একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত লোককবি বিজয় সরকারের ১২০তম জন্মদিন আজ রোববার। দিনটি পালন উপলক্ষে কবির জন্মস্থান নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে কবির প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পণ, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, বিজয়গীতি পরিবেশন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে শনিবার দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: ফখরুল হাসান। উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু, বাঁশগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: রফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ রওশন আলী,আকরাম শহিদ চুন্নু,নজরুল গবেষক এইচএম সিরাজ, নড়াইল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুলতান মাহমুদ,সাংবাদিক অশোক কুন্ডু প্রমূখ। জন্মদিন উপলক্ষে আজ বেলা ৩টায় ডুমদিতে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসক মো: হাবিবুর রহমান।আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাঁশগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: রফিকুল ইসলাম। অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা, গীতিকার ও গায়ক, চারণকবি বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি (১৩০৯ বঙ্গাব্দের ৭ ফাল্গুন) নড়াইল সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবার নাম নবকৃষ্ণ অধিকারী এবং মার নাম হিমালয়া দেবী। তার শৈশবকাল এবং জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে প্রিয় জন্মভূমি ডুমদিসহ নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায়। ছেলেবেলা থেকেই তিনি (বিজয় সরকার) কবিতা, গান রচনা ও সূরের মধ্যে ডুবে থাকতেন। তাই প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় তিনি আর বেশিদূর এগুতে পারেননি।মাত্র নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই তার লেখাপড়ার সমাপ্তি ঘটে। মতান্তরে তিনি ম্যাট্রিক পাশ।এরপর তিনি গানের দল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাংলাদেশ-ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে।তিনি একাধারে গানের রচয়িতা ও সুরকার।পোষা পাখি উড়ে যাবে সজনী/একদিন ভাবি নাই মনে…। এই পৃথিবী যেমন আছে/ তেমনি ঠিক রবে/সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে/একদিন চলে যেতে হবে…। তুমি জানো নারে প্রিয়/তুমি মোর জীবনের সাধনা’…এ ধরনের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা ছিলেন তিনি।তিনি প্রায় এক হাজার ৮০০ গান রচনা করেছেন।তিনি অনেক কবিতাও রচনা করেন। কবিগানের আসরেও দুর্দান্ত ছিলেন তিনি।মাতিয়ে তুলতেন দর্শক-শ্রোতাদের ।কোন কোন মঞ্চে তৎক্ষনাৎ নিজের রচিত আধ্যাতিœক গান পরিবেশন করে তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। বিজয় সংসদের সাবেক সেক্রেটারি মো: আসাদুজ্জামান জানান, কবি গানে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি চারণকবি ও সরকার উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি অনেক ইসলামী গান ও কবিতা রচনা করেন। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য তিনি চারণকবি ও ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। ১৯৮৫ সালের ৪ডিসেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়ার তার মৃত্যুর হয়।সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৩ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) পান উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই চারণ কবি।