মধ্যরাতের অনাস্থা ভোটে যাদের কাছে হেরে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে, তাদের মীর জাফর বলে আখ্যা দিয়েছেন পাকিস্তানের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গত শনিবার (১৬ এপ্রিল) রাতে করাচির বাগ-ই-জিন্নাতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) এক সমাবেশে দেয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন বলে জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ইমরান বলেন, ‘চোরের দল, মীর জাফররা ক্ষমতায় এসেছে। নির্বাচনে জিতে দেখান, এই মীর জাফরদের জনগণ চায় কি না।’
১৭৫৭ সালে ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। নবাবের প্রধান সেনাপতি মীর জাফর ব্রিটিশদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুদ্ধে অংশ নেননি। ফলে, পালাতে হয়েছিল সিরাজউদ্দৌলাকে। এমন প্রেক্ষাপটে মীর জাফরকে ইতিহাস ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। ওই প্রসঙ্গ তুলে দলের কিছু নেতা ও বিরোধীদের প্রতি ইঙ্গিত করে তাদের মীর জাফর আখ্যা দেন প্রধানমন্ত্রীর পদ হারানো ইমরান।
তাকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসা পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রধান নওয়াজ শরিফের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুই বার মিথ্যা বলে পালিয়েছিলেন, এখন তিনি আবার দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’ জনগণের উদ্দেশে ইমরান বলেন, ‘আগামীর নেতারা তো দেশটাকে আবার লুটপাট করে খাবে। শহরে ও গ্রামে রাস্তায় নামেন। যদি ষড়যন্ত্র মেনে নেন, আপনার সন্তানরা আপনাকে ক্ষমা করবে না।’ মানুষের সামনে আর কোনো পথ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। ইমরান বলেন, ‘আজ পর্যন্ত কখনোই পাকিস্তানের আইন ভঙ্গ করিনি। আমি কখনই কোনো দেশের বিরুদ্ধে নই। আমি ভারত, ইউরোপ কিংবা মার্কিন বিরোধী নই। আমি বিশ্ব মানবতার সঙ্গে আছি। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, কিন্তু দাসত্ব চাই না।’
বিভিন্ন নাটকীয়তার পর অবশেষে গত ৯ এপ্রিল মধ্যরাতের অনাস্থা ভোটে ৬৯ বছর বয়সী ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রিত্বের অবসান ঘটে।পরে পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ জাতীয় পরিষদে আবার ভোটাভুটিতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ অর্থাৎ পিএমএলের শাহবাজ শরিফ। তিনি দেশটির ২৩তম প্রধানমন্ত্রী। দুর্নীতির দায়ে নওয়াজ শরিফ অভিশংসিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে চার দলের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান। ২২তম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তার সরকারের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত।