লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বুড়িমারী স্থলবন্দরের নির্ধারিত এলাকা অতিক্রম করে ভারত ও ভুটানের পণ্যবাহী ট্রাক দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। এসব পণ্যবাহী ট্রাকের বেশির ভাগই কাস্টম কতৃক নির্ধারিত তিন কিলোমিটার সীমানা অতিক্রম করে প্রায় ৫ কিলোমিটার এমনকি কোন সময় তারও বেশী অতিক্রম করে ভারত এবং ভুটানের পণ্য খালাস করছে। এতে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি, চোরাচালান, তেল পাচার, সীমান্ত এলাকায় দেহব্যবসা ও এইডস্সহ বিভিন্ন রোগের আশংকা দেখা দিয়েছে। বুড়িমারী বন্দর ব্যবসায়ী সুত্র জানায় কাস্টমস্ ঘোষিত এলাকা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সেই কারনে সীমানা পূর্ণনির্ধারণ করে আমদানীকৃত পণ্যবাহী ট্রাকের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। বর্তমানে যেভাবে খেয়াল খুশি মত নির্ধারিত কাস্টমস্ সীমানা (বন্ডেড এরিয়া) অতিক্রম করে বিদেশী ট্রাক অবাধে যাতায়াত এবং পণ্য খালাস করছে তা কাস্টমস আইনের পরিপন্থি। বুড়িমারী কাস্টম ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়াডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সায়েদুজ্জামান সা?দ বলেন কাস্টমস এর নির্ধারিত এলাকা তিন কিলোমিটার কিন্ত বর্তমানে এই সীমানা অতিক্রম করে বিদেশী ট্রাক প্রায় ছয় সাত কিলোমিটার পর্যন্ত ভেতরে ঢুকে পণ্য খালাস করছে। এটা অঘোষিত এবং অবৈধ ভাবে করা হচ্ছে। এটি কাস্টমস রুলস এর সম্পূর্ণ পরিপন্থি। বন্দর সুত্র জানায় বিদেশী ট্রাক নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করে অবাধে যাতায়াত করলেও বন্দরে দায়িত্বরত বিজিবি কাস্টমস্ ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নজরদারী নেই। ফলে অবাধে যাতায়াতের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এতে সড়কে ঘটছে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি। বুড়িমারী স্থলবন্দর জিরো পয়েন্ট থেকে ইসলামপুর ও বুড়িমারী মৌজার আবাসিক কিছু বসতবাড়ি ছাড়া সবদিকের এলাকা গুলোতে ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক এবং ঢাকা লালমনিরহাট বুড়িমারী আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত পণ্যবাহী ৩ থেকে ৪ শ ভারতীয় ও ভুটানি ট্রাক প্রায় প্রতিদিন অবাধে প্রবেশ করে। জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে ভুটানের উপর ভিত্তি (বেইজ) করে বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনটির যাত্রা শুরু হয়।
পরবর্তীতে সরকারের এসআরও নং-১১-আইন/২০০২ অনুযায়ী ১২ জানুয়ারি ২০০২ সালে বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনটিকে শুল্কবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০১০ সালের ৩০ মার্চ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন কার্যক্রম চালু করা হয়। বন্দরটির অপর পার্শ্বে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থানার অন্তর্গত চ্যাংরাবান্ধা কাস্টমস। বুড়িমারী বন্দর থেকে চ্যাংরাবান্ধা কাস্টমস এর দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। আর ভুটানের ফুন্টসলিং বাণিজ্যিক বন্দরের দূরত্ব প্রায় ১০৫ কিলোমিটার।
গত ২০১০ সালের ২২ ফের্রুয়ারী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জারি করা প্রজ্ঞাপন (গেজেট) নং-২৭৬/২০১০/শুল্ক অনুযায়ী বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের সীমানা নির্ধারণ করা হয়। এতে আমদানি-রপ্তানি পণ্য উঠানো ও নামানোর স্থান বুড়িমারী মৌজার বাংলাদেশ-ভারত সংযোগ সড়কের শূণ্য রেখার ৫০০ মিটার অভ্যন্তর হতে পাটগ্রাম উপজেলা অভিমুখী ওই সড়কের ইসলামপুর মৌজার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত উভয় দিকে ৫০০ মিটার বিস্তৃত এলাকা পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণ করা হয়। কিন্ত ওই সীমানা অতিক্রম করে ভারত ও ভুটান থেকে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক অবাধে চলাচল এবং পণ্য উঠানো ও নামানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ২০২০ সালের ১৬ ফেব্র্রুয়ারী সমনথির পত্র নং-১৮ অনুযায়ী সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের সর্তক করা হলেও কেউ সীমানা অতিক্রম করার বিধি নিষেধ মানছেন না। কাস্টমের একটি সূত্র জানায় নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়ে বিদেশী ট্রাক থেকে মালামাল লোড আনলোড করা কাস্টমস্ এ্যাক্ট ১৯৬৯ এর ৯ ও ১০ ধারার সুস্পষ্ট লংঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এতে অর্থদন্ড পণ্য ও যানবাহন বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা রয়েছে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের। বুড়িমারী স্থলবন্দরের মেসার্স গোল্ডেন এন্টার প্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মনোয়ার হোসেন বলেন এক যুগ আগে কাস্টমের নির্ধারিত সীমানা বর্তমান সময়ে অত্যন্ত কম। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পণ্য রাখার শেডও কম। বেনাপোল স্থলবন্দরের পরই বুড়িমারী স্থলবন্দরের অবস্থান। ব্যবসা নির্বিগ্ন করতে কাস্টমের নির্ধারিত সীমানা বৃদ্ধি করা জরুরী বলে তিনি দাবী করেন। বাংলাদেশি ট্রাক চালক লিমন বাবু বলেন ভারতের চ্যারাবান্ধা কাস্টমস্ সেদেশের নির্ধারিত সীমানা (প্রায় ২ কিলোমিটার) থেকে বেশি যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানকার (বুড়িমারীর) মত চালকদের গাড়ি নিয়ে চলাচল করার স্বাধীনতা ওখানে (চ্যাংরাবান্ধায়) নেই। দিনে রাতে তাঁদের নিরাপত্তা বাহিনী নির্ধারিত সীমানায় সর্তক থাকে। এ ব্যাপারে বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার জে এম আলী আহসান বলেন কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সজাগ রয়েছে। ব্যবসায়ীদেরকে সর্তক করা হচ্ছে। কাস্টমস্ এলাকা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।