আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা উপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলীর আজ ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৪ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে। মুজতবা আলীর ভ্রমণকাহিনীগুলোই বিশেষভাবে জনপ্রিয়। তিনি ছিলেন বহুভাষিক। ১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে আসামের অন্তর্ভুক্ত সিলেটের করিমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি সিলেটের সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পিতার চাকরিসূত্রে তিনি পরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। ১৯২১ সালে ভর্তি হন শান্তিনিকেতনে। সেখানে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, উর্দু, ফারসি, হিন্দি, গুজরাতি, ফরাসি, জার্মানি, ইতালীয়সহ পনেরোটি ভাষা শেখেন। ১৯২৬ সালে বিএ ডিগ্রি পাওয়ার পর যান আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরের দুই বছর তিনি কাবুলের শিক্ষা দপ্তরে অধ্যাপনা করেন। তারপর দর্শনশাস্ত্র পড়তে যান জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে গবেষণার জন্য তিনি ডি. ফিল লাভ করেন ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে।
১৯৩৪-৩৫ সালে তিনি কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৩৫ সালে তিনি বরোদা মহারাজার আমন্ত্রণে বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন।
পরে ১৯৪৯ সালে তিনি বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের খ-কালিন প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেন। পঞ্চাশের দশকের তিনি কিছুকাল আকাশবাণীর স্টেশন ডিরেক্টর হিসেবে পাটনা, কটক, কলকাতা আর দিল্লীতে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ সালে ফেরেন শান্তিনিকেতন। বিশ্বভারতীয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রিডার হিসাবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। সৈয়দ মুজতবা আলী সত্যপীর, ওমর খৈয়াম, টেকচাঁদ, প্রিয়দর্শী ছদ্মনামে দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতী, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় কলাম লেখেন। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। তার একটি বিখ্যাত উক্তি, “বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না।” তার নামকরা উপন্যাস- শবনম, শহর-ইয়ার; ভ্রমণকাহিনী-দেশে বিদেশে, জলে ডাঙ্গায়; ছোটগল্প-টুনি মেম, চাচা কাহিনী; রম্যরচনা- পঞ্চতন্ত্র, ময়ূরকণ্ঠি ইত্যাদি।