শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বিজয় ছিনিয়ে নিতে ষড়যন্ত্র চলছে: নজরুল ইসলাম খান পতিত আ’লীগ সরকারের কবল থেকে ভিক্ষুকরাও রেহাই পায় নাই : ডা. শফিকুর রহমান জাতির মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই : তারেক রহমান ব্যবসায়ী ওয়াদুদ হত্যা: সাবেক ডিসি মশিউর সাত দিনের রিমান্ডে ভারতে ‘অবৈধ’ শেখ হাসিনা, এখন কী পদক্ষেপ নেবে ভারত দেশবাসী তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে ফোন নম্বর মুখস্থ থাকাই কাল হলো তোফাজ্জলের? আরও কিছু সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে : নাহিদ মুসল্লিদের প্রতিরোধের মুখে স্বৈরাচারী হাসিনার নিযুক্ত খতিব রুহুল আমিনের পলায়ন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া দেশের জন্য অশনিসংকেত: অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

এক হাতে রিকশা চালিয়ে জীবনযুদ্ধে লড়ছেন ওবায়দুল

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৯ মার্চ, ২০২২

মো. ওবায়দুল ইসলাম। বয়স ৪১ বছর। প্রায় ২৮ বছর আগে কিশোর বয়সে রান্নার জ্বালানী খড়ি সংগ্রহের জন্য গাছে উঠলে অসাবধাণতাবশত গাছ থেকে পড়ে গিয়ে তার বাম হাত ভেঙ্গে যায়। ভাঙার পর ব্যান্ডেজ করে ভালো না হয়ে পচন ধরলে হাতটি কেটে ফেলতে হয়। তাই জীবিকার তাগিদে তিনি এক হাত দিয়ে রিকশা চালান। যে কোনো সময় এই এক হাতের ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে তার জীবনে নেমে আসতে পারে আরো বড় ধরনের বিপর্যয়। তাই ওবায়দুল চায় বাড়ীর পাশে একটি মুদি দোকান করে সংসার চালাতে। কিন্তু পুঁজি না থাকায় সে স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না তার। ওবায়দুল ইসলাম গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা ভরকুলকুঠি গ্রামের মো. আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ওবায়দুল ইসলাম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় মা মোছা. নুরী বেগমের সাথে রান্নার জ্বালানী খড়ি সংগ্রহের জন্য গাছে উঠলে অসাবধাণতাবশত গাছ থেকে পড়ে যান। তারপর তাকে স্থানীয় কবিরাজের কাছে নিয়ে গিয়ে হাত ব্যান্ডেজ করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু ইনফেকশন হয় হাতে। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকে কাছে গিয়েও লাভ হয়নি। প্রায় ২০ দিন পর ওবায়দুলকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে অপারেশন করে হাতটি কেটে ফেলতে হয়। এর ছয় মাস পর অসুখে মারা যান ওবায়দুলের মা। পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ওবায়দুলের বাবা দর্জি মো. আবদুর রাজ্জাক। বাড়ীতে নির্যাতনের শিকার হওয়ায় তিন মাস পর পাশের গ্রামের এক ব্যক্তি চট্টগ্রামে নিয়ে যান ওবায়দুলকে। সেখানে ওই ব্যক্তি ওবায়দুলকে ভিক্ষা করাতেন আর থাকতে দিতেন রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে। দোকান করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভিক্ষা করা টাকাগুলো নেন বাবা। দুই বছর ভিক্ষা করার পর নোয়াখালীর এক ব্যক্তি প্লাস্টিক সামগ্রী বিক্রির সহযোগি হিসেবে নেন ওবায়দুলকে। এ কাজ করেন চার বছর। তারপর তিনি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় ওবায়দুলকে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেন। বিয়ের পর সেখানে রিকশা চালান ওবায়দুল। এরপর একসময় ফেরেন নিজ বাড়ী। প্রায় সাত বছর থেকে গাইবান্ধা জেলা শহরে এক হাতে রিকসা চালান ওবায়দুল ইসলাম। প্যাডেল চালিত রিকশা চালাতে কষ্ট হওয়ায় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কেনেন ব্যাটারি চালিত একটি রিকশা। সেই ঋণ এখনো পরিশোধ হয়নি তার। ওবায়দুল পেয়েছেন বাবার অংশের মাত্র হাফ শতাংশ জমি। সেই জমিতে টিনের একটা ঘর তুলে থাকেন স্ত্রী-সন্তানদেও নিয়ে। তার স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম বাড়ির কাজের পাশাপাশি অন্যেও বাড়িতেও কাজ করেন। এসএসসি পাশের পর কয়েক বছর আগে বড় মেয়ে রুমানাকে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে সৈকত হাসান (১৮) অর্থাভাবে পঞ্চম শ্রেণির পর পড়তে পারেনি। এখন মাত্র দুই থেকে তিন হাজার টাকায় সে হোটেলে কাজ করে। আর সব ছোট মেয়ে সুমনা আক্তার (১২) স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। এক হাত দিয়ে রিকশা চালানো ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘এখন হাত খুব ব্যথা করে। বেশি সময় ধরে রিকসা চালাতে পারিনা। রিকশা চালানার সময় হঠাৎ ব্রেক করে ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে বেশ কয়েকবার শরীরে আঘাতও পেয়েছি। রিকসায় ওঠার পর আমার এক হাত দেখে অনেকে রিকসা থেকে নেমেও যান। তাই বেশি একটা ভাড়া পাইনা। অর্থকষ্টে ভুগছি। এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রিকসা না চালিয়ে বাড়ির সাথে যদি ছোটো একটি মুদির দোকান দিতে পারতাম। কিন্তু মুদি দোকান করার মতো আমার পুঁজি নেই।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন, ‘এক হাত দিযে রিকশা চালানো ওবায়দুলের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তিনি যদি প্রকৃত ভূমিহীন হয়ে থাকে তাহলে খোঁজ নিয়ে দ্রুত তাকে সহায়তা করা হবে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com