সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেল ষ্টেশন সংলগ্ন মাহাসড়কের পাশে প্রথম নির্মিত শহিদ মিনারটি প্রায় ৩৭ বছর পর নতুন করে আলোর মুখ দেখবে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে এই শহিদ মিনারটি চারপাশের গাছপালা ও লতাপাতায় ঢেকে যায়। বন্ধ হয়ে যায় এই শহিদ মিনারের পাদদেশে একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে ফুল দেওয়া। এবছর উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমেদ এর স্বউদ্যোগে অবহেলিত এই শহিদ মিনারটি সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্কার করা হয়েছে গাছপালা জঙ্গল লতাপাতা। ইতোমধ্যেই এই মিনারগুলোর সংস্কার শেষ করে প্রাথমিকভাবে সাদা রং করা হয়েছে। মিনার রাঙ্গানোর কাজ শেষ হবে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে এই শহীদ মিনারটি শ্রদ্ধা জানানো হবে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কের পাশে সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গায় শহিদ মিনারটি নির্মান করা হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দারা শহিদ মিনারটিতে একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে ফুল দেওয়া ও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। পরবর্তী সময়ে পার্শ্ববর্তী গাছপালা বড় হয়ে এদের ডালপালায় পুরো মিনারটি ছেয়ে যায়। অযতেœ অবহেলায় লতাপাতা ও গুল্মে ঢেকে যায় মিনারের গা ও পাদদেশ। পুরো অন্ধকারে আচ্ছাদিত হয় শহিদ মিনারটি। বন্ধ হয়ে যায় সকল অনুষ্ঠান আয়োজন। উল্লাপাড়ার প্রথম শহিদ মিনার নির্মাতাদের মধ্যে বেঁচে থাকা কয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম জানান, ‘৭২ এর প্রথম দিকে স্থানীয় নবগ্রাম গ্রামের সে সময়ের ছাত্রলীগ নেতা মোজাম্মেল হক মজনুর (প্রয়াত) নেতৃত্বে উল্লাপাড়ার সাবেক এমপি আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মির্জা (প্রয়াত), বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন আলমগীর (প্রয়াত), বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ মির্জা (প্রয়াত), বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী ইফতেখার মবিন পান্না (প্রয়াত) এই শহিদ মিনারটি নির্মান করেন। পার্শ্ববর্তী তদানিন্তন পিডাব্লুডি’র গুদাম থেকে রড সিমেন্ট সংগ্রহ করে এটি তৈরি করা হয়। এই শহিদ মিনার তৈরির মাস দেড়েক পর উল্লাপাড়া উপজেলা সদরে থানার মোড়ে অবস্থিত বর্তমানে উপজেলা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার হিসেবে পরিচিত শহিদ মিনারটি নির্মান করা হয়। আর উপজেলা সদরে পরে নির্মিত এই শহিদ মিনারটিতেই কয়েক যুগ ধরে একুশের সকল অনুষ্ঠান আয়োজন হয়ে আসছে। উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান মওদুদ আহমেদ জানান, তিনি কিছুদিন আগে প্রথম নির্মিত অবহেলিত শহিদ মিনারটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন। এরপর ওই শহিদ মিনারটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। এবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে এই শহিদ মিনারে আবারো স্থানীয় বাসিন্দারা ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইউএনও।