সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, ভোজ্যতেল ও পেঁয়াজের দাম আরেক দফা বেড়েছে। পাশাপাশি ডিমের দাম বাড়ছে হু-হু করে। এসব পণ্যসহ অন্যান্য পণ্য বাড়তি দরে কিনতে ক্রেতারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাই দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে ক্রেতারা বাজার তদারকির তাগিদ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিন এসব পণ্যের দাম বাড়ার চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্য মূল্য তালিকায় লক্ষ করা গেছে। টিসিবির পরিসংখ্যান বলছে-সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি সরু চাল ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ, মাঝারি আকারের চাল ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও মোটা চাল ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি ভোজ্যতেলের মধ্যে প্রতিলিটার লুজ সয়াবিন ২ দশমিক ১৯ শতাংশ, বোতলজাত পাঁচ লিটারের সয়াবিন ১ দশমিক ৩১ শতাংশ ও প্রতিলিটার পাম অয়েল সুপার ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ দাম বেড়েছে। এছাড়া প্রতি হালি ডিমের (৪ পিস) দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৭০ শতাংশ।
রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. হেদায়াতউল্লাহ বলেন, আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি সেখান থেকে মাস শেষে ৩০ হাজার টাকা আয় করি। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা ঘর ভাড়া দিই। বাকি সাড়ে ১৬ হাজার টাকায় দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি সংসার চালাতে হয়। কিন্তু এখন আর সংসার চালাতে পারছি না। কারণ নিত্যপণ্যের যে দাম তা দিয়ে আমার মতো সীমিত আয়ের মানুষের খাবার কেনা কষ্টকর। জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে বাজার তদারকি করা হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেলের দাম বাড়তি রাখছে সেগুলোকে জরিমানাসহ সাময়িক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চালের বাজারেও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সবাইকে নিয়মের ভেতরে আনা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে দাম কমবে।
রাজধানীর খুচরা বাজারে চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার প্রতিকেজি সরু চালের মধ্যে মিনিকেট বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা। যা আগে সর্বোচ্চ ৬৭-৬৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি আকারের মধ্যে বিআর ২৮ ও পাইজাম চাল বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৮ টাকা। যা আগে ৫০-৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণ জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫৩ টাকা। যা আগে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা দিদার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, চালের দাম কোনো মতেই কমছে না। সরবরাহে ঝামেলা না থাকলেও মিল পর্যায় থেকে ধান সংকটের কথা বলে প্রতি সপ্তাহেই চালের দাম বাড়াচ্ছে। যে কারণে পাইকারি বিক্রেতারা বাড়তি দরে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন বাড়তি দরে। তাই ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিনিয়ত চালের দাম বাড়ছে। বৃহস্পতিবার খুচরা বাজারের মুদি বিক্রেতাদের সঙ্গে বলে জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ৩ টাকা বেড়ে ১৬৭-১৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিলিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা; যা আগে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি হালি ফার্মের ডিম কিনতে ক্রেতার ৪০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। যা সপ্তাহখানেক আগে ৩৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে।