সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ বা তথ্য ছাড়া মহাসড়ক অথবা সড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী কোনও গাড়ি থামানো যাবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। রমজান ও আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এম খুরশীদ হোসেনের সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) সকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অনুষ্ঠিত ফেব্রুয়ারি মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সংক্রান্ত এক ভার্চুয়াল সভায় মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়। সভায় সব মেট্রোপলিটন কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপাররা যুক্ত ছিলেন পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সভায় অতিরিক্ত আইজি এম খুরশীদ হোসেন বলেন, রোজা এবং ঈদকে কেন্দ্র করে শপিং মল, মার্কেটের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার বা গুজব ছড়িয়ে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে তৎপর থাকতে হবে।
তিনি যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সভায় বিট পুলিশিং কার্যক্রম আরও গতিশীল করার মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সভায় এআইজি (ক্রাইম ইস্ট) জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ফেব্রুয়ারি মাসের সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এতে জানানো হয়, দস্যুতা, খুন, দ্রুত বিচার, দাঙ্গা, অপহরণ, পুলিশ আক্রান্ত, সিঁধেল চুরি ও চুরি সংক্রান্ত মামলা জানুয়ারি মাসের চেয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে কমেছে। তবে জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারি মাসে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা বেড়েছে। অপরদিকে, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা গত বছরের একই সময় অর্থাৎ গত ফেব্রুয়ারির চেয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কমেছে। এছাড়া, উদ্ধারজনিত মামলা জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে বেড়েছে।
যানজটে রোজার বিকেলে ভোগান্তি চরমে: বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। কাজের জন্য প্রায়ই বাইরে বের হতে হয়। একটা কাজ নিয়ে বের হলে আরেকটা কাজ আর করা যায় না। রোজার দিনগুলোতে বিকেল হলেই রাস্তায় যানজট বাড়ে কয়েকগুণ। জ্যামে আটকে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আধা ঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগে দেড়-দুই ঘণ্টা। এভাবে আর কতদিন পারা যায়। মোহাম্মদপুরে যাবো, কখন পৌঁছাতে পারবো জানি না। রাজধানীর পল্টন মোড়ে বাসের অপেক্ষায় চৈত্রের দুপুরে খররোদে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা মো. শাহ নেওয়াজ নামের এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে যানজটে প্রতিদিনের দুর্ভোগ নিয়ে এভাবেই আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি। রমজানের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ঘরমুখো মানুষের এমন অভিব্যক্তিই ওঠে আসে। রোজার মাসে অফিস বা দিনের কাজ শেষে সবাই সময়মতো ঘরে ফিরতে চান। পরিবারের সঙ্গে অংশ নিতে চান ইফতারে। সেজন্য একটু তাড়াহুড়ো করেই কেউ রিকশা, কেউ সিএনজি অটোরিকশা বা রাইড শেয়ারিং পাঠাও আবার কেউ বাসে গন্তব্যের দিকে ছোটেন। কিন্তু এই ব্যস্ত শহরে ছুটে চলার সব গতিই যেন থমকে দাঁড়ায় যানজটের কবলে। রাজধানীর জিপিও থেকে মহাখালী যাচ্ছিলেন ইজাজ আহমেদ। বাসের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ওঠেন পাঠাওয়ে। এসময় কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, রাস্তাঘাটে প্রতিদিনই তীব্র জ্যাম। বাসে যাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু দেখলাম, যে পরিমাণ জ্যাম বাসে গেলে পরিবারের সঙ্গে ইফতার করা হবে না। তাই বাড়তি টাকা খরচ করে পাঠাও নিলাম। যে জ্যাম, কিছু করার নেই। একই পথে বাসের অপেক্ষায় থাকা অন্য যাত্রী ইলিয়াস মিয়া বলেন, রামপুরা যাবো, বাসে ওঠারই সুযোগ পাচ্ছি না। মোড়ে মোড়ে জ্যাম। সিগন্যালও রয়েছে। বাসায় ইফতার করতে পারবো কি না, জানি না। জিপিও থেকে রাজধানীর মালিবাগে যাচ্ছিলেন পারভীন। বাস না পেয়ে রিকশার খোঁজ করা এ নারী জাগো নিউজকে বলেন, ছয়-সাতটি রিকশা ডাকলাম, কেউ যেতে চাচ্ছে না। বাসও পাচ্ছি না। খুব বিরক্তি লাগছে। এদিকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি আর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিকেই অতিরিক্ত যানজটের কারণ মনে করছেন অনেকে। তারপরও বছরের ১২ মাস ভোগান্তি মাথায় নিয়েই ঘর ছাড়তে হয় নগরবাসীকে। রোজার দিনের বিকেলগুলোতে দুর্ভোগের এ মাত্রা পৌঁছে চরমে। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইফতারের জন্য সবারই বাসায় ফেরার তাড়া থাকে। রিকশা ও পথচারীদের রাস্তা পারাপারে অন্যান্য গাড়িগুলোকে চলতে হয় ধীরগতিতে। সিগন্যাল ছাড়লেও রিকশা ও পথচারীদের চাপে বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। তখনই জ্যামটা লাগে।