গ্রাহক পর্যায়ে অপচয় রোধ এবং প্রাকৃতিক গ্যাস সংরক্ষণ করে পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব বাড়াতে ঢাকা মহানগর এলাকার আবাসিক খাতে তিন লাখ ২০ হাজার প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক বছর আগেই অর্থাৎ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে এই প্রকল্পের কাজ। এখন ঢাকা মহানগরে আরও এক লাখ প্রিপেইড গ্যাস মিটার বসানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাপান সরকারের ৩৫তম অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স (ওডিএ) ঋণ প্যাকেজভুক্ত ন্যাচারাল গ্যাস এফিসিয়েন্সি প্রজেক্টের (বিপি-পি৭৮) অধীনে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকা ওই তিন লাখ ২০ হাজার মিটার দেয় তিতাসকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৭৫৩ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা, যা দুই ধাপে বাস্তবায়ন করে তিতাস।
ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর আরও এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনে তিতাসকে নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। সুপারিশ মোতাবেক প্রথম পর্যায়ে ৫০ হাজার মিটার স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তিতাস। পর্যায়ক্রমে বাকি ৫০ হাজার মিটারও স্থাপিত হবে। এ ব্যাপারে জানতে তিতাসের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও বিস্তারিত কিছু বলতে পারেননি তারা। তবে তিতাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মির্জা মাহবুব হোসেন জাগো নিউজকে জানান, (তিন লাখ ২০ হাজার প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের) প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন ফায়জার রহমান। তিনি এখন অবসরে। এছাড়া আরও একাধিক কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন এবং অবসরে চলে গেছেন। বর্তমানে যারা দায়িত্বে আছেন, তারা কেউই ওই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
এ ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়নকালে দায়িত্ব পালনকারী (বর্তমানে বদলি) তিতাসের কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জাইকার যে তিন লাখ ২০ হাজার প্রিপেইড মিটার বসানোর কথা ছিল, তা শেষ হয়েছে। আরও এক লাখ মিটার তারা দেবে বলে জানতাম। যেহেতু আমি বদলি হয়েছি, এর পরের খবর আর বলতে পারছি না।
এ নিয়ে তিতাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে তিন লাখ ২০ হাজার প্রিপেইড মিটার রয়েছে। আরও এক লাখ প্রিপেইড মিটার তিতাসকে স্থাপনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। জাইকার এক লাখ মিটার দেওয়ার কথা রয়েছে, যেটা প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৫০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তিতাস। তিতাস সূত্র বলছে, যে তিন লাখ ২০ হাজার প্রিপেইড মিটার বসানো হয়েছে তার সবই জাপান থেকে এসেছে। ভবিষ্যতে তিতাসের যে মিটার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে, তা চূড়ান্ত অনুমোদন হলে দরপত্র আহ্বান করা হবে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ মিটার রপ্তানি করে। দরপত্র আহ্বানের পর আমদানিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে মিটার যাচাই-বাছাই করে তারপর যে দেশের মিটার ভালো হবে, সেগুলোই নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যেহেতু জাপান একবার তিন লাখ ২০ হাজার মিটার দিয়েছে, যদি তাদের মিটার ভালো সার্ভিস দেয়, তাহলে তাদের কথা বিবেচনায় রাখা হবে।
তিতাসের হিসাব মতে, রাজধানীতে আবাসিকে গ্যাসের বৈধ সংযোগ রয়েছে ২৮ লাখ ৫৬ হাজার। এর মধ্যেই দুই সিটি করপোরেশনের গ্যাস সংযোগে প্রিপেইড মিটার আছে তিন লাখ ২০ হাজারটি। মিরপুর, ধানমন্ডি ও গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় আছে এসব মিটার। তিন লাখ ২০ হাজার মিটার স্থাপনের পর কী পরিমাণ গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে জানতে চাইলে তিতাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মির্জা মাহবুব হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত সে হিসাব করা হয়নি। তবে আগে যেখানে গ্রাহককে প্রায় এক হাজার টাকা বিল দিতে হতো, সেখানে আবাসিক গ্রাহকরা ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা খরচ করলেই সারা মাস গ্যাস ব্যবহার করতে পারছেন।