জয়পুরহাটে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে বিদেশী সবজি ক্যাপসিকাম চাষ। অনুকূল আবহাওয়া, উপযুক্ত মাটি হওয়ায় স্থানীয় বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় বেশ কয়েকজন কৃষক বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেছেন। তাদের দেখে জেলার অনেক কৃষক ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় চার বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ হয়েছে। চাষীরা আগ্রহী হওয়ায় পাঁচবিবি উপজেলার আটাপুর ইউনিয়নের উচাই কৃষি কলেজ এলাকায় জামিল প্রায় দুই বিঘা জমিতে এবং আয়মারসুলপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের মোশারফ করিম এক বিঘা জমিতে দুজন কৃষকের জমিতে ক্যাপসিকাম চাষের প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। এ এলাকায় সাধারণত তিন জাতের ক্যাপসিকাম চাষ হচ্ছে। এগুলো হলো ক্যালিফোর্নিয়া ওয়ান্ডার, টাইগার ও ইয়েলো ওয়ান্ডার।
এছাড়া বেশ কয়েকজন কৃষক ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ সবজির চাষ শুরু করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার জয়পুরহাটে ক্যাপসিকামের ভালো ফলনের আশা করছেন চাষীরা। এটি জানার পর আশপাশের অনেক চাষী এ সবজির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে আগামী মৌসুমে চাষাবাদ করবেন বলে জানা গেছে।
ক্যাপসিকামচাষী জামিল বলেন, আমি বগুড়ার বীজ উৎপাদন কেন্দ্র এগ্রো-১ থেকে ক্যাপসিকাম চাষের ওপর দুবার প্রশিক্ষণ নিয়ে পাঁচবিবি উপজেলার আটাপুর ইউনিয়নে উচাই কৃষি কলেজ এলাকায় জমি লিজ নিয়ে গত জানুয়ারিতে চারা রোপণ করেছি। বর্তমানে গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ফল তোলা শুরু হবে। ক্যাপসিকাম সারা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় ও মূল্যবান সবজি। এটাকে আমাদের দেশে মিষ্টি মরিচও বলা হয়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় দাম ভালো পাওয়ার আশায় এ ফল চাষ শুরু করেছি। মাটিতে ভাইরাস থাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে হয় ও সবসময় ফসলের খেত পরিচর্যা করতে হয়।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশেও ক্যাপসিকামের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ক্যাপসিকামের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। সাধারণত ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। আমাদের দেশে ক্যাপসিকাম খাওয়ার প্রচলন বেশি না থাকলেও ক্রমেই এর ব্যবহার বাড়ছে, দেশের অভিজাত হোটেল ও রেস্টুরেন্টে এর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। ভিটামিন সিসহ অন্যান্য পুষ্টিগুণে ভরা এ সবজি বিদেশে রফতানি করেও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব।
ক্যাপসিকাম চাষাবাদের বিষয়ে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা জাকস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নুরুল আমিন বলেন, আমাদের কৃষি ইউনিটের আওতায় উচ্চফলনশীল ফসল এলাকার কৃষকদের উন্নয়নে বিদেশী সবজি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করা হয়। পরে সদস্যদের চাষের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে ক্যাপসিকাম চাষের প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। সংস্থাটির সহকারী উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান জানান, এ ফলের বর্তমান বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় সংস্থার কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করে সদস্যদের চাষের জন্য আগ্রহ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ক্যাপসিকাম চাষীদের প্রতি বিঘায় খরচ হয় প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। আর প্রতি বিঘার ফল বিক্রি হবে প্রায় দেড় লাখ টাকা। জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ক্যাপসিকাম চাষাবাদে জয়পুরহাটের মাটি ও আবহাওয়া অত্যন্ত উপযোগী। ক্যাপসিকাম অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন সবজি। সঠিকভাবে উৎপাদিত সবজির ভালো দাম পাওয়া গেলে এ এলাকার কৃষক ক্যাপসিকাম চাষাবাদে আরো বেশি ঝুঁকে পড়বে বলে মনে করি। ক্যাপসিকাম চাষে কৃষকদের জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সূত্র বণিকবার্তা অন লাইন