শিশু, বৃদ্ধ ও গৃহপালিত পশু নিয়ে এখন বন্যার্তরা ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। কারণ এখন সময় যত যাচ্ছে পানি ততই বাড়ছে। ফুলে ফেঁপে উঠছে স্থানীয় নদী ও হাওর। এরই সাথে বাড়ছে দুশ্চিন্তা ও দূর্ভোগ। তাদের বসত গৃহে থাকার সকল চেষ্ঠাই এখন ব্যর্থ হচ্ছে। গেল কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এখন চরম অবনতির দিকে। সোমবার রাত থেকে নতুন করে অনেক এলাকায় বন্যা কবলিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। হাকালুকি ও কাউয়াদিঘি হাওরসহ মনু, ধলাই ও কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। রাতে বৃষ্টি হওয়াতে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওর ও মনু নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়ছে তীরবর্তী বাসিন্দাদের। গত রবিবার রাত পর্যন্ত বসতবাড়ি ও ঘরে কোমর ও হাটু পানি থাকলেও রাতে বৃষ্টি হওয়াতে ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কয়েক ইঞ্চি পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সকাল হতে ঘর বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন বানভাসিরা। হাকালুকি হাওরের তীরবর্তী ভূকশিমইল ইউনিয়নের সাদীপুর,মীরশংক,গৌরিশংকর,কালেশারসহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক বাসিন্দারা জানান সকাল থেকে পানি বাড়ার কারণে তারা অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন।
পানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়াতে সদ্য পাওয়া বোরো ধান,গৃহপালিত গবাদি পশু, শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে আর বসত বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না। তাই তারা আত্মীয় স্বজনের বাসাবাড়ি বা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ছুটছেন। অনেক স্থানে প্রধান সড়কে গরু ছাগলসহ গবাদি পশু রেখেছেন। বসত বাড়ি ও বসবাসের ঘরে কোমর পানি থাকায় রান্নাবান্না করতে না পারায় ও পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহে না থাকায় চরম খাবার সংকটে ভুগছেন। আবার আশ্রয় কেন্দ্র থাকা অনেকেই উপোষ থাকছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও স্যানিটেশনেরও সমস্যা প্রকট। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। কুলাউড়া থেকে বড়লেখাগামী প্রধান সড়কের অনেক জায়গায় পানি উঠে ডুবে যাওয়ায় চলাচলে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, বন্যার কারণে এপর্যন্ত জেলার ৭টি উপজেলার ১১৬ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও মাদ্রাসা বন্ধ রয়েছে ৪৫টি। সবমিলিয়ে ১৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যা কবলিত হয়েছে জেলার ৫ শতাধিক গ্রাম ও ৪ লক্ষাধিক মানুষ। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান মানবজমিনকে জানান, ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকায় ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে ১৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার্তদের জন্য জেলায় ২০ লক্ষ বরাদ্দকৃত টাকা বিতরণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। ২১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় ২ হাজার প্যাকেট শুকনো পাঠানো হয়েছে। ৭টি উপজেলায় বন্যার্তদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক খোঁজ খবর নিতে ও সহযোগিতা দিতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য আরও বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে।