রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন

ঋণখেলাপ গুনাহর কাজ

ড. ইকবাল কবীর মোহন:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ঋণখেলাপ বাংলাদেশের ব্যাংকিং জগতে একটি অতি পরিচিত বিষয়। ব্যাংকের ব্যবসাবাণিজ্য এই ঋণখেলাপ কালচারের কারণে অত্যন্ত ক্ষতির মধ্যে পড়ে। যেসব ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করে এবং সামর্থ্য থাকার পরেও তারা ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করে না; তাদের ঋণখেলাপি বলা হয়। এসব ঋণখেলাপি ব্যাংকের অর্থকে নিজেদের অর্থ হিসেবে মনে করে এর যথেচ্ছ ব্যবহার করে। তারা নিজের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে ব্যাংকের তথা জমাকারীদের সম্পদ মেরে খেতেও দ্বিধাবোধ করে না। এরূপ প্রতারক শ্রেণীর খেলাপি গ্রাহককে অন্যের অধিকার হরণকারী হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।
ইসলামী শরিয়তে এরূপ খেলাপি গ্রাহকের ব্যাপারে কঠোর বিধান রয়েছে। এদের জালিম এবং ঋণ পরিশোধে তাদের টালবাহানাকে জুুলুম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ গ্রাস করো না’ (সূরা আল-বাকারা : ১৮৮)।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনের অন্যত্র আরো বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা পরস্পরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না’ (সূরা আন-নিসা : ২৯)।
গ্রাহক বা ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে যে বিনিয়োগ গ্রহণ করে তা ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্য আমানত। অথবা ব্যাংকের পরিচালক এবং বেশির ভাগই সাধারণ অসংখ্য জনগণের গচ্ছিত আমানত। এই আমানতের অর্থই ব্যাংক গ্রাহকের কাছে বিনিয়োগ হিসেবে প্রদান করে। আর এটা এ জন্য যে, গ্রাহক তা নির্দিষ্ট সময় পর ফেরত দেবে। কিন্তু আমানতের অর্থ মেরে দেয়া বা ফেরত না দেয়া খিয়ানতের শামিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের খিয়ানত করো না। আর খিয়ানত করো না নিজেদের আমানতসমূহের। অথচ তোমরা জানো’ (সূরা আল-আনফাল : ২৭)।
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন তোমরা আমানত তার মালিকের কাছে ফেরত দাও’(সূরা আন-নিসা : ৫৮)। এ প্রসঙ্গে রাসূল কারিম সা: বলেছেন, ‘সচ্ছল ব্যক্তির টালবাহানা করা জুলুম’ (সহিহ আল-বুখারি)। নবীজী আরো বলেছেন, ‘মালদার ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে টালবাহানা তার মানহানি ও শাস্তি বৈধ করে দেয়।’ সুফিয়ান র: বলেন, ‘তার মানহানি অর্থাৎ প্রাপকের এ কথা বলা যে, তুমি আমার সঙ্গে টালবাহানা করছ আর তার শাস্তির অর্থ হচ্ছে বন্দী করা’ (সহিহ আল-বুখারি)। মহানবী সা: অন্যত্র বলেন, ‘আল্লাহর নিষিদ্ধকৃত কবিরা গুনাহের পরে সবচেয়ে গুরুতর গুনাহ হলো, কোনো ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে তার কাছে হাজির হলো এবং এই ঋণ পরিশোধ করার মতো কোনো ব্যবস্থা রেখে যায়নি’(আবু দাউদ)। ব্যাংকের ঋণ বা বিনিয়োগের অর্থ যথাসময়ে ফেরত দেয়ার জন্য গ্রাহক লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। যদি গ্রাহক অর্থ ফেরত না দেয় বা তা আত্মসাৎ করে তা হলে সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীকে মুনাফিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহর রাসূল সা: মুনাফিকদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটিÑ কথা বললে মিথ্যা বলে, অঙ্গীকার করলে তা ভঙ্গ করে এবং আমানত রাখলে খিয়ানত করে’ (সহিহ বুখারি)। নবী কারিম সা: অন্যত্র আরো বলেন, ‘যার মধ্যে চারটি জিনিস থাকবে সে খাঁটি মুনাফিক। আর তা হলো-১. আমানতের খিয়ানত করা, ২. কথা বললে মিথ্যা বলা, ৩. অঙ্গীকার করলে তা ভঙ্গ করা এবং ৪. বিবাদ করলে সীমালঙ্ঘন করা’ (সহিহ বুখারি)। আল্লাহ তায়ালা মুনাফিকদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রেখেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের নি¤œতম স্তরে’ (সূরা আন-নিসা : ১৪৫)। তিনি আরো বলেন, ‘আপনি মুনাফিকদের সুসংবাদ দিন, তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে’ (সূরা আন-নিসা : ১৩৮)।
মহান আল্লাহ ঋণখেলাফিদের তার ভয়াবহ পরিমাণ অনুধাবন করার তৌফিক দান করুন। তাকে আমানতের খিয়ানত করা, অর্থ আত্মসাৎ করা, মুনাফিকের চরিত্র ধারণ করা এবং ওয়াদার বরখেলাপ করার মতো মারাত্মক গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখুন এবং দুনিয়া এবং আখিরাতে কল্যাণ দান করুন। ঋণখেলাপি কালচার থেকে বেঁচে থাকলে দেশ, জাতি ও সমাজ উপকৃত হবে এবং ব্যক্তির কল্যাণও সাধিত হবে। লেখক : শিশুসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং সিনিয়র ব্যাংকার।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com