শ্রীলঙ্কার সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে এবং তার পরিবারের সদস্যরা একটি সামরিক ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজাপাকসে দ্বীপরাষ্ট্রটির উত্তর-পূর্ব অংশের ত্রিনকোমালি নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন।
সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে থাকা শ্রীলঙ্কায় প্রাণঘাতী সহিংস বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের একটি হেলিকপ্টারে করে নৌঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজধানী কলম্বো থেকে প্রায় ২৭০ কিলোমিটার দূরের এই নৌঘাঁটিও বাইরে থেকে ঘিরে ফেলেছে বিক্ষোভকারীরা। নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মুখে থাকা শ্রীলঙ্কায় পাঁচ বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পর সোমবার কারফিউ জারি করা হয়। তা বাস্তবায়নে মোতায়েন করা হয়েছে হাজার হাজার সেনা ও পুলিশ সদস্য। সোমবারের এই বিক্ষোভে আরও দুইশ’ মানুষ আহত হয়। এরই জেরে পদত্যাগ করেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। তবে তাতেও শান্ত হয়নি মানুষের ক্ষোভ। রাজধানী কলম্বোয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের বাইরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা রাতভর বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ভোরে সামরিক বাহিনীর অভিযানে মাহিন্দা রাজাপাকসেকে উদ্ধার করা হয়। বিক্ষোভকারীদের দূরে রাখতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
শীর্ষ এক নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বাসভবন কম্পাউন্ডে অন্তত দশটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভের জেরে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে রাজাপাকসে পরিবারের ক্ষমতা। প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। নিরাপত্তা বাহিনীরও নিয়ন্ত্রণও তার হাতে। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে শ্রীলঙ্কায় মূলত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে। তবে সোমবার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের সমর্থকেরা বাইরে থেকে রাজধানীতে প্রবেশের চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
কলম্বোর বাইরে ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতা অমরকীর্তী আঠুকোরলা দুই ব্যক্তির ওপর গুলি চালালে ২৭ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী নিহত হন। পুলিশ জানিয়েছে, সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের একটি দল তাকে ঘিরে ধরলে গুলি চালান তিনি। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পরে তিনি নিজের রিভলবার দিয়ে নিজের প্রাণ কেড়ে নেন। ঘটনাস্থলে আঠুকোরলার দেহরক্ষীর মরদেহ পাওয়া যায়। কারফিউ উপেক্ষা করে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদের অন্তত ৪১টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এসব বাড়ির বাইরে রাখা শত শত মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়। আগুনে পুড়তে থাকা এক বাড়ির সামনে এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘এটা আমাদের আরও আগে করা উচিত ছিল। আরও আগে তা করতে না পারায় দুঃখিত।’