাকে বলেন, এস এস ইন্ডাস্ট্রিজ ও স্টার লুব অয়েলের দূষণ চরম আকার ধারণ করে। আমাদের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। বহুদিনের দাবি ছিল এ কালো কালি, কালো ধোঁয়া ও পঁচা মোবিলের গন্ধ থেকে রেহাই পাওয়া। অবশেষে তা বন্ধ হওয়াই প্রশাসনকে ধন্যবাদ।