মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

হৃদয়ের পরিচর্যা

উম্মেহানি বিনতে আবদুর রহমান :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৪ মে, ২০২২

রাব্বুল আল-আমিন কিছু মানুষকে আখিরাতে শাস্তির সমান্তরালে দুনিয়াতেও লাঞ্ছিত করে থাকেন। দ্বিমুখী এ শাস্তি তাদের জন্য যারা আল্লাহর দেয়া বিধানের পরিপন্থী কাজে রত। এ সব মানুষের গর্হিত কর্ম, অযৌক্তিক বিদ্বেষ, একগুঁয়ে ও হিংসা তাদের বিবেক, চোখ, কানে এমন পর্দা সৃষ্টি করে যে তারা সত্য উপলব্ধির শক্তি হারিয়ে ফেলে। এ হলো দুনিয়াতে তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত শাস্তি। আর কিয়ামতে অপেক্ষা করছে কঠিন ও যন্ত্রণাদায়ক অনন্তকালের শাস্তি। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তাদের হৃদয় ও কানে মোহর মেরে দিয়েছেন। তাদের চোখের ওপর আবরণ রয়েছে এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।’ (সূরা বাকারা-৭)
কুরআন মাজিদে এমন অনেক আয়াত রয়েছে যেখানে চিন্তা-অনুধাবনের ক্ষেত্রে মানুষের বক্ষ অথবা হৃদয়কে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে। অনেক অনুবাদে ‘সদরুন’ ও ‘কালবুন’-এর স্থলে আক্ষরিকভাবে ‘বক্ষ’, ‘হৃদয়’ এবং ‘অন্তর’ লিখে অনুবাদ করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস রা: এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যায় বলেন, ‘বক্ষ উন্মুক্ত’ করার অর্থ হলো-তাওহিদ ও ঈমানের জন্য তা প্রশস্ত হওয়া। (ইবনে কাসির)
উমার রা: বলেন, মুনাফিকের কলব হলো অনুরূপ সেখানে কোনো ভালো কিছু পৌঁছতে পারে না। (তাবারি, ইবনে কাসির)
রাব্বুল আল-আমিন বলেন, ‘(হে রাসূল! আপনি) বলুন, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মৃত্যুর সব কিছুই সমগ্র বিশ্ব জাহানের মালিক আল্লাহ তায়ালার জন্য।’ (সূরা আনআম-১৬২)
স্বভাবজাত ও পরিস্থিতির আদলে প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া এবং চক্র থাকে; যে কাজগুলো হৃদয়কে অস্থির করে তোলে প্রথমে তা শনাক্তকরণ ও নির্মূল জরুরি। দ্বিতীয়ত হৃদয়ের প্রতি যত্নবান হতে হবে। তা কিভাবে জানেন? একটি দাগহীন হৃদয় সবচেয়ে ব্যথাতুর অবস্থায় পতিত হয় সে মুহূর্তে যখন এমন কোনো কিছু হৃদয়ের দরজায় প্রবেশ করে যা আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী। তাৎক্ষণিক এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে এবং অন্তরকে তাকওয়ার চাদরে মুড়িয়ে রাখতে হবে। সর্বদা আল্লাহ তায়ালার রাজি-খুশি অনুযায়ী চললে জীবনে শান্তি আসবে, যদিও বাইরে বিশৃঙ্খলা হবে কিন্তু অন্তরের ভূমিকম্প বন্ধ হয়ে যাবে।
রাসূল সা: হজরত আবুজর রা:কে বললেন, আবুজর! তুমি কি সম্পদের প্রাচুর্যকেই সচ্ছলতা মনে করো? আবুজর রা: বললেন, জি, ইয়া রাসূলুল্লাহ। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, তাহলে তুমি সম্পদের স্বল্পতাকে দারিদ্র্য মনে করো? তিনি বললেন, জি, আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘আসলে সচ্ছলতা তো হৃদয়ের সচ্ছলতাই, আর হৃদয়ের দারিদ্র্যই আসল দারিদ্র্য।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান-৬৮৫)
হৃদয় যেভাবে শান্ত থাকবে-
১. যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা।
২. হারানোর কোনো ভয় না থাকা, কারণ প্রতিটা হৃদয় এ বিশ্বাসে বদ্ধমূল যে, ‘আল্লাহ অবশ্যই পরিপূর্ণ যত্ন নেবেন’।
৩. জীবনে চলনে-বলনে-কর্মের একমাত্র উদ্দেশ্য হবে আল্লাহকে খুশি করা।
সম্পদের প্রতি অস্থির লালসা মানুষের স্বভাবজাত। এ স্বভাবজাতের ঊর্ধ্বে রয়েছে অল্পেতুষ্টির তৃপ্ততার স্বাদ। নিজের সম্পদ কম বেশি যতটুকুই হোক তাতেই যারা তৃপ্ত; জীবন তাদের জন্য হয়ে ওঠে অনেক বেশি সুখকর। তৃপ্ত থাকার এ গুণটিকে ‘কানাআত’ বা ‘অল্পেতুষ্টি’ বলে।
সাহাবি হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা: নিজ ছেলেকে এ বলে উপদেশ দিয়েছিলেন যে, ‘বাবা শোনো! যখন কোনো কিছু তালাশ করবে তখন অল্পেতুষ্টি সাথে নিয়ে তালাশ করবে। আর তোমার যদি অল্পেতুষ্টি না থাকে তাহলে কোনো সম্পদই তোমার কাজে আসবে না।’ (আলমুজালাসাতু ওয়া জাওয়াহিরুল ইলম-১১১০)
ড. মারকোলার মতে, হৃদয় হচ্ছে সত্য ও আবেগের অঙ্গ। শুধু তাই নয়, তিনি তার গবেষণায় দেখিয়েছেন হৃৎপি-েও এক প্রকার ‘মস্তিষ্ক’ রয়েছে, এমনকি নিউরনও রয়েছে। এই নিউরনগুলো সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রভাব রাখে। অন্তর প্রত্যক্ষভাবে মানসিক অবস্থায় ভূমিকা রাখে।
গ্রেগ ব্রাডেন ২২ বছরেরও অধিক সময় ধরে ‘হৃদয়’ নিয়ে গবষণা করেছেন। তার মতে, হৃদয়ের আক্ষরিকভাবেই নিজস্ব মগজ আছে, এটি শুধুমাত্র রক্ত পাম্প করার অঙ্গ নয় বরং এর নিজস্ব নিউরন (মস্তিষ্কের কোষ) এবং বুদ্ধিমত্তা আছে।
হৃদয়ের অশান্তি দূর হবে যখন আপনি বুঝবেন আপনি মহান আল্লাহর প্রতি রাজি এবং আপনি যা করছেন তাতে রাব্বুল আল-আমিন আপনার প্রতি খুশি। তখন অনুভব করবেন আপনার হৃদয় সম্পূর্ণ শান্ত, হৃদয়ের কোথাও কোনো অশান্তি নেই। মুমিনের জন্য এর চেয়ে খুশির বার্তা আর কী হতে পারে যে, হৃদয়ের মালিক যিনি হৃদয়জুড়ে তাঁর কর্তৃত্ব স্থির থাকবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক উদ্ধত ও অত্যাচারী ব্যক্তির হৃদয় মোহর করে দেন।’ (সূরা মুমিন-৩৫)
আল্লাহ আমাদের হৃদয়কে পবিত্র করে দিন, আমাদের ঈমান-আমল কবুলযোগ্য করে দিন এবং আল্লাহ আমাদের তাদের দলে কবুল করুন যারা ‘রদিয়াতাম মারদিয়া’। আমিন! লেখক: ছাত্রী, আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com