গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নিভৃত মাঠে নজর কাড়ছে সোনালী রঙের ধান ক্ষেত। সম্প্রতি মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ডামাডোলে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পাকা ধান রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করছে তারা। কিন্তু ক্ষেতের ধান ঘরে তোলার শুরুতে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। অধিক মজুরি দিয়েও শ্রমিকের চাহিদা মিটছে না তাদের। তবে দরকার কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনের। এটি দিয়ে দ্রুত কাটা-মাড়াই করা সম্ভব হলেও খোঁজ মিলছে না সেই মেশিনের। সরেজমিনে শনিবার (১৪ মে) সাদুল্লাপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে দেখা যায় বোরো চাষিদের নানা প্রতিবন্ধকতা। কেউ কেউ অল্প শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে থাকলেও আবার অনেকে শ্রমিকের অভাবে কাটতে পারছে না। কেউবা ধান ক্ষেতে বৃষ্টির জলাবদ্ধতা নিয়ে ক্ষতির আশঙ্কায় ভুগছেন। জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে সাদুল্লাপুর উপজেলার মাঠপর্যায়ে ১৫ হাজার ৬৪৩ হেক্টর জমিতে কৃষকরা ধান আবাদ করেছে। নানা প্রতিকূল পেরিয়ে ফলনও হয়েছে ভালো। ইতোমধ্যে এসব ধান কাটা-মাড়াই শুরু করা হয়। কিন্তু বিধিবাম। ধান কাটার শ্রমিক যেন সোনার হরিণ। তাদের পাওয়ায় দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিক মজুরির বিনিময়ে মিলছে না সেইসব শ্রমিকদের দেখা। আবার তাদের পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ক্ষেতের ধান কাটতে অনেক সময় ক্ষেপন হচ্ছে। এ কারণে বৈশাখীর ঝড়-বুষ্টির কবলে পড়ে ক্ষেতেই পাকাধান নষ্ট হবার সম্ভাবনায় কৃষকের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এ অঞ্চলে ধান কাটার যন্ত্র কয়েকটি কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন মাঠে থাকলেও সব কৃষকের কপালে তা জুটছে না। কৃষকরা জানায়, শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা-মাড়াইয়ে করতে সময় ও খরচ বেশী পড়ে। সেই সঙ্গে ধানেরও কিছু ক্ষতি হয়। তবে কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিনে কাটা-মাড়াইয়ে অনেকটাই সুবিধা রয়েছে। এতে সময় ও খরচ কম হয়। এই মেশিন প্রত্যেক গ্রামে থাকলে কৃষকরা ধান কাটা-মাড়াইয়ের চিন্তামুক্ত থাকবেন। কিন্তু প্রত্যেক গ্রামে দূরের কথা, ইউনিয়ন জুড়েও একটি নেই। বুজরুক রসুলপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম মন্টু নামের একজন আদর্শ কৃষক জানান, চলতি বোরো মৌসুমে দেড় হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করেছেন। এরই মধ্যে কাটা-মাড়াই শুরু করা হয়। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে সবগুলো ক্ষেতের ধান কাটা সম্ভব হয়নি। এতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির আশঙ্কায় ভুগছেন। তিনি আরও বলেন, সরকারের ভুর্তকী মূল্যে আমাকে একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন দেওয়া হলে নিজের কাজের পাশাপাশি অন্যান্য কৃষকদের কাজেও ব্যবহার করা যেতো। আরেক কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক দিয়ে এক বিঘা জমির ধান ঘরে তুলতে খরচ হয় ৪ হাজার টাকা। সময়ও লাগে বেশী। আর হারভেস্টর মেশিনে ধান কাটা-মাড়াইয়ে বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকা খরচ হয়। এতে ধানের ক্ষতিও হয় না। উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোছা. আমবিয়া খাতুন জানান, কৃষকদের লাভবান করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। বৃষ্টিতে ধান ক্ষেতের জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে ধান কাটা-মাড়াইয়ে কৃষকরা কিছুটা শ্রমিক সংকটে পড়েছে। সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম জানান, যাতে করে কৃষকরা অতিদ্রুত ও কম খরচে ধান কাটা-মাড়াই করতে পারেন, সেই লক্ষে ৬ টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি ভূর্তকী মূল্যের আওতায় আরও কয়েকটি চাহিদা দেওয়া রয়েছে।