গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর পরিবার বর্তমানে ‘অনেক বিপদে’ দিনযাপন করছে জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ইলিয়াস আলীর স্ত্রী জানিয়েছেন, ইলিয়াস আলীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তারা হ্যান্ডেল করতে পারছেন না। তার গাড়ির ট্যাক্সও তারা দিতে পারছেন না।’ গতকাল শনিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে ইলিয়াস আলীর বাসায় তার পরিবারের সাথে সাক্ষাতের পর বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বিষয়গুলো ইলিয়াস আলীর পরিবারের কাছে একটা মর্মান্তিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মেয়ের ভর্তির ব্যাপারে অনেক সমস্যার মধ্যে তাদের পড়তে হয়েছে। কলেজগুলো মেয়েকে ভর্তি করছিল না। পরিবর্তীকালে অনেক চেষ্টা-তদবির করে তার মেয়েকে ভর্তি করানো হয়েছে। এটা শুধু ইলিয়াস আলীর পরিবার নয়, গুমের শিকার হওয়া সব পরিবারই এমন নিদারুণ কষ্টের মধ্যে আছে।’ গতকাল শনিবার বেলা ১২টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে নিয়ে ইলিয়াস আলীর বাসায় যান। তিনি সেখানে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার সাথে কথা বলেন। এ সময় সিলেট জেলা সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি মহাসচিব এ সময় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ইলিয়াস আলীর পরিবারের জন্য ঈদ উপহার পৌঁছে দেন।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা গুম হওয়া পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার পৌঁছে দিচ্ছি। বিভিন্ন জেলায় যারা ভিকটিমস আছেন তাদেরকে জেলা পর্যায়ের নেতারা এই ঈদ উপহার ও সহযোগিতা করার চেষ্টা করছেন।’
জবাবদিহিতা না এলে বিচারবর্হিভূত হত্যাকা- বন্ধ হবে না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সম্প্রতি দুজন ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। এটা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার চার মাস পরে। এর কারণটা হচ্ছে, আমি যেটা মনে করি, র্যাবের যে ক্র্যারেক্টার তারা (সরকার) তৈরি করে দিয়েছে সেই ক্র্যারেক্টারে সমস্যা সমাধান করা বলতে তারা সেটাকেই (ক্রসফায়ার) মনে করে এবং একইভাবে বেআইনি সব অমানবিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তারা কাজ করছে এবং করে যাবে।’ ‘যাদেরকে দায়ী করা হয়েছে, যারা ওই কাজে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সরকার এখন পর্যন্ত কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তার জন্য স্বাভাবিকভাবে এসব (বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-) হবে। এর একমাত্র কারণ এখানে কোনো জবাবদিহিতা নেই। আমরা বার বার একথা বলেছি যে সরকারের বড় সমস্যা হচ্ছে, তাদের যেহেতু জবাবদিহিতা জনগণের কাছে নেই, অন্য যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরও সেই জবাবদিহিতার থাকার প্রয়োজন তারা মনে করে না,’ বলেন ফখরুল।
গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের সন্ধানে সরকারের কোনো প্রচেষ্টাই দেখা যায় না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার বিষয়ে কোনো প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। যেহেতু সরকারই ইনভলবড। যখন ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে বাসা ওই খান থেকে তখন তো মানুষজন দেখেছে যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। যারা দেখেছেন তারাও গুম হয়েছে, তার গাড়ির চালকও গুম হয়েছে। খুব পরিষ্কার যে, এই সরকারের দ্বারাই এটা হয়েছে সেই কারণে তারা উদ্যোগ নেয় নাৃ।’ র্যাব ও এর সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের কাছে সহযোগিতা চাওয়া প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার ও আওয়ামী লীগের একটা ব্যানক্রাফট হয়ে গেছে যে তারা জাতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতকে অনুরোধ করতে চায়। এই সরকার মানুষের কাছে দাঁড়াতে পারছে না।’
গুম থেকে ফেরত আসা সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতে নি¤œ আদালতে মুক্ত হয়েছিলেন। পরে আবার আপার কোর্টে আপিল করে তাকে আটকে রাখা হয়েছে।’ উল্লেখ্য, ২০১২ সালে ১৭ এপ্রিল বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে কয়েক ব্যক্তি তুলে নিয়ে যায় বনানীর বাসার কাছে আমতলী থেকে। তার স্ত্রী তাহসিনা রশদীর লুনা এবং এক ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস ও এক মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল রয়েছে। ইলিয়াস আলী সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।