মহামারি করোনার ফলে অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থান ধরে রাখতে এবং বাংলাদেশের আর্থিক খাত আরও শক্তিশালী করতে ২৫ কোটি ডলারের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ দুই হাজার ১২৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। গতকাল শুক্রবার (১ এপ্রিল) বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটনের বোর্ড সভায় বাংলাদেশের জন্য এ অর্থের অনুমোদন দেওয়া হয়। বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের এ অর্থের মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থিক ও আর্থিক খাতের নীতি শক্তিশালী হবে। এছাড়া করোনার ফলে অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থান ধরে রাখতে এ অর্থ অগুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বাংলাদেশকে ফাস্ট রিকভারি অ্যান্ড রেজিলেন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিটের আওতায় এ অর্থ দেওয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকারকে কোভিড- ১৯ মহামারি-পরবর্তীতে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পাশে থাকবে বিশ্ব ব্যাংক। ভবিষ্যতের ধাক্কাগুলোর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং নীতিগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তার অংশ হিসেবে এ অর্থায়ন করছে সংস্থাটি।
বিশ্ব ব্যাংক জানায়, এ অর্থ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাড়াতে এবং প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে রাজস্ব ও আর্থিক খাতের সক্ষমতা বাড়াবে। এটি দক্ষতা উন্নত করতে এবং গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ২০২০ সাল থেকে জরুরি সহায়তা, টিকাদান এবং অন্যান্য করোনা সংকট পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা সমর্থনের জন্য বাংলাদেশকে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে। এ ঋণ সবুজায়ন, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করছে। এছাড়া কার্বন হ্রাসের পথ প্রশস্তের জন্য এ সংক্রান্ত নীতি এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো আরও শক্তিশালী করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাও ত্বরান্বিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রোগ্রামটি জাতীয় ট্যারিফ নীতির উন্নয়নে সহায়তা করবে, যা বাণিজ্য কর আধুনিকীকরণে সহায়তা করবে। অনাবাসিক ডিজিটাল পরিষেবা সংস্থাগুলোসহ বিদেশি সংস্থাগুলোর সক্ষমতাও বাড়ানো হবে। যেমন- অনুসন্ধান, সোশ্যাল মিডিয়া ও ক্লাউড পরিষেবা সংস্থাগুলোকে আধুনিক করা হবে। ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়ার কাজও সহজ করা হবে।
এ অর্থায়ন ব্যাংক কাঠামো সংস্কারে ব্যবহার করা হবে। পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট সিস্টেমের উন্নয়ন ও দক্ষতা জোরদারের জন্য নতুন আইন প্রস্তুত করা হবে, যা ডিজিটাল ও মোবাইল আর্থিক পরিষেবাগুলোকেও উৎসাহিত করবে। প্রোগ্রামটি বিভিন্ন পাবলিক সেভিংস সুদের হারের সমন্বয় করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, এ কর্মসূচি সরকারকে নগদ স্থানান্তর কর্মসূচি আরও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করবে। ভবিষ্যতের ধাক্কা মোকাবিলা এবং নগদ-ভিত্তিক প্রোগ্রামের জন্য সরকার-টু-ব্যক্তি পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার সম্প্রসারণ করবে। জরুরি সহায়তার জন্য নতুন ও বিদ্যমান সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়সহ জলবায়ু-সম্পর্কিত সংকটগুলোতে আরও দ্রুত সহায়তা দেওয়ার কাজ সহজ করবে। ‘এ অর্থায়ন বাংলাদেশকে সবুজ ও টেকসই উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তা করবে’ উল্লেখ করে বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, আর্থিক ও আর্থিক খাতের নীতিগুলোর প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এটি সহায়তা করবে। যখন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কভারেজ ও দক্ষতা বাড়ে তখন অর্থনৈতিক ধাক্কা এমনিতেই মোকাবিলা করা সম্ভব। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দরিদ্র ও দুর্বলদেরও রক্ষা করা যায়।