স্বামীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে নির্যাতিত ও প্রতারিত এক স্ত্রী। অভিযোগ তুলেছেন তার স্বামী জামালপুর শহরের ফুলবাড়িয়া মুন্সিপাড়া এলাকার সিব্বির আহম্মেদ রাসেল সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু, জ্বাল দলিল সৃষ্টিকারী, টিকিট কালোবাজারী, চোরাই মালামাল ক্রয়-বিক্রয়কারীসহ বিভিন্ন দুর্নীতির সাথে জড়িত। স্থানীয় থানা পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি এসব অপকর্ম করে বলেও অভিযোগ করেছে ওই নারী। বুধবার দুপুরে জামালপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন সিব্বির হোসেন রাসেলের স্ত্রী তানজিনা আফরিন নামে ওই নারী। এর আগে ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সিব্বির আহম্মেদ রাসেলের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।সংবাদ সম্মেলনে জামালপুর শহরের ফুলবাড়িয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের শাহ ওয়ালিউল্লাহ’র কন্যা তানজিনা আফরিন অভিযোগ করেন, প্রথম স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে তারা ভালোভাবে জীবন যাপন করছিলেন। তার স্বামী চাকরীর পাশাপাশি ‘লোটাস গার্মেন্টস’ নামীয় ব্যবসা করেন এবং তানজিনাও নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স লোটাস বিউটি পার্লার পরিচালনা করছিলেন। কিন্তু একই এলাকার সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু, জ্বাল দলিল সৃষ্টিকারী, টিকিট কালোবাজারী, চোরাই মালামাল ক্রয়-বিক্রয়কারী মোঃ সিব্বির আহম্মেদ রাসেল তানজিনার স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাকীতে মাল নেন। বাকীর টাকা চাওয়ায় তানজিনার স্বামী ও তানজিনার সাথে খারাপ আচরণ করে। এই ঘটনার কয়েক মাস পর রাসেল তানজিনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চায়। এরপর থেকে তিনি সামনাসামনি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তানজিনার সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি তানজিনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ পাইয়ে দেবার কথা বলেন এবং ঋণের কথা বলে তানজিনার কাছে উত্তরা ব্যাংকের চেকের সাদা চারটি পাতা নেন। চেকের পাতা নেবার পর ঋণের ব্যবস্থা না করে তিনি বিভিন্ন ভাবে তানজিনাকে হয়রানী করতে শুরু করেন। ঋণ হবে না জানিয়ে চেকের পাতা ফেরত নিতে তাকে বিভিন্ন স্থানে দেখা করতে বলেন। তানজিনা নিরুপায় হয়ে রাসেলের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি বিভিন্ন ভাবে তাকে কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। কুপ্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় তানজিনার নামে অন্য দুইজনকে দিয়ে দুইটি চেকের মামলা করায়। চেকের পাতা ফেরত দেবার কথা বলে তানজিনার সাথে বিভিন্ন স্থানে দেখা করার পর তার স্বামীকে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন রাসেল। এতে তানজিনার স্বামীর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। রাসেল ভূয়া কাবিননামা পাঠায় তানজিনার স্বামীর কাছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভূয়া ছবি প্রচার করে। এসব ঘটনায় তানজিনার সাথে স্বামীর সম্পর্কের চরম অবনতি এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্থ হবার সুযোগে রাসেল সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দেয়। চেকের পাতা ফেরত ও সমস্যা সমাধানের কথা বলে ২০২০ সালের এপ্রিলে তানজিনাকে জামালপুর শহরের তিরুথা বটতলা একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক তানজিনার স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করে। এরপর দুই সন্তান নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকি। ২০২১ সালের জুলাই মাসে তানজিনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ এলাকায় নিয়ে ১৫ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে করে রাসেল। বিয়ের পর থেকেই শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে এবং তানজিনার কাছে টাকা দাবি করতে থাকে। বাধ্য হয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে পুরো টাকা রাসেলের হাতে তুলে দেয়। আরো টাকার জন্য নির্যাতন করতে থাকলে বাধ্য হয়ে তানজিনার তার মা-বাবা এবং আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার করে দিতে বাধ্য হয়। সবকিছু শেষ করার পর যখন আর কিছু দেবার ক্ষমতা নেই তখন নতুন করে আরো ১৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে রাসেল। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সেই সময় বাধ্য হয়ে আদালতে যৌতুক মামলা দায়ের করে তানজিনা।
মামলা দায়ের করার পর তানজিনাকে তালাক দেয় রাসেল ও তানজিনার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। তানজিনা জানায়, বিয়ের পর জানতে পারেন রাসেলের ৯ নম্বর স্ত্রী সে। তানজিনার অভিযোগ, সিব্বির আহাম্মেদ রাসেলের বিরুদ্ধে পাহার সমান অভিযোগ থাকলেও পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়না। সদর থানার কতিপয় পুলিশের সাথে তার রয়েছে গভীর সখ্যতা। সংবাদ সম্মেলনে তানজিনার খালু শাহজাহান অভিযোগ করেন, সিব্বির আহমেদ রাসেলের নানা অপকর্মের প্র্রতিবাদ করায় তাকেও শারিরিক নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। বর্তমানে রাসেলের হুমকীতে তানজিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছে। অভিযোগ রয়েছে, ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সিব্বির আহম্মেদ রাসেলের নানা অপকর্মের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।সিব্বির আহমেদ রাসেলের কবল থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন নির্যাতিত নারী তানজিনা আফরিন। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে কথা বললে, সিব্বির আহম্মেদ রাসেল জানান, তানজিনার অভিযোগ সঠিক না। তানজিনাকে তিনি তালাক দিয়েছেন।