ভারতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন এবং মন্দির ও পূজা মণ্ডপ হামলা-ভাঙচুর নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা হয় বলে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময় গত ২০ জুন তাদের মধ্যে আলোচনা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব বিষয় তুলে ধরেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই বিষয়টি অবতারণা করেন এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি যে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এ বছর প্রায় ৩৩ হাজার পূজা মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে এবং এর মধ্যে একটি বা দু’টিতে সমস্যা হতে পারে। এছাড়া ছোট একটি দেশের মধ্যে এত লোক বাস করে এবং সে কারণে অনেক সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এর সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই।’ বাংলাদেশে যেন কাউকে সংখ্যালঘু হিসাবে বিবেচনা করা হয় না জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এ বিষয়ে অনেকে মিথ্যা প্রচারণা করে এবং বিষয়টি নিয়ে যেন কারও ভুল ধারণা না থাকে।’ এর জবাবে অজিত দোভাল কী বলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি বিষয়টিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পূজা ম-প তৈরি এবং এর সংখ্যার বিষয়গুলো আরও বেশি করে প্রচারের কথা বলেন।’
উত্তর-পূর্ব ভারতে নিরাপত্তা: বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্সের’ কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। এ বিষয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রীসহ অনেকে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আমাদের অবস্থান এবং বাংলাদেশের ভূমি কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার না করার নীতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারও আমাদের অনেক প্রশংসা করেছে।’
বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা:রোহিঙ্গা, কোভিড ও বৈশ্বিক জটিলতার মধ্যে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার বিষয়টিও বৈঠকে আলোচিত হয়। কর্মকর্তা বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক অনেক জটিল সমস্যার মধ্যেও বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়নি। এ বিষয়টি উল্লেখ করে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।’
প্রতিরক্ষা ঋণ: ২০১৭ সালে ভারত থেকে প্রতিরক্ষা-সরঞ্জাম ক্রয় করার জন্য ৫০ কোটি ডলারের একটি লাইন অব ক্রেডিট চুক্তি সই হয় দুই দেশের মধ্যে। এখন পর্যন্ত ওই ঋণের সুষ্ঠু ব্যবহার করা হয়নি।
ওই কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ‘ঋণটি ব্যবহারের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ আলোচনা করবে।’ এছাড়া, স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের সংলাপ, প্রতিরক্ষা সংলাপ এবং কনস্যুলার সংলাপ দ্রুত করার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিল্লি যান। দিল্লি সফরে তিনি ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, জ্বালানিমন্ত্রীসহ অনেকের সঙ্গে দেখা করেছেন।