চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার ৬১ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে কিন্তু তারপরও হ কয়েকটি কনটেইনারে এখনো থেমে থেমে আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা কনটেইনারগুলোর ওপর পানি ছিটিয়ে চলেছেন। ফায়ার সার্ভিস বলছে, নিখোঁজদের বিষয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের পর অভিযান চলবে। তবে সেখানে রাশ পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে করতে বেশ কয়েকজন দমকলকর্মী ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ডিউটি ভাগ করে দেয়ার পরও আগুনের তীব্রতা থাকায় ক্লান্ত তারা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সরেজমিনে দেখা যায়, এখনো ২৮টি কনটেইনারের মধ্যে তাঁরা অনবরত পানি ছিটিয়ে চলেছেন। ২৮টি কনটেইনারের ভেতরে থেমে থেমে আগুন জ্বলছে। উত্তপ্ত হয়ে আছে কনটেইনারগুলো। এর মধ্যে রাসায়নিক ভর্তি কনটেইনারও আছে। তবে সেগুলো এখনো চিহ্নিত করা যায়নি। জ্বলতে থাকা যেসব কনটেইনারে রপ্তানি পোশাক পণ্য আছে বলে তারা মনে করছেন, সেগুলোর দরজা খুলে ভেতরে থাকা পণ্যের আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু এখনো ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি রাসায়নিক ভর্তি কনটেইনার শনাক্ত করতে না পারার কারণে তাঁদের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। গত শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো লোডিং স্টেশন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এর দেড় ঘণ্টা পর একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক বিস্ফোরিত হয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৯ সদস্যসহ মোট ৪১ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন আড়াই শতাধিক মানুষ।
আরো ২ লাশের সন্ধান: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনারে ডিপোর ধ্বংসস্তূপ থেকে আরো দুটি লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এ তথ্য নিশ্চিত করলেও সরকারিভাবে নতুন করে লাশ উদ্ধারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো দেয়া হয়নি। এদের একজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর লাশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, ভেতরে দুটি পুড়ে যাওয়া দেহাবশেষ পেয়েছেন তারা। তবে অতিমাত্রায় পুড়ে যাওয়ার কারণে ভালো বোঝা যাচ্ছে না। লাশগুলো উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা হবে। এর আগে গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। আগুন লাগার পর রাসায়নিকের কনটেইনারে একের পর এক বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটতে থাকলে বহু দূর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। এখন পর্যন্ত ৪১ জন নিহত হবার খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রয়েছে। মঙ্গলবার পাওয়া লাশগুলোর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একজন থাকলে আরো দুইজন সদস্য এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
চলছে ডিএনএ সংগ্রহ: আগুন ও বিস্ফোরণে নিহত স্বজনদের শনাক্ত করতে দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল মঙ্গলবার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সিআইডির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ টিম চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের বুথে ডিএনএ নমুনা নিচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সকাল ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত একজনের পরিবার নমুনা দিতে এসেছে। গত সোমবার ২১ লাশের বিপরীতে ৩৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে সোমবার ২৬ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখনো শনাক্ত করা যায়নি ১৫টি লাশ। লাশগুলো মেডিক্যালের মর্গে রাখা হয়েছে।