পত্রিকায় পড়ে পুলক সাংমা আগ্রহী হয়ে ওঠেন বনসাই করায়। শখের বশে বন থেকে তিনি কয়েকটি বট, পাকুড়ের চারা সংগ্রহ করে আনেন। নিজ বাড়ির উঠানে শুরু করেন বনসাই তৈরি। সফলও হন। এতে উৎসাহ বেড়ে যায়। তারপর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বনসাই তৈরির কাজে লেগে পড়েন। ১৮ বছর আগে শখ করে বনসাই তৈরি শুরু করা, সেদিনের শখ আজ তার আয়ের একটি বড় উৎস।
পুলক সাংমার বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় এলাকার ইদিলপুর গ্রামে। ওই গ্রামের প্রয়াত সুরেশ মারাক ও সরোজিনী জেং চামের সন্তান তিনি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বনসাই প্রেমীরা এই গ্রামে আসেন তাদের পছন্দের বনসাই সংগ্রহের জন্য। পুলক সাংমা বলেন, বিগত ২০০৪ সালে প্রথম বনসাই করা শুরু করেন। প্রথম দিকে মধুপুর বনের বিভিন্ন এলাকা থেকে চারা সংগ্রহ করতেন। পরে সেই চারা থেকে তৈরি করতেন বনসাই। সফল হওয়ার পর দুই বছর পরেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ কাজ শুরু করেন। শুধু বন নয়, আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার পুরোনো ভবন, পুরোনো গাছের গায়ে গজিয়ে ওঠা চারা এনে বনসাই করেন। মধ্যে ঢাকায় বনসাই সোসাইটিতে এর ওপর প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। বনসাই থেকে ভালোই আয় হচ্ছে তার।
সরেজমিন ইদিলপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুলক সাংমার বাড়িটি সবাই এক নামে চেনেন বনসাই বাড়ি হিসেবে। কাকরাইদ-গারোবাজার পাকা সড়ক ধরে ইদিলপুর বাজারে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই স্থানীয় ভ্যানচালক আকবর আলী নিয়ে যান পুলক সাংমার বাড়িতে। বাড়ির সামনে মূল নার্সারি। সেখানে রয়েছে কয়েকশ’ বনসাই। দুপুরের দিকে সেখানে পৌঁছে দেখা যায়, আবদুল বারেক নামের একজন কর্মী বনসাইগুলোতে পানি দেয়ার কাজ করছেন। বারেক জানান, বট, পাকুড়, হিজল, জারুল, জাম, ডুমুর, জগডুমুর, শেওড়া, কামিনী, চায়না বট, লাল পাকুড়সহ বিভিন্ন জাতের গাছের চারা এনে বনসাই করা হয়। তিনি জানান, ভেতর বাড়িতেও কয়েকশ’ গাছ রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আকারে বড় এবং সুন্দর বনসাইগুলো রাখা হয়েছে।
পুলক সাংমা আরও জানান, ‘চিরসবুজ’ নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার একটি পেজ রয়েছে। সেখানে তিনি বনসাইয়ের ছবি দিয়ে থাকেন। তা দেখে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বনসাইপ্রেমীরা আসেন এই গ্রামে। তারা তাঁদের পছন্দের বনসাই কিনে নিয়ে যান। ঢাকা থেকে অনেক কম মূল্যে এখানে বনসাই বিক্রি করা হয়। তাই অনেকেই এখানে ছুটে আসেন। তার সংগ্রহে ১৫-১৬ জাতের পাঁচ শতাধিক বনসাই রয়েছে। এখন চারার জন্য বাইরে খুব কম যেতে হয়। পুরোনো বনসাইগুলো থেকেই চারা করা যায়। নিজ বাড়িতে বসেই ভালো আয় হয় তাঁর। কোনো ক্রেতা এলে ১০-২০ হাজার, এমনকি লাখ টাকার বনসাইও কিনে নিয়ে যান। তার নার্সারিতে এখন ৫-৬ হাজার থেকে শুরু করে ১৫-১৬ হাজার টাকা মূল্যের বনসাই রয়েছে। দেশে বনসাইয়ের ভালো চাহিদা রয়েছে। বেকার যুবকেরা বনসাই করে লাভবান হতে পারবেন। অনেকেই নার্সারি করে বিভিন্ন ফুল-ফলের চারা করেন। তাঁরা পাশাপাশি বনসাই করলে ভালো লাভবান হতে পারবেন।
মধুপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকেই পুলক সাংমা বনসাই করেন। এ থেকে তিনি আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন। তাকে অনুসরণ করে অনেকেই বনসাই করতে আগ্রহী হচ্ছেন।