মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

অগ্নিঝরা মার্চ

খবরপত্র ডেস্ক
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন আজ মঙ্গলবার। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হলো এ মাসেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাস মার্চ এবার এসেছে ভিন্ন বার্তা নিয়ে। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও। এর সাথে যোগ হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের বছরে এ সুপারিশ জাতিকে উচ্ছাসিত করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এ প্রাপ্তি বিরাট অর্জন। করোনা আবহ বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রীয়, সরকারি ও বেসরকরি পর্যায়ে এ মাসে অনুষ্ঠিত হবে নানা অনুষ্ঠান।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানীরা বাঙ্গালীর কন্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে ‘অপারশেন সার্চলাইট’ নামে বাঙালি নিধনে নামে। ঢাকার রাস্তায় বেরিয়ে সেনারা নির্বিচিারে হাজার হাজার লোককে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষক হত্যা করা হয়। এর পরের ঘটনা প্রবাহ প্রতিরোধের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হয়। আবালবৃদ্ধবনিতা যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে জাতি লাভ করে স্বাধীনতা।
ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ ও প্রবীণদের জবানবন্দী অনুযায়ী, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ ও গৌরবোজ্জ্বল পটভূমি রয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তানের পাঁচটি প্রাদেশিক পরিষদ এবং জাতীয় পরিষদের নির্বাচন একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার দাবিতে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নির্বাচন বর্জন করে। ফলে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে নিরংকুশ বিজয় অর্জন করে। প্রদেশের জন্য নির্ধারিত ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ১৬৭টি। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের ৮৮টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় প্রধান দল হিসেবে স্বীকৃত পায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার পর ২০ ডিসেম্বর ভুট্টো জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলের আসনে বসতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে পরিস্থিতি ঘনীভূত হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর মহল এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনে ভুট্টো ক্রমেই পরিস্থিতি জটিল করে তোলেন। আওয়ামী লীগের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। এ সময় ভুট্টো পরিষদে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং পরিষদকে কসাইখানা বানানো হবে বলে হুমকি দেন। সেই সংঘাতময় পরিস্থিতিতেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধান প্রণয়নকালে পিপিপিসহ পশ্চিম পাকিস্তানী দলগুলোর বক্তব্য ও পরামর্শ বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। এদিকে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে একাত্তরের পহেলা মার্চ এক বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি ৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য অধিবেশনকে অনির্দিষ্টকাল স্থগিত ঘোষণা করেন। জেনারেল ইয়াহিয়ার এ ঘোষণায় গোটা প্রদেশের ধর্ম-বর্ণ-পেশা-বয়স নির্বিশেষে জনগণ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। এ সময় মার্চের শুরুতেই শেখ মুজিব ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ প্রদেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করেন।
অধ্যাপক ডেভিড লুডেনের বিশ্লেষণ মতে, “আজকের দিনে পেছন ফিরে তাকালে আমরা বুঝতে পারি যে, ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের প্রথমদিককার ঘটনাগুলোই বস্তুত একটি ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান টিকে থাকার সব ধরনের বাস্তব সম্ভাবনা শেষ করে দিয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি সে সময় এতটা নিশ্চিত বলে মনে হয়নি। এমনকি শেখ মুজিবের কাছেও তা সেভাবে ধরা পড়েনি। তিনি তখনো তার ফেডারেশন পরিকল্পনায় স্থির ছিলেন, যেটি সাংবিধানিক নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত নির্বাচনী বিজয় ও বিপুল জনসমর্থনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে। সব দিক বিবেচনায় তখনো তার আশাবাদী থাকার কথা। কিন্তু দ্রুতই হতাশার নতুন কারণ হাজির হতে শুরু করলো।…..অধিবেশন বাতিলের ঘোষণা ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাপক গণআন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। ঢাকার পূর্বাণী হোটেলে আওয়ামী লীগ পরিষদীয় দলের সভা চলাকাল বাইরে সমবেত হাজার হাজার মানুষ অতিদ্রুত সার্বভৌম জাতীয় স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার জন্য শেখ মুজিবের প্রতি দাবি জানাতে থাকে। বিক্ষুব্ধ জনতা পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে ফেলে। ছাত্র নেতারা স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগাম পরিষদ নামে একটি উচ্চ পর্যায়ের সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। এর নেতা নূর-ই আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব এবং আবদুল কুদ্দুস মাখন জাতীয় স্বাধীনতার আন্দোলনে যৌথ নেতৃত্ব প্রদানের ঘোষণা দেন। স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের ধারণাটি ১৯৭১ সালের মার্চ মাসেই প্রথম রাজনৈতিকভাবে স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com