দেশের উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন গাঢ় সবুজের বিপ্লব। ক্ষেত পরিপর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। দম ফেলার সময় নেই তাদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২০২২ রবি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৩০টি ব্লকে ২৮ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ২৭ হাজার ৩০০ হেক্টরে উফশী এবং ১ হাজার ১২০ হেক্টরে হাইব্রিড। এ পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৬৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। বাজারে ধানের দামও ভালো রয়েছে। ফলে এ মৌসুমে কৃষকরা অধিক মুনাফা লাভ করবে বলে আশা করছেন তারা। দেশের অন্যতম ধান-চালের মোকাম এটি। প্রতিবছর উপজেলার অটোমেটিক ও হাসকিং রাইসমিলে উৎপাদিত কয়েক লাখ মেট্রিক টন চাল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। সরেজমিনে উপজেলার উত্তরগ্রাম, মোল্লাকুড়ি, শিবরামপুর, হাটবড়াল, সিদ্দিকপুর, দাশড়া ও চৌমাশিয়া এলাকার গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরো ক্ষেত। আর এ দোলায় লুকিয়ে আছে লাখো কৃষকের রঙিণ স্বপ্ন। কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের প্রায় ৬০-৭০ ভাগ মানুষ ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত। কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ কেউ সার-কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। ভরা মৌসুমে সার ও কীটনাশকের দাম দৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেচকার্য ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বোরো চাষিরা। উপজেলার উত্তরগ্রাম গ্রামের কৃষক হামিদুর রহমান, সিদ্দিকপুর গ্রামের আহাদ আলীসহ ১০-১৫ জন কৃষক জানান, এ মৌসুমে জিরাশাইল, কাটারী ভোগ, সম্পা কাটারী, পারিজা, ব্রিধান-২৮, ২৯, ৫৮, ৬৩, ৮১, খাটো দশ (বিআর ১০) ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হয়েছে। প্রতিবিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করতে খরচ হয় ৭-৮ হাজার। ফলন পাওয়া ৩০-৩১ মণ। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বর্তমানে সার-কীটনাশক প্রয়োগে ব্যস্ত রয়েছেন চাষিরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় জানান, মৌসুমের শুরু থেকেই ক্ষেতে সঠিক সময় সেচ, সার ও বালাইনাশক প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে আসছেন কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা। উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের প্রত্যাশা করছেন তিনি। মহাদেবপুর উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ইউএনও মিজানুর রহমান মিলন জানান, গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সার-কীটনাশক বিক্রি করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।