রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই মন্তব্যের জেরে দুই দেশের কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে। এবারই প্রথম পুতিনের নিন্দা জানাতে কঠোরতম ভাষা ব্যবহার করেন বাইডেন। পরে হোয়াইট হাউজের তরফ থেকে জানানো হয়েছে তিনি ‘হৃদয় থেকে উচ্চারিত’ কথা বলেছেন। তবে ক্রেমলিন বলেছে বাইডেনের মন্তব্য ‘ক্ষমার অযোগ্য ভাষা’। বিবিসি। গত বুধবার হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘প্রেসিডেন্ট, সব কিছু দেখার পরে, আপনি কি পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী বলতে প্রস্তুত?’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রথমে উত্তর দেন ‘না’, তবে এতেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে উত্তর পাল্টে বলেন, ‘আপনি কি জানতে চেয়েছেন আমি কী বলবো…? হ্যাঁ, আমি মনে করি তিনি একজন যুদ্ধাপরাধী’।
পরে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন পিসাকি বলেন, ইউক্রেনে সহিংসতার ‘বর্বর’ ছবি দেখার পর প্রেসিডেন্ট কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বদলে তার হৃদয় থেকে উচ্চারিত কথা বলেছেন। তিনি জানান, যুদ্ধাপরাধ নির্ধারণে আলাদা আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। যা পরিচালনা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা আলাদাভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে মস্কো। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস-কে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি এই ধরনের ভাষা অগ্রহণযোগ্য এবং ক্ষমার অযোগ্য, বিশেষ করে সেই রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে যার বোমা পুরো পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে।’
রাশিয়ার ১৪ হাজার সেনা নিহত: ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যকার সংঘাতে এখন পর্যন্ত ১৪ হাজারের বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এই দাবি করা হয়েছে। তবে রাশিয়া বলছে, তাদের মাত্র ৪৯৮ সেনা নিহত হয়েছে। এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, ইউক্রেনে তিন সপ্তাহ ধরে চলা সংঘাতে রাশিয়ার সাত হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। তারপর থেকে সংঘাত চলছেই। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর, ইউক্রেনীয় পরিসংখ্যান, রাশিয়ান পরিসংখ্যান, স্যাটেলাইটের ছবি ইত্যাদি বিষয় বিশ্লেষণ করে এই সংখ্যা অনুমান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া এক ভার্চুয়াল ভাষণে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি পার্ল হারবার এবং নাইন ইলেভেনের মতো এবং তা মোকাবেলায় পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে আরো সহায়তা প্রয়োজন। জেলেনস্কি পরে ইউক্রেনের নাগরিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বলেন, সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং চেচনিয়ায় রাশিয়ার যত সেনা মারা গেছে তার চেয়ে বেশি রুশ সেনা ইউক্রেনে মারা গেছে। এদিকে মারিউপোল শহরে রাশিয়া একটি থিয়েটারে বোমা ছুড়েছে যেখানে প্রায় ১২০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। অপরদিকে ইউক্রেনে হামলা চালানোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার এমন মন্তব্যের পর দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাকে কেন্দ্র করেই এ কথা বলেছেন বাইডেন।
হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রথমবারের মতো পুতিনের সমালোচনায় এমন শব্দ ব্যবহার করলেন এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পরবর্তীতে হোয়াইট হাউজ থেকে বলা হয়েছে, বাইডেন মন থেকেই এসব কথা বলেছেন।
রুশ আগ্রাসন সব ফ্রন্টেই থমকে পড়েছে: ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ মূলত সব ফ্রন্টেই থমকে পড়েছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাজ্য। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ গোয়েন্দা মূল্যায়নে এই দাবি করা হয়েছে। ওই মূল্যায়নে দাবি করা হয়েছে, গত কয়েক দিনে স্থল, সমুদ্র কিংবা আকাশে ন্যুনতম অগ্রগতি অর্জন করেছে রুশ বাহিনী। এছাড়াও দাবি করা হয়েছে রুশ বাহিনীর মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হওয়া অব্যাহত রয়েছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ অটুট এবং সুসমন্বিত রয়েছে। সব বড় শহরসহ ইউক্রেনীয় ভূখ-ের বেশিরভাগ অংশই ইউক্রেনীয়দের হাতে রয়েছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলছে, রাশিয়া এখন বিমান হামলার দিকে নজর দিয়েছে। বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর বোমা এবং গোলা বর্ষণ করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে স্থল অভিযানে রুশ বাহিনীর ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী।
ইউক্রেনে এখন পর্যন্ত পাঁচশ’ নিহতের কথা স্বীকার করেছে রাশিয়া। তবে মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণা এই সংখ্যা সাত হাজার হতে পারে।