বাংলাদেশ থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) দেশে ফিরতে চান। মেডিকেল চেকআপ শেষে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) দপ্তর থেকে ফেরার পথে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। পি কে হালদারকে আজ মঙ্গলবার (১৭ মে) আদালতে পেশ করা হবে। তাই সোমবার (১৬ মে) ফের মেডিকেলে চেকআপ করতে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল তাকে। ফেরার পথে সাংবাদিকরা পি কে হালদারকে প্রশ্ন করেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চান কি না? এর উত্তরে প্রথমে চুপ থাকলেও লিফটে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, দেশে ফিরতে চান।
ইডি বা সিবিআই কোনো আসামিকে গ্রেফতার করলে আদালতে পেশ করার আগে একবার তার মেডিকেল চেকআপ করায়। এরই অংশ হিসেবে গত শনিবার গ্রেফতার ছয়জনকে মেডিকেল চেকআপ করানো হয়েছিল। এরপর আজ দ্বিতীয়বার আবার চেকআপ করানো হলো। এর আগে কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সের ইডি দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পি কে হালদারকে। প্রথমদিকে সহযোগিতা না করলেও পরবর্তীতে তিনি ইডি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করেন বলে জানা গেছে। পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের আলাদাভাবে জেরা করা হয়।
প্রায় ৪০টিরও বেশি প্রশ্নের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। সে অনুযায়ী পি কে হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমবার জিজ্ঞাসাবাদে পি কে হালদার খুব একটা সহযোগিতা না করলেও দ্বিতীয়বারের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ইডি কর্মকর্তাদের সামনে ভেঙে পড়েন। এসময় তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন। ইডির চার কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার সারাদিন ধরে ইডির কর্মকর্তারা পি কে হালদারসহ তার সহযোগীদের বিভিন্ন অফিসে হানা দেন এবং বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার করেন। বর্ধমানের কাটোয়া, উত্তর২৪ পরগনা ও দক্ষিণ২৪ পরগনাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পি কে হালদার, উত্তম মিত্র, প্রিতিশ হালদার ও প্রিতিশ হালদারের স্ত্রী ও জামাতা সঞ্জীব হালদারকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের সল্টলেকের সিজিও কম্প্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। মেডিকেল চেকআপের পর অনলাইনে ব্যাঙ্কশাল সিবিআইয়ের স্পেশাল কোর্টে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়। পরে আদালতের কাছে পি কে হালদারসহ পাঁচজনকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করে ইডি। আদালত পাঁচজনকে ইডির হেফাজতে দেয় ও এক নারীকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আগামী ১৭ মে ব্যাঙ্কশাল সিবিআই স্পেশাল কোর্টে তাদের আবার হাজির করা হবে। মনে করা হচ্ছে প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২১ থেকে ২২ ধারায় মামলা নথিভুক্ত করা হবে। বিশেষজ্ঞ মহল ধারণা করছেন, ইডি শুধু আর্থিক কেলেঙ্কারি তদন্ত করবে। বেআইনি পাসপোর্ট, ভিসা, আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ড তৈরি করার জন্য সিবিআইয়ের হাতেও তাদের তুলে দেওয়া হতে পারে।
পি কে হালদার আওয়ামী লীগের কেউ না: সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, একাধিক অর্থ পাচার মামলার আসামি পি কে হালদার আওয়ামী লীগের কেউ না। তাঁর মতো লোকের জায়গা আওয়ামী লীগে হবে না। গতকাল সোমবার দুপুরে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
পি কে হালদারসহ অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করার যে কথা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তার সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের। মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ফখরুল সাহেব, আপনি কালো চশমা পরে বক্তব্য রাখছেন। অর্থ পাচারের আসামি বিএনপি নেত্রী ও আপনাদের মা, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এই তালিকার শীর্ষে আছেন। আওয়ামী লীগের কেউ অর্থ পাচার করলে শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দেন না। এর জ্বলন্ত উদাহরণ ফরিদপুর।’ মির্জা ফখরুলকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘তথ্য–প্রমাণ ছাড়া কোনো কথা বলবেন না। খুব বাড়াবাড়ি করছেন আপনি। প্রধানমন্ত্রীর নামটি উচ্চারণের সময়ও সম্মান দেখান না আপনি।’