মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

বৈরী আবহাওয়ায় কমতে পারে বোরোর ফলন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৫ মে, ২০২২

চলতি বোরো মৌসুমে রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় ধানের ফলন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বীজ বপন ও চাষের সময় ভালো আবহাওয়া থাকলেও এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ফসল কাটা শুরু হওয়ার পর থেকে ঝড় ও বৃষ্টি অনেক এলাকায় ফসলের ক্ষতি করতে শুরু করে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের সতর্ক করেছে, মে মাসের শেষের দিকে আরও ঝড় হতে পারে। ঝড়ের আগেই ফসল ঘরে তুলে নিতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি কর্মকর্তারা। তবে কৃষকদের অভিমত, ফসল কাঁচা থাকলে ঝড়ের আগে ফসল কাটা বেশিরভাগ সময় সম্ভব হয় না।
কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, ঝড়ের আগে বোরো ধান কাটতে না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে অনেকেই বোরো ধান চাষ শুরু করতে দেরী করেন। কারণ, বোরো বপনের আগে অতিরিক্ত এক ফসল চাষ করতে কৃষক আগ্রহী হয়ে থাকেন। এতে বোরো ফসলের ক্ষতি হয়। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, রাজশাহীর বোরোর আগে আলু এবং নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে চলনবিল এলাকায় সরিষা চাষ করা হয়। ফলে বোরো চাষে বিলম্ব হয়।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী ও বগুড়া অঞ্চলে ১০ মে পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ২০ হাজার ৯৮১ হেক্টর বোরো জমির ৩১ শতাংশের ফসল কাটা হয়েছিল। এতে ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি ৩ দশমিক ৯৯ টন চাল। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ফলন গত বছরের ফলন থেকে প্রতি হেক্টরে অন্তত শুন্য দশমিক ২৭ টন কম। রাজশাহী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ খায়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান কাটা শেষ হলে মোট ফলন আরও বাড়বে। তবে, এ বছর ফলন কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। চাষি ও কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, চলনবিলের কৃষক সাধারণত তাড়াতাড়ি ধান ঘরে তোলেন। কারণ বৃষ্টি হলে বিলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। বিলের ফসল কাটা শেষ হলে সমতল এলাকাগুলোতে ফসল কাটা শুরু হয়। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ বছর এপ্রিলের মাঝামাঝিতেই ফসল কাটার কথা বলা হলে সমতল জমির কৃষক সমস্যায় পরেন। কেননা, সমতল এলাকার ক্ষেতমজুররা ধান কাটতে বিল এলাকায় যাওয়ায় শ্রমিক সংকট তৈরি হয়। এই কারণে অনেক কৃষক ঝড়ের আগে ফসল কাটতে পারেননি। ঝড়-বৃষ্টিতে তাদের ধান হেলে পরেছে এবং ফলন কমে গেছে। বিল এলাকায় ধান কাটা শেষ করে ক্ষেতমজুররা নিজ জেলার ফসল কাটাতে বাড়ি ফিরবে। স¤প্রতি চলনবিল এলাকার নাটোরের সাতপুকুরিয়া গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ কৃষক ইতিমধ্যেই তাদের ফসল ঘরে তুলেছেন। চলনবিলের রাস্তাগুলোতে ধান প্রক্রিয়াকরণের কাজ চলছে। এই এলাকার কৃষক বলছেন, কিছু ধান তারা নিজেদের জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করবেন। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চলনবিল এলাকায় প্রায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়। নাটোরের সিংড়া, বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুরে প্রায় ৮৬ শতাংশ ফসল কাটা শেষ হলেও সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলায় মাত্র ৩৫ শতাংশ ফসল কাটা হয়েছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কৃষক হোসেন আলী লেবু জানান, তার ৩০ বিঘা বোরো জমি থেকে চলতি মৌসুমে ২০০ মণ কম ধান সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এতে তার ২ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ঝড়ে আমার ধানের শীষ মাটিতে হেলে পড়ে। এই সামান্য ক্ষতিই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। কারণ ডিজেল ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে চাষের খরচ এবার অনেক বেশি ছিল। তিনি জানান, সরিষা তোলার পর বোরো চাষ করতে গিয়ে দেরি করে ফেলেছেন তিনি। অপর কৃষক মো. জুয়েল জানান, তার ১৫০ বিঘা জমিতে ভালো ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, আবহাওয়া ভালো ছিল, ফলনও ভালো হয়েছে। তিনি স্থানীয় জাত থেকে প্রতি বিঘায় ২০ মণ ফলন পেয়েছেন এবং হাইব্রিড জাতগুলো থেকে প্রতি বিঘায় ২৫ থেকে ৩৫ মণ ফলন পেয়েছেন।
কৃষকের জন্য দুঃসংবাদ: ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টির কারণে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের নিচু এলাকাগুলোতে ধানসহ বহু শস্য এখন পানির নিচে। কৃষক এই ফসল কিভাবে ঘরে তুলবে এই দুশ্চিন্তার মধ্যেই আবহাওয়া অধিদফতর নতুন করে উত্তরাঞ্চলে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিলো। পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে উত্তরাঞ্চলে মাঝারি ধরণের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্য এলাকাগুলোর কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, উত্তরাঞ্চলের দিকে ভারী বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। গরম কিছুটা বাড়লেও এই বৃষ্টির কারণে তা আবার কমে আসতে পারে। এছাড়া অন্য এলাকায়ও এই মৌসুমের স্বাভাবিক আবহাওয়া হিসেবে কোথাও কোথাও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এটি উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে যে বৃষ্টি হয়েছে তাতেই উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকার পাকা ধান এখন পানির নিচে। এর উপর আবার আজ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বিজলী চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের উত্তরাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরণের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার মাদাইডাঙ্গা বিল পানিতে টইটুম্বুর। হাজার হেক্টরেরও বেশি আয়তনের এই বিলে আবাদ করা হয়েছে বো?রো ধান। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা না থাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় হাজারও কৃষক। বিলের পানি নিষ্কাশনে স্থায়ী ও টেকসই ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
শুধু কুড়িগ্রাম নয়, ধান চাষ হয় এমন বেশিরভাগ এলাকায় একই অবস্থা। এই অবস্থার মধ্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবারও বৃষ্টি ফলে কৃষকের শঙ্কা বাড়বে কিনা জানতে চাইলে কৃষিবিদ ড. মিজানুর রহমান বলেন, এটি সত্যিই খুব আশংকার কথা। এমনিতেই ধান সব পানির নিচে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোর ধান। এই অবস্থায় আবার বৃষ্টি হলে কৃষকের ধান ঘরে উঠানোই কঠিন হয়ে পড়বে। অবশ্য আমাদের জন্য আরও আশংকা সামনে মে মাসের পর। তখন আবার পুরো বর্ষা মৌসুম চলে আসবে। সুতরাং ধান দ্রুত ঘরে তোলা দরকার। এদিকে নদী বন্দরগুলোর জন্য দেওয়া এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, ঢাকা, কুমিল্লা এবং সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি ও অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com