রোমেনা আক্তার মনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। দিনাজপুরের হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক তিনি। তার সেলাই কারখানায় কাজ করেন চার জন কারিগর। কারিগরদের প্রাপ্তি পারিশ্রমিক দিয়েও মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। শখের বশে সেলাই শিখে তিনি আজ একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। ২০০৫ সাল থেকে শুরু হয় রোমেনা আক্তার মনির পথ চলা। বিয়ের পর নিজ কন্যা সন্তানের পোশাকাদি তৈরি করবেন, এমন শখের বশে সেলায়ের কাজ শিখেন তিনি তার বড় বোনের নিকট। পরবর্তীতে সেই শখের শেখা কাজ আজ পেশায় রুপ নিয়েছে। ২০১১ সাল থেকে শখের সেলাইকে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে কাজে লাগান রোমেনা আক্তার। শুরু করেন নিজ হাতের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের লেডিস পোশাক অনলাইন-অপলাইনে বেচাকেনার। তখন থেকে তাকে আর পিছোনে ফিরে তাকাতে হয়নি। চলছেন তিনি আপন শক্তিতে। রোমেনা আক্তার মনির ইচ্ছে নিজেকে স্বাবলম্বীর পাশাপাশি হাকিমপুরের বেকার নারীদেরও স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলবেন। তাই তিনি হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তা ফোরাম একটি সংগঠন তৈরি করেন। এই সংগঠনের তিনি সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। সংগঠনটিতে রয়েছে ৩৬ জন নারী সদস্য। প্রত্যেক নারী সদস্যরাই এক একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠেছেন। হাকিমপুর শহরের সিপি রোডস্থ রোমেনা আক্তার মনির বসতবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন পোশাকের শো-রুম। রয়েছে সেখানে তার সেলাই কারখানা। সেলাই কারখানায় কাজ করেন চার জন পুরুষ কারিগর। রোমেনা একজন দক্ষ কাটিং মাস্টার। তার কারখানায় তৈরি হয় নারীদের সব ধরনের পোশাক। বিভিন্ন ডিজাইনে কাপড় কাটেন তিনি, আর কারিগররা আপনমনে তা সেলাই করেন। আবার কাপড়ে নানান রকমের ফুলও তৈরি করেন তিনি। এসব ডিজাইনের পোশাকের ব্যাপক চাহিদা তার অনলাইন ও অপলাইনের ক্রেতাদের কাছে। তার ফেসবুকে একটি পেজ রয়েছে। মুলত সেই পেজের অনলাইন থেকেই তিনি প্রচুর অর্ডার পান। বর্তমান অনলাইন-অপলাইনে ব্যাপক শাঁড়া পাচ্ছেন তিনি। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে কাজের অর্ডার। অনেক সময় নিজে কাপড় কাটতে এবং কারিগররা তা সেলাই করতে হিমশিম খাচ্ছেন। সকাল ৯ টা থেকে কারিগরদের সেলাই কাজ শুরু হয়, তা চলে রাত ১০ টা পর্যন্ত। প্রত্যেক কারিগরের মজুরি প্রতিদন দিয়ে দেন তিনি। এতে তারা পায় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মজুরি। সব মিলে রোমেনা আক্তার মনি প্রতি মাসে বেচা-বিক্রি ও অর্ডারি কাজ করেন ১ লাখ ৫০ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তা থেকে তার মাসিক আয় হয়ে থাকে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। স্বামী-সন্তান ও সংসারের সকল চাহিদা মিটিয়ে এসব কাজ করেন তিনি। নিজেকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি চার জন কারিগরদেও সুন্দর একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে এই নারী উদ্যোক্তা রোমেনা আক্তার মনি। চারজন কারিগর বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ মনি আপার সেলাই কারখানায় কাজ করে আসছি। এখানে আমাদের কাজের কোন অভাব হয় না। প্রতিদিন হাতে অনেক কাজ পেয়ে থাকি, তবে আগে যখন বাজারে বিভিন্ন কারখানায় কাজ করতাম তখন অনেক সময় হাতে তেমন কাজ থাকতো না। এখানে আমরা অনেক ভাল আছি, প্রতিদিন প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার সেলাই কাজ করে থাকি। হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রোমেনা আক্তার মনি বলেন, শুরুটা শখের বশেয় আমার এই কাজ, পরে পেশা হিসেবে নেওয়া। আমার ইচ্ছে হাকিমপুরের নারীদের নিয়ে কাজ করবো। তাই হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তা ফোরাম তৈরি করেছি। আমরা নারীরা অবহেলিত নই, পুরুষের মতো আমরাও নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পারি। আমি আমার কারখানায় নিজের কাজের পাশাপাশি নারীদেরও সেলাই কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। আমি চাই নারীদের বেকারত্ব দুর করতে। তারা কাজ শিখে নিজ বাড়িতে বসে কাজ করবেন এবং তাদের সংসারকে সহযোগীতা করবে। সেই সাথে নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলবেন।