ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, যেভাবে ঢাকায় জায়গাগুলোকে দখল করা হয়েছে, চারদিকে শুধু বাজার আর বাজার। আমরা চাই, ঢাকা হবে পর্যটন নগরী। ঢাকা হবে ঐতিহ্য ও ইতিহাসের নগরী। এজন্য আমরা পথনকশা শুরু করেছি। গতকাল সোমবার (২৩ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর সদরঘাটে লালকুঠি ৪৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে ‘উঈঘটচ’ প্রকল্পের আওতাধীন প্রকল্প কার্যাবলী সংক্রান্ত প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তাপস বলেন, আমি অনেক ভেবেছি কিভাবে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ যায়। আমাদের মূল লক্ষ্য ঢাকাকে সংরক্ষণ করা, শুধু লালকুঠিকে সংরক্ষণ করা নয়। আমাদের প্রাণের ঢাকা, যে ঢাকাকে আমরা খুব ভালোবাসি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকাকে সংরক্ষণ করা সম্ভব। বিশ্ব ব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই ঢাকাকে সংরক্ষণ করতে এ প্রকল্পে সহযোগিতা করার জন্য। সচেতন নাগরিকসহ সবাইকে আহ্বান জানাবো ঢাকাকে সংরক্ষণ করতে আমাদের সহযোগিতা করার জন্য। মেয়র বলেন, নদীর পাড়ে ঢাকাকে অবস্থিত করা হয়েছিল। নদী হলো আমাদের মূল সম্মুখ। এই সম্মুখকে যদি আমরা জীবিত না রাখতে পারি, পরিশীলিত না করতে পারি তাহলে ভেতরে কেউ ঢাকাকে খুঁজে পাবে না। ভেতরে শুধু থাকবে ইট-বালু আর সিমেন্টের কিছু কিছু দালান আর ভবন।
ঢাকাকে যদি উপভোগ করতে হয় তাহলে নদীকে উপভোগ করতে হবে। ঢাকাকে যদি উপভোগ করতে হয় তাহলে লালকুঠি, রূপলাল হাউস, আহসান মঞ্জিলসহ ছোট কাটরা, বড় কাটরা, লালবাগের কেল্লা একে উপভোগ করতে হবে যেটা আমাদের পরিচিতি দেবে ঢাকার। তিনি বলেন, আমরা বহির্বিশ্বে গিয়ে কিন্তু আমরা পুরোনো শহরটাকে উপভোগ করতে যায়। নতুন শহরকে উপভোগ করতে যায় না। তাই আমাদেরও ঢাকাকে সংরক্ষণ করতে হবে। অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মারসি টেমবন বলেন, সবার পর্যবেক্ষণগুলো শুনছিলাম এটা খুবই ভালো লাগছিল। পরিদর্শন করে যখন দেখছিলাম তখন সবাই যে বিষয়টি বলছিল তা হলো জনসম্পৃক্ততা জরুরি। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর সংরক্ষণে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। আমরা এই উদ্যোগের পাশে থেকে এটাই বলতে চাই, উদ্যোগগুলোর যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়।
ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, গত ৫০ বছরে যেসব মেয়র দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের সবাই ঢাকা নগরীর ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় কিছুটা উদাসীনতা দেখিয়েছেন। আমরা এখন একজন মেয়র পেয়েছি যার কাছে ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব পেয়েছে। পুরান ঢাকার মানুষের অধিকার আছে ধানম-ি গুলশান এলাকার মানুষের মতো বসবাস করার। বিশ্ব ঐতিহ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে সেই পরিবেশ পাবে বলে আশা করি।
আইএবি’র সভাপতি প্রকৌশলী মোবাশ্বের হোসেন বলেন, গণশুনানির মাধ্যমে কাজ করলে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। বর্তমান মেয়রের সেভাবেই পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে উদ্যোগ নিয়েছেন এটা খুবই প্রশংসনীয়। উন্মুক্ত জলাশয় ও খেলার মাঠ সংরক্ষণ আইন হয়েছে। পুরান ঢাকার মানুষ অনেক পুরোনো বিল্ডিং রাতের বেলায় না ভেঙ্গেই সেটিকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য দৌড়াদৌড়ি করবে এমনটাই চাই আমরা। রাজউক’র সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সবধরনের সহযোগিতা করেছেন। মেয়রকে বলবো, কাজ যখন শুরু হবে তা একদিন শেষ হবেই। আমরা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে নগরীর জন্য ভালো কিছু কাজ করে যেতে পারলেই অন্তত গর্ব অনুভব করতে পারবো। সেজন্য আপনাদের পাশে সবসময় থাকবো আমরা। এর আগে প্রকল্পের বিভিন্ন চিত্রপ্রদর্শনী ঘুরে দেখেন অতিথিরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন আইইবি, আইএবি ও বিআইপি’র সভাপতিসহ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা।